logo
৩রা জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • সিলেট বিভাগ
    • সিলেট
    • সুনামগঞ্জ
    • হবিগঞ্জ
    • মৌলভীবাজার
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • ক্রীড়া
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • ডাক বিনোদন
  • প্রবাস
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • অন্যান্য
  • উপসম্পাদকীয়
  • সম্পাদকীয়
  • অন্যান্য
    • শিক্ষা
    • সাহিত্য
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • স্বাস্থ্য
    • শিশু মেলা
    • ইতিহাস- ঐতিহ্য
    • সাজসজ্জা
    • লাইফস্টাইল
    • মহিলা সমাজ
    • পাঁচ মিশালী
    • আমাদের পরিবার
  • ই-পেপার
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • প্রথম পাতা
  • শেষ পাতা
  • সিলেট
  • মৌলভীবাজার
  • সুনামগঞ্জ
  • হবিগঞ্জ
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • উপসম্পাদকীয়
  • ফিচার
  • অন্যান্য দেশ
  • যুক্তরাজ্য
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • অর্থনীতি
  • করোনা
  • ক্রীড়া
  • অন্যান্য খেলা
  • ক্রিকেট
  • ফুটবল
  • স্থানীয় ক্রিকেট
  • ডাক বিনোদন
  • ধর্ম
  • অন্যান্য
  • ইসলাম
  • পাঁচ মিশালী
  • প্রবাস
  • বিজ্ঞপ্তি
  • মহিলা সমাজ
  • মাল্টিমিডিয়া
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • লাইফস্টাইল
  • ইতিহাস- ঐতিহ্য
  • শিশু মেলা
  • সাজসজ্জা
  • শিক্ষা
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য
  • শিল্প
  • স্বাস্থ্য
  • বিশেষ সংখ্যা
  • Terms and Conditions
  • Privacy Policy
  • Contact
শিরোনাম
  • হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
  • রথযাত্রা উৎসব শুরু
  • নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর খরচের টাকা উঠে আসবে: প্রধানমন্ত্রী
  • সিলেট-চারখাই-শেওলা সড়কের ৪৩ কিলোমিটার উন্নীত হবে চার লেনে
  • স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন আর নেই
  1. হোম
  2. সাহিত্য

নবাবের অভিলাষ


সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২২, ৫:১৬:২৪ অপরাহ্ন
নবাবের অভিলাষ

রফিকুর রশীদ
আমাদের নবাব চাচা যে একেবারে শেষ বেলায়, নাটক মঞ্চায়নের শেষ প্রান্তে এসে এ রকম নাটকীয় একটা ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পারে, সে কথা আমরা আগে কেউ ভাবতেই পারিনি। নিয়মিত রিহার্সালে এলে হয়তো তার আচার-আচরণের মধ্যে কোনোরকম অসংগতি কারও না কারও নজরে পড়ত, সময় থাকতে সাবধান হওয়া যেত অথবা বিকল্প একটা কিছু ভাবা যেত। কিন্তু না, সে সুযোগও আমরা পাইনি। আগে নবাব চাচার অভিনয় আমরা দেখিনি বললেই চলে। তবে তার নাট্যপ্রতিভার বিস্তর প্রশংসা শুনেছি এলাকার বহু মানুষের কাছে। সিনেমার পন্দায় আনোয়ার হোসেনের অভিনয় যারা দেখার সুযোগ পেয়েছে, তাদের মধ্যেও অনেকেই অকুণ্ঠভাবে ঘোষণা করে-
সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অভিনয়ের প্রশ্নে আমাদের নবাব হচ্ছে আনোয়ার হোসেনের কার্বনকপি। সেই অগ্নিগোলক দুই চোখ, প্রশস্ত ললাট, সেই ব্যাকব্রাশ চুল, মিলিয়ে নিতে চাইলে একে একে সবকিছুতেই মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। মঞ্চে নবাব চাচার অভিনয় যারা দেখেছে তাদের চোখে নবাব সিরাজউদ্দৌলা, আনোয়ার হোসেন এবং এই পলাশপাড়া হাইস্কুলের নৈশপ্রহরী নবাব আলী মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। আমরা এ প্রজন্মের তরুণরা প্রায় বার্ধক্যে উপনীত নবাব চাচার মধ্যে এত সব সাদৃশ্য যথাযথভাবে দেখতে পাইনি বলে সিনিয়রদের কাছে তিরস্কৃত হয়েছি-

দেখার জন্য দৃষ্টি লাগে, তোরা কোথায় পাবি এসব নবাব হচ্ছে জিনিয়াস।
তা আমরা কেমন করে জানব নবাব চাচার নাট্যপ্রতিভার খবর আমাদের এই পলাশপাড়ায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সবই হয়েছে, লেখাপড়া জানা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বড় হুজুরের নামে তিন দিনব্যাপী ওরস মোবারকের আয়োজন হয়, তাই বলে ফি-বছর নাটক-যাত্রা মঞ্চায়ন তো হতে দেখিনি। অথচ গল্প শোনা যায়- এ গ্রামের জমিদারবাড়িতে নাকি নাটমন্দির ছিল, যাত্রা-নাটকের সঙ্গে শাস্ত্রীয় নৃত্যেরও জলসা হতো, নদীতে বজরা ভাসিয়ে লক্ষেèৗ থেকে বাইজিও আনা হতো। এসব সেই কবেকার কথা জমিদারবাড়ির ভগ্নাবশেষ এখনও দাঁড়িয়ে আছে বটে, কিন্তু কোথায় নাটমন্দির স্বাধীনতার পর হেডমাস্টার ইন্দুভূষণ বাবুর নেতৃত্বে এবং আগ্রহে পলাশপাড়া নব নাট্য সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান বেশ কবছর চলেছিল মহাসমারোহে। নবাব আলী সেই নাট্যচর্চারই সুবর্ণ ফসল। লোকে বলে- ইন্দুবাবুর হাতে গড়া পুতুল।

ইন্দুবাবুর সাক্ষাৎশিষ্য নবাব আলীকে আমাদের নাটকের রিহার্সালে নিয়মিত আসার কথাটা কে বলবে? সে থাকে আপন জগতে। বাড়িতে একটা দুধেল গাই আছে। সেই গাইয়ের গলার দড়ি ধরে স্কুল-কম্পাউন্ডের চতুন্দিকে সারা বিকেল চরানোর পর একেবারে সন্ধ্যার মুখে তাকে খোঁয়াড়ে তুলে রেখে সে স্কুলে চলে আসে নাইট ডিউটিতে। ইন্দুবাবুর হেডমাস্টারি জীবনের শেষ প্রান্তেু এসে নবাব আলীকে এই নাইটগার্ডের চাকরি দিয়ে যান। নাটক-যাত্রার নেশায় পড়ে ততদিনে পৈতৃক সামান্য জমি-জিরেত হারিয়ে তার পথে বসার দশা। গলার রগ কাঁপিয়ে যাত্রার ডায়ালগ টানটান করে উচ্চারণ করা ছাড়া সংসার-রাজ্যের আর কোনো কাজই ঠিকমতো শেখা হয়নি তার। কী করবে সে কোলের বাচ্চাসহ বউটাকে হেডমাস্টারের বাড়িতে গছিয়ে দিয়ে মাঝেমধ্যে পলাশপাড়া ছেড়ে উধাও হয়ে যায়। ফিরে আসে তিন-চার মাস পরে। কোথায় যায়, কী করে- কারও কাছে এসব নিয়ে মুখ খোলে না। ইন্দুবাবু বহু তত্ত¦তালাশ করে আবিস্কার করেন, নবাব আলী সুদূর ফরিদপুরের এক যাত্রাদলে চাকরি নিয়েছে। অভিনয় করার চাকরি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছাড়াও টিপু সুলতান, সাজাহান প্রভৃতি ঐতিহাসিক পালায় সে অভিনয় করে। এটাই তার চাকরি কিন্তু এ চাকরির মেয়াদ ওই মাস তিনেকের বেশি নয়। বছরের বাকি সময় সে কী করবে সংসার চলবে কেমন করে হেড স্যারের চোখের সামনে সে ফ্যা ফ্যা করে ঘোরে, বাড়ির ভেতরে ঢুকে দরাজ কণ্ঠে মা ডেকে গিন্নিমাকে পটায়, সেই সঙ্গে টুকিটাকি ফাইফরমাশ খাটে। এসব কাণ্ডকীর্তি দেখে বউটা তখন অভিমান করে বাপের বাড়ি চলে যায়। নবাব আলী নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে হাসে আর বলে-

ক্যানে, ইডা কি তুমার বাপের বাড়ি না? মায়ের বাড়ি না? এ্যাতো দ্যামাগ কিসির, এ্যাঁ?
সবকিছু দেখে শুনে হেডমাস্টার ইন্দুভূষণ নবাব আলীকে তার স্কুলের নাইটগার্ডের চাকরি দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বাপের কাজটাই করেন। সেই থেকে সে পায়ের তলে মাটি খুঁজে পায়, নিজের পায়ে থিতু হয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। নবাব আলী তার প্রকৃত নাম নয়, এ কথা গ্রামের সবাই এক প্রকার ভুলেই গেছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অভিনয় কুশলতার স্বীকৃতি হিসেবে পিতৃপ্রদত্ত নাম ছাপিয়ে নবাব পরিচয়টা ততদিনে বেশ দাঁড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আছে নবাবি স্বভাব। হেড স্যারও চাকরি দেওয়ার সময় তার স্বোপার্জিত এই পরিচয়কেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করেন। কাগজে-কলমে নিন্দিষ্ট হয়ে যায় নবাব আলীর নাম স্কুলের খাতায়, ভোটার লিস্টে সর্বত্রই নবাব আলী।
বহুদিন পর নতুন করে নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাবে নবাব আলী প্রথমে চমকে ওঠে। চোখ গোল গোল করে তাকায় সবার মুখে মুখে। চিনতে চেষ্টা করে-
এরা কারা? এরা কি এই জনপদেরই সন্তান এদের মাথায় কে ঢোকাল নাটকের পোকা?
ছেলেরা কোনো রাখঢাক না করে সোজাসুজি জানায়-
কলেজপড়ুয়া কয়েকজন বন্ধু মিলে এবারের স্বাধীনতা দিবসে নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারপর ক্লাসে নাটক পড়ান যে আতাহার স্যার, তার কাছে গিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা বলতেই তিনি আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন এবং ছেলেদের ঠেলে পাঠান নবাব আলীর কাছে। তারা দাবি জানায়-
আমাদের নাটকে নবাবের রোলটা আপনাকেই করতে হবে চাচা।
নবাব আলীর চোখেমুখে বিস্ময় ঠিকরে ওঠে-
তার মানে তোমরা বই নামাবা নবাব সিরাজউদ্দৌলা?
দুতিনজন একসঙ্গে বলে ওঠে-
হ্যাঁ চাচা, সেই জন্যই তো আপনাকে…
না না, আমার বয়স হয়েছে বাবা। আর কতদিন নবাব চরিত্রে অভিনয় করব?
আতাহার স্যার যে আপনার কথা বললেন আপনাকে আমরা…
শেষে ছেলেদের দাবি মানতেই হয়। নবাব আলীর বুকের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে, সম্মতি জানায়। এভাবেই দীর্ঘদিনের ব্যবধানে আবারও তার নাটকে জড়িয়ে পড়া। কিন্তু রিহার্সালে অংশগ্রহণ নিয়ে দেখা দেয় সংকট। রিহার্সাল হবে কলেজের কমনরুমে, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর। নাইটগার্ড নবাব আলী তখন স্কুল ফেলে যাবে কেমন করে তার ডিউটিও শুরু সন্ধ্যা থেকেই। তাহলে উপায় আতাহার স্যার এ সংকটের কথা শুনে হা হা করে উচ্চ স্বরে হেসে উড়িয়ে দেন। আঙুলের ডগায় তুড়ি বাজিয়ে আমাদের ধমকে ওঠেন-
তোমরা চেনো নবাব আলীকে? কতটুকু জানো?
আমাদের মুখে কথা নেই। স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি ফ্যালফ্যাল করে। হাসির লাগাম টেনে স্যার আমাদের অবাক করা তথ্য জানান- গোটা সিরাজউদ্দৌলা বইটা নাকি নবাব আলীর মুখস্থ। সিরাজ, মীরজাফর, রায় দুর্লভ, উমিচাঁদ, মোহনলাল, মীর মদন, ঘসেটি বেগম, লুৎফা, লর্ড ক্লাইভ- সবার সংলাপ সে একাই গড়গড় করে বলে যেতে পারে। নতুন করে কি আর রিহার্সালের দরকার আছে তার আমরা সবাই একযোগে ঘাড় মাথা দোলাই-
তা ঠিক, তা ঠিক।
কী ভেবে স্যার নিজে থেকেই ঘোষণা দেন-
হ্যাঁ, তাকে আমরা ধরে আনব স্টেজ-রিহার্সালের দিন। হুঁ হুঁ তখন দেখো সিরাজউদ্দৌলা কাকে বলে!
দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে নবাব আলীর রিহার্সাল না লাগলেও অন্যান্য চরিত্রের অভিনয় গড়েপিটে তোলার জন্য রিহার্সালের সময় সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে একজনের প্রক্সি দেওয়া খুব জরুরি প্রয়োজন হয়ে ওঠে। সেখানেও এগিয়ে আসেন আতাহার স্যার, প্রতিটি রিহার্সালে নির্বিকার চিত্তে নবাবের চরিত্রে প্রক্সি দিয়ে যান, প্রতিটি চরিত্রের ডায়ালগ থ্রোয়িং, ক্যাচিং, মঞ্চে কার কোথায় অবস্থান- সবকিছু ধীরে ধীরে দরদ দিয়ে শিখিয়ে দেন। এই পলাশপাড়ায় কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দশ-বারো বছর ধরে ক্লাসরুমের মধ্যে নাটক পড়িয়ে এসেছেন সিলেবাস শেষ করার তাগিদে, কিন্তু আতাহার স্যার নিজে থেকে কলেজে কিংবা কলেজের বাইরে নাটক মঞ্চায়নের কোনো উদ্যোগ কখনও নেননি। আমাদের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হবার পর সেই মানুষটাই যেন আমূল বদলে গেলেন। দিন যত ঘনিয়ে আসে, উৎসাহ তার ততই বৃদ্ধি পায়। মঞ্চসজ্জা, লাইট, সাউন্ড, মেকআপ, ড্রেসআপ-সবদিকে তার টনটনে খেয়াল। নিজে কোনো চরিত্রে অভিনয় করবেন না, অথচ সবার সঙ্গেই আছেন। একেবারে স্টেজ রিহার্সালের দিন নিজে গিয়ে নবাব আলীকে রিকশায় উঠিয়ে নিয়ে আসেন। শিল্পীর সম্মান বলে কথা।
সত্যি স্বীকার করতে দ্বিধা নেই- নবাব চাচার অভিনয় আমরা আগে তো কখনও দেখিনি। নানান জনের কাছে নানা গালগল্প শুনেছি। এদিকে আমাদের আতাহার স্যার তো আছেনই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাপ রে বাপ, জীবিত থাকতেই মানুষ যে এমন কিংবদন্তির নায়কে পরিণত হতে পারে এ কথা আমাদের জানাই ছিল না। তার গমগমে কণ্ঠে যখন বাতাস কেঁপে উচ্চারিত হয়-
বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব আলীবন্দি খাঁ, দাদু, আমায় বলেছিলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজদের তুমি আশ্রয় দিয়ো না..
তখন সারা গায়ের লোম কাঁটা না দিয়ে পারে না। পাতানো যুদ্ধের প্রহসনে সিরাজের পরাজয়ে কার না বুক ভেঙে যায় আতাহার স্যার তো বলেই বসেন-
এই মানুষটি একসময় আমাদের এ তল্লাটের মুকুটবিহীন নবাব ছিলেন, হ্যাঁ।
শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত হয়ে আসে। এত কাছে থেকেও এতদিনে এই পাহাড়সমান উচ্চতার মানুষটিকে চিনতে পারিনি বলে ভেতরে ভেতরে খুবই লজ্জিত হই। বিস্ময়েরও অবধি থাকে না- এত বড় নাটকের পুরোটাই তার মুখস্থ বিস্ময়ের সলতে আরও খানিক উস্কে দেওয়ার জন্য আতাহার স্যার তো বলেই বসেন-
সাজাহান নাটকের ডায়ালগ শুনবে নাকি তোমরা?
আমরা হ্যাঁ বলতে না বলতেই অতিশয় সরল অন্তঃকরণের নবাব চাচা সাজাহান নাটক থেকে পিতৃহƒদয়ের হাহাকার ছড়ানো লম্বা এক সংলাপ উচ্চারণ করতে শুরু করে। কিন্তু জাহানারা শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে প্রগাঢ় মমতামাখানো সংলাপ। কী আশ্চর্য, ওই জাহানারাতেই আটকে যায়। একবার নয়, বারবার ঘুরে ঘুরে ওইখানে থেমে যায়। শেষের বারে তো কান্নায় ভিজে আসে গলা। মুখে আর কথা সরে না। আতাহার স্যার দ্রুত বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে রিকশায় তুলে বিদায় দেন নবাব চাচাকে। তারপর আমাদের সামনে ব্যাখ্যা দেন-
বয়স হয়েছে তো, আবেগ সামলাতে পারেনি।
স্যারের এই ব্যাখ্যা আমরা সহজেই মেনে নিই। আমাদের মধ্যে একমাত্র রিন্টু বাধা দেয়। তার বাড়ি নবাব চাচাদের পাড়াতেই। রিন্টুর মনের ভেতরে কী আছে তে জানে সহসা প্রশ্ন করে বসে-
এই জাহানারাটা কে স্যার?
এমন প্রশ্ন শুনে অনেকেই হেসে ওঠে। তবু স্যার কিন্তু রিন্টুর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন-সম্রাট সাজাহানের কন্যা জাহানারা।
রিন্টু বলে-
নবাব চাচারও একটা মেয়ে আছে জাহানারা নামে।
তাই নাকি
জি স্যার। জাহানারার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে। গতকাল সে বাপের বাড়ি চলে এসেছে।
এ খবর শুনে আতাহার স্যারের বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস উগরে আসে। মুখে দুবার চুকচুক করে অনুশোচনা করেন নবাব চাচার জন্য। ঘরে তার স্ত্রী অনেক দিন থেকে অসুস্থ। একমাত্র ছেলে জব্বার হয়েছে অমানুষ। আবার এই মেয়েটার হলো এই অবস্থা তবু নাটকের কথা বললেই হলো, আর তাকে পায় কে স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেন-
ভয়ের কিছু নেই, ঠিক সময় মতো গ্রিনরুমে এসে হাজির হবে দেখো। একেবারে জাত শিল্পী যে, তার পথ আগলাবে কে হ্যাঁ, বাস্তবেও হলো তাই। নাটক মঞ্চায়নের দিন সবার আগে না হোক, নবাব আলী যথাসময়েই সাজঘরে হাজির।
চোখেমুখে মোটেই ব্যক্তিগত দুঃখ দৈন্যের ছাপ নেই। বরং বহুদিন পর নাটকের মঞ্চে ওঠার সুযোগ পেয়েছে বলে সে যেন আনন্দে আটখানা। অকারণেই হো হো করে হেসে ওঠে। ঘন ঘন চায়ের অর্ডার দেয়। মেকআপ সারা হলে আয়নার সামনে ঘুরে ঘুরে বারবার নিজেকে দ্যাখে। আয়নার মধ্যে মুচকি হেসে নিজের সঙ্গে রসিকতা করে-
কী হে নবাব, নাটক জমবে তো
পলাশপাড়ার নবাব আলী স্বয়ং নবাব সিরাজের চরিত্রে অভিনয় করবে আর সেই নাটক জমবে না, তাই কিছুতে হয় বয়স হয়েছে কিংবা দীর্ঘদিন অভিনয়ের অভ্যাস নেই- এসব অজুহাতের জবাবে আতাহার স্যার পরিস্কার জানিয়ে দেন-
পুরোনো চাল যে ভাতে বাড়ে, দেখে নিও সবাই। ওর নাম নবাব আলী, ইন্দুবাবুর রাখা নাম, হ্যাঁ।
নবাব আলী সত্যিই তার নামের মান রেখেছে। দীর্ঘ সংলাপ টানটান করে উচ্চারণের সময় তার শ্বাসকষ্ট খানিকটা ধরা পড়ে যায় ঠিকই, তবু তার বুকভরা আবেগ আর চরিত্রের সঙ্গে একাত্মতা ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি পরম মমতায় ঢেকে দেয়। মঞ্চে সে ঠিকই দোন্দণ্ড দাপুটে নবাব, ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ জয়ের স্মৃতি তাকে আত্মপ্রত্যয়ী করে ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের প্রাকার ভেঙে সবার মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে এবং পলাশীর প্রান্তরে নতুন করে সৈন্য সমাবেশে আগ্রহী করে; আবার আলেয়ার সামনে পরিম্ফুট হয়ে ওঠে প্রেমবিহ্বল অন্য এক নবাবের ছবি। সব মিলিয়ে বেশ চলছিল আমাদের নাটক। দর্শকের চোখেমুখে মুগ্ধ আবেশ। নাটকের উত্থান-পতনের সঙ্গে তারাও একাকার। শুধু নবাব বলে তো কথা নয়, তার সঙ্গে অভিনয় করতে নেমে আমাদের মতো আনাড়ি অভিনেতাদেরও সব জড়তা কেটে যায়। ফলে বহুদিন পরে হলেও পলাশপাড়ার দর্শকরা একটি ভালো নাটক উপভোগের সুযোগ পায়। একেবারে শেষের দিকে এক দৃশ্যে আমাদের নবাব আলী সহসা বিগড়ে যায়। তখন সে স্রেফ অন্য মানুষ। বেগম লুৎফাকে নিয়ে সিরাজউদ্দৌলা রাতের অন্ধকারে যাত্রা করবেন ভগবানগোলার পথে। এদিকে নবাব আলী কিছুতেই সিংহাসন থেকে নামতে রাজি নয়, বসে আছে অনড় হয়ে; লুৎফার আহ্বানেও যখন কোনো কাজ হচ্ছে না, তখন একান্তে বাধ্য হয়ে আমাদের আতাহার স্যারকে মঞ্চে অবতীর্ণ হতে হয়। মঞ্চে উঠে এসে নাটকীয় আবহ রক্ষা করেই তিনি ডেকে ওঠেন-
জাহাঁপনা!
কী আশ্চর্য, এই ডাকে নবাব যেন একটুখানি কেঁপে ওঠে। চোখের পাতা নেচে ওঠে।
নৌকা প্রস্তুত জাহাঁপনা চলুন, এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি।
সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনের হাতলে দুহাতে মুঠি পাকান। অব্যক্ত কী যেন বলতে চান, বলা হয় না। সিংহাসনের হাতলে ঘুসি মারেন। দুচোখের অগ্নিগোলক বিস্টম্ফারিত করে তাকিয়ে থাকেন। আতাহার স্যার বলেন-
আর বিলম্ব নয় জাহাঁপনা। চারিদিকে ওঁৎ পেতে আছে শত্রু। সিরাজউদ্দৌলা কী ভেবে সহসা উঠে দাঁড়ান। সিংহাসনের চতুন্দিকে মৃদু পায়চারি করেন। থমকে দাঁড়িয়ে হঠাৎ বলে ওঠেন-
বাংলার মসনদ তাহলে অরক্ষিত পড়ে থাকবে গোলাম হোসেন?
এ নিয়ে আপনি ভাববেন না জাহাঁপনা, আতাহার স্যার নিজেই সংলাপ রচনা করেন-
এ বড় দুঃসময়। এ সময়ে আগে নিজেকে বাঁচান।
নিজেকে বাঁচাব এমনই স্বার্থপর?
হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন সিরাজউদ্দৌলা। সে হাসি রাতের নিস্তব্ধ দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। হাসি যেন থামতেই চায় না। আতাহার স্যার সেই হাসির মধ্যেই জোড়হাত করে দাঁড়িয়ে যান সামনে-
গোস্তাকি মাফ করবেন জাহাঁপনা। এখন এভাবে হাসারও সময় নয়। চলুন আমার সঙ্গে।
তবে কি এটা কাঁদার সময় গোলাম হোসেন?
এটা মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করার সময়। দয়া করে আপনি আসুন আমার সঙ্গে।
ভয়ানক অনিচ্ছা সত্ত্বেও সিংহাসন ত্যাগ করেন সিরাজউদ্দৌলা। মঞ্চ ছেড়ে যাবার আগে অশ্রুসজল চোখে চারদিকে একবার চেয়ে দেখে নেন, দর্শকদের কৌতূহলোদ্দীপক দৃষ্টির সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকেন মিনিটখানেক, কী যেন বলতে চেয়েও বলা হয় না, ঠোঁটের ফাঁকে বিড়বিড় করতে করতে অবশেষে কাঠের সিঁড়ি ভেঙে ধীর পায়ে নেমে আসেন মঞ্চ থেকে। অভিনয় শেষে মঞ্চ ত্যাগের সময় শিল্পীদের পায়ে যে গতি থাকে, আমাদের নবাব আলী সেই গতি যেন সবার অলক্ষ্যে কখন হারিয়ে ফেলেছে। বিধ্বস্ত শরীরে টলতে টলতে গ্রিনরুমে এসে হাতলভাঙা পুরোনো চেয়ারটায় ধপাস করে বসে পড়ে। আতাহার স্যার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন-
কী হয়েছে নবাব ভাই, আপনার শরীর খারাপ লাগছে?
নবাব আলী নিরুত্তর।
খিদে পেয়েছে? খাবেন কিছু?
ঘাড়ের ওপরে নবাব আলীর মাথা সামান্য দুলে ওঠে। এর অর্থ হ্যাঁ এবং না দুই-ই হতে পারে। আতাহার স্যার হ্যাঁ ধরে নিয়ে কাকে যেন চায়ের অর্ডার দেন। কাচের গ্লাসে টলটলে লাল লিকার আসে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই নবাব আলীর। যেন চায়ের কোনো তৃষ্ণাই তার নেই। ড্রেসআপ-মেকআপ খসিয়ে ফেলার জন্য এগিয়ে আসে মেকআপম্যান। তখন সে হাত তুলে নিরস্ত করে তাকে। তারপর সটান উঠে দাঁড়ায়। জরির কাজ করা মখমলের শেরোয়ানির বুক থেকে একটা সোনালি বোতাম কখন খসে গেছে কেউ তা খেয়াল করেনি। সেই বোতামশূন্য ফাঁকে হাত রেখে নবাব আলী জানতে চায়-নবাবের পোশাকে আমাকে কেমন মানিয়েছে বলো দেখিএ আবার একটা প্রশ্ন হলো অনেকেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। আতাহার স্যার কাঁধে হাত রেখে বলেন-ফার্স্ট ক্লাস মানিয়েছে নবাব ভাই। একেবারে অরিজিনাল সিরাজউদ্দৌলা। বাংলার শেষ নবাব।
হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে নবাব আলী-সত্যি বলছ তোমরা?সত্যি বলতে সত্যি আর অভিনয়ও হয়েছে তেমনি। যাকে বলে বাদশার বাদশা, নবাবের নবাব।
কী কথায় যে কী কথা এসে গেল এই শেষ বেলায় নবাব আলী সহসা অদ্ভুত এক অভিলাষ ব্যক্ত করে-অনেক হয়েছে। অভিনয় আর নয়। এখন আমি এই সাজপোশাকেই থাকতে চাই। সিংহাসন তো ছেড়েই এসেছি, এখন এই সাজপোশাক যদি না ছাড়ি এমন এক প্রস্তাব শুনে আমরা বাক্যহারা হয়ে অভিনেতা নবাব সিরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।

শেয়ার করুন




সাহিত্য এর আরও খবর
শাস্তি-পুরস্কার ও জাহাঙ্গীরের প্রশাসন

শাস্তি-পুরস্কার ও জাহাঙ্গীরের প্রশাসন

বাংলাদেশের উর্দু কবিতা ও বিহারের খণ্ডিত সত্তা

বাংলাদেশের উর্দু কবিতা ও বিহারের খণ্ডিত সত্তা

রামমোহন ও উপমহাদেশে পারস্যচর্চা

রামমোহন ও উপমহাদেশে পারস্যচর্চা

রবীন্দ্রনাথের কাদম্বরী

রবীন্দ্রনাথের কাদম্বরী

সর্বশেষ সংবাদ
<span style='color:#000;font-size:18px;'>দুর্লভ কিছু বিষয়</span><br/> পাঠকদের উপহার
দুর্লভ কিছু বিষয়
পাঠকদের উপহার
মায়াবিনী লেকে
মায়াবিনী লেকে
আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস
আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস
অনিশ্চয়তায় বানভাসি মানুষ
অনিশ্চয়তায় বানভাসি মানুষ
প্রাথমিক শিক্ষার করুণ দশা কেন?
প্রাথমিক শিক্ষার করুণ দশা কেন?
দরকার মনিটরিং স্কোয়াড
দরকার মনিটরিং স্কোয়াড
<span style='color:#000;font-size:18px;'>দিরাইয়ে ফিমেইল একাডেমির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান</span><br/> পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নিতে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে হবে : দানবীর ড. রাগীব আলী
দিরাইয়ে ফিমেইল একাডেমির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান
পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নিতে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে হবে : দানবীর ড. রাগীব আলী
ছাতকে কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নগদ অর্থ বিতরণ
ছাতকে কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নগদ অর্থ বিতরণ
সিলেটে বন্যার্তদের মাঝে জামেয়া মাদানিয়া বারিধারার নগদ অর্থ বিতরণ
সিলেটে বন্যার্তদের মাঝে জামেয়া মাদানিয়া বারিধারার নগদ অর্থ বিতরণ
সরকারের পাশাপাশি বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় বিত্তবানদের ভূমিকা প্রশংসনীয় : মুহিবুর রহমান মানিক এমপি
সরকারের পাশাপাশি বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় বিত্তবানদের ভূমিকা প্রশংসনীয় : মুহিবুর রহমান মানিক এমপি
পানি হ্রাসের গতি ধীর হওয়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ দীর্ঘ হচ্ছে
পানি হ্রাসের গতি ধীর হওয়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ দীর্ঘ হচ্ছে
কোম্পানীগঞ্জে নদীতে তলিয়ে যাওয়া দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি
কোম্পানীগঞ্জে নদীতে তলিয়ে যাওয়া দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি
লাক্কাতুরা গ্যাস ক্ষেত্রে অগ্নিপ্রজ্জ্বলন ‘ভয়ের কিছু নেই বলছে শেভরন’
লাক্কাতুরা গ্যাস ক্ষেত্রে অগ্নিপ্রজ্জ্বলন ‘ভয়ের কিছু নেই বলছে শেভরন’
হবিগঞ্জে মোবাইল কেনাবেচা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ ॥ আহত ৬০
হবিগঞ্জে মোবাইল কেনাবেচা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ ॥ আহত ৬০
লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ‘আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস’-এর সদস্য নির্বাচিত
লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ‘আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস’-এর সদস্য নির্বাচিত




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি : রাগীব আলী
সম্পাদক : আব্দুল হাই

কার্যালয় : মধুবন সুপার মার্কেট (৫ম তলা), বন্দরবাজার, সিলেট-৩১০০ ।
ফোন : পিএবিএক্স +৮৮ ০২৯৯৬৬৩১২৩৪, বিজ্ঞাপন: +৮৮ ০২৯৯৬৬৩৮২২৭
ই-মেইল: sylheterdak@yahoo.com
বিজ্ঞাপন : sylheterdakadv@gmail.com

  • Terms and Conditions
  • Privacy Policy
  • Contact

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh

Go to top