পথেই শেষ চিকিৎসক দম্পতির স্বপ্ন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৭:৫১:৩৫ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক::
ডা. ইমরান খান রুমেল, তাঁর স্ত্রী ডা. অন্তরা আক্তার। স্বনামধন্য চিকিৎসক পরিবারের সাজানো সংসার ছিলো এই দম্পতির। কিন্তু দুঃস্বপ্নের একটি সকাল আসলো তাদের জীবনে। আচমকা এক দুর্ঘটনা তছনছ হয়ে গেছে সব। ইমরান মারা গেছেন। মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অন্তরা। অবশ্য বাবা মায়ের সাথে না থাকায় বেঁচে গেছে তাদের দুই শিশু সন্তান- এনায়া ও ইন্তেজা। অবুঝ এই দুই শিশুর জীবনকে ঘিরেও আসলো বীভৎসতম দুঃস্বপ্ন।
ডা. অন্তরার ৪২তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা ছিলো ঢাকায়। এ কারণে স্বামী ডা. ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন এনা পরিবহনের একটি বাসে। ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবার আগে দুই শিশু সন্তানকে নানার বাসায় রেখে যান মা-বাবা। তবে ঢাকা আর যাওয়া হয়নি ইমরান-অন্তরার। সিলেট শহর থেকে বেরিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে আসা মাত্রই দুর্ঘটনার শিকার হয় তাদের বহনকারী বাসটি। বিপরীত দিক থেকে আসা লন্ডন এক্সপ্রেসের একটি বাসকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ডা. ইমরান। গুরুতর আহত হন ইমরানের স্ত্রী অন্তরা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ডা. অন্তরার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় মোট ৮ জন নিহত ও ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুরের অদূরবর্তী ব্রিজের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
সিলেট নগরীর ফাজিলচিশত এলাকার বাসিন্দা প্রখ্যাত প্যাথলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেনের ছেলে ডা. ইমরান। ডা. আমজাদের মেয়ে নূরীও ডাক্তার। তাদের একমাত্র ছেলে ছিলেন ডা. ইমরান। পুত্র শোকে কাতর বাবা আমজাদ হোসেন এখন ব্যস্ত পুত্রবধূ ডা. অন্তরাকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেই চেষ্টায়। দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে অবস্থান করছেন। রুমেল জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে সিলেট নগরীর উইমেন্স মেডিকেল কলেজে প্রভাষক ছিলেন।
দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর সকালেই পৌঁছে যায় ডা. আমজাদ হোসেন খানের কাছে। খবর পেয়েই পড়িমড়ি করে তিনি ছুটে আসেন ওসমানী হাসপাতালে। যে হাসপাতালে দীর্ঘকাল কাজ করে গেছেন ডা. আমজাদ সেখানেই পড়ে আছে নিজের ছেলের লাশ। নিজেকে কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছিলেন না আমজাদ। হাসপাতালের মর্গের সামনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
ছেলেমেয়ে নিয়ে নগরের ফাজিল চিশত এলাকায় থাকেন ডা. আমজাদ। সেখানে গিয়ে দেখা যায় আরও হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় ডা. ইমরানের মা। কোনো কথাই বলতে পারছেন না। কেবল হা-হুতাশ করে চলছেন। পরিবারের সকলেরই একই অবস্থা।
ইমরান-অন্তরা দম্পত্তির দুই মেয়ে-এনায়া ও ইন্তেজা। দুজনই শিশু। একজনের বয়স ৫। অপরজনের ২। ঢাকায় যাওয়ার আগে বাবা-মা তাদের নানুর বাড়িতে রেখে গেছেন।
ডা. ইমরানের মৃত্যুর খবরটি কেউই মেনে নিতে পারছেননা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উড়ছে শোকাহত স্ট্যাটাস। সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ইমরানের সহপাঠী ডা. শাকিল রহমান জানান, ঘুম থেকে উঠেই দুঃসংবাদ পাই। ইমরান মারা গেছে শোনে আৎকে উঠি। শাকিল বলেন, খুব মেধাবী চিকিৎসক ছিলো ইমরান। মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ ছিলো সে। রাত-বি রাতে যেকোনো হাসপাতাল থেকে কল আসলেই ছুটে যেতো । এমন ভালো মানুষ, হাস্যজ্বল ইমরান নেই- ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
নগরীর দর্শন দেউড়ি এলাকায় অবস্থিত মরিয়ম ইসহাক হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। কিন্তু এই দুর্ঘটনায় যে আমার পরিচতজনেরাও হতাহত হয়েছেন তা বুঝতে পারিনি। পরে ইমরানের কথা শুনলাম। তিনি বলেন, ইমরানকে যখনই ডেকেছি সারা পেয়েছি। আমাদের ক্লিনিকে প্রায়ই এসে সেবা দিত সে। ইমরান ছিলো খুবই নম্র ও ভদ্র ছেলে । এরকম মানুষ হয় না।