পবিত্র আশুরার চেতনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২২, ৪:৪৫:৪৬ অপরাহ্ন

ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় দিন হচ্ছে পবিত্র আশুরা। প্রতি বছর মুহররম মাসের ১০ তারিখ এই দিনটি পরম শ্রদ্ধা আর গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এই দিনটির গুরুত্বের কথা মাহাত্ম্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই দিনটিতে এমন সব ঘটনা ঘটেছিলো, যার জন্য দিনটি একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। এই দিনে যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ঘটনা। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এই দিনে হজরত ইমাম হোসেন (রা.), হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর পুত্র এজিদের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আত্মত্যাগের এক বিরল নজির স্থাপন করেন। এই ঘটনা অন্যায়-অবিচার নির্মূল করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে।
কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও দশই মুহররম আরও অনেক স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কারবালার ঘটনাটিই সবচেয়ে হৃদয় বিদারক। অন্যান্য ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হজরত আদম (আ.) ঐ দিনে বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন, এই দিনে পরম করুণাময় আল্লাহপাক পবিত্র লওহে মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্ট জীবের রূহ পয়দা করেন, দুনিয়ায় নদী পাহাড়-পর্বত, সাগর এই দিনেই সৃষ্টি হয়। এই দিনে আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয় এবং এই দিনে তাঁর তওবা কবুল করা হয়। এই দিনে নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে নাজাত পেয়েছিলেন হজরত ইব্রাহীম (আ.) এবং এই দিনেই তিনি পয়দা হয়েছিলেন। এই দিনে হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, এই দিনে হজরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন ও এই দিনে তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। হজরত জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর রহমত নিয়ে রাসূল (সা.) এর কাছে প্রথম উপস্থিত হওয়াসহ এই দিনে আরও অনেক ঘটনা ঘটে; যা এই দিনটির মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ঘটনা মানুষকে চিরদিন অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে, শক্তি যোগাচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। বিশ্বের যে দেশে যখনই সত্য লঙ্ঘিত হয়েছে, ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হয়েছে, সেখানেই কারবালার ঘটনা, হজরত হোসেন (রা.) এর আত্মত্যাগ নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষদের শক্তি যুগিয়েছে। এই চেতনা চিরদিন সমুন্নত থাকবে বিশ্বের বুকে। আর তাই এই দিনটি মুসলমানদের কাছে আত্মত্যাগের দিন, সহনশীলতা প্রদর্শনের দিন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দিন, আত্মজিজ্ঞাসারও দিন।
সবচেয়ে বড় কথা ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’ এই শ্লোগানকে চির অম্লান করেছে দশই মুহররম। সত্য, ন্যায় আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চিরন্তন বাণীকে সমুন্নত রাখার তাগিদ নিয়ে আশুরা আসে প্রতি বছর মুসলমানদের সামনে। এর অন্তর্নিহিত মাহাত্ম্যকে আমাদের প্রত্যেকের কর্মে চেতনায় লালন করতে হবে। কারবালার শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে তখনই, যখন তাওহীদের বাণী তথা ইসলামকে সকল কুসংস্কার আর অন্যায়-অবিচারের কবল থেকে মুক্ত করা হবে, যখন বিশ্বের কোনো দেশে বা সমাজে স্বৈরাচারের অত্যাচারে নিপীড়ন থাকবে না। আজকের এই দিনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে বিশ্বের যেখানেই মানুষ নিপীড়ন আর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেখানেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক নির্যাতিতের ওপর, নিপাত যাক স্বৈরাচার-নির্যাতনকারী।