পরিযায়ী পাখির কাকলিতে মুখর হাকালুকি হাওর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জানুয়ারি ২০২১, ২:৪১:৩৮ অপরাহ্ন

সুশীল সেনগুপ্ত,কুলাউড়া অফিস :
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া,জুড়ী,বড়লেখা এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। এই হাওরের ১শ’ ১১টি মৌজায় রয়েছে ২শ ৩৮টি সরকারি খাস বিল। সরকার এই হাওরকে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হিসাবে ঘোষণা করে। সুদীর্ঘ ৫ বছর পরিবেশ অধিদপ্তর এই হাওরটির উত্তরণের দায়িত্বে ছিল। ফলে হাওরটি গতি ফিরে পায়।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে অগনিত পরিযায়ী পাখি বিশে^র বিভিন্ন শীত প্রবল এলাকা থেকে এই হাওরে আসে। এবার গত নভেম্বর মাসের শেষ ভাগে পরিযায়ী পাখি এই হাওরে আসতে শুরু করে। বর্তমানে লেঞ্জা, খুন্তিহাঁস, চকাচকি, সরালি,পিয়াং হাঁস, ভুতি হাঁস,কালো কুট,পাতি ভুতিহাঁস ও সিতি হাঁস হাওরে এসে গেছে। হাকালুকি হাওর তীরের অধিবাসী আব্দুর রৌফ,সায়াদ মিয়া,বটলাই মিয়া,ভুট্টো মিয়া,সামছু মিয়া জানান এই বছর হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তবে, ফাইল ফিশারি (তিনবছর অন্তর অন্তর ফিশিং) চকিয়া,হাওয়াবর্ণা, ফুটবিল, গৌড়কর্ণি,নাগুয়ালরিবাই প্রভৃতি বিল গুলিতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী। এই বিল গুলিতে এই বছর ফিশিং হচ্ছে না। পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম প্রসঙ্গে হাওর তীরের বাদে ভুকশিমইল গ্রামের অধিবাসী ও রসুলগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, হাওর তীরে বোরো ধান চাষ কম হওয়ায় পাখির খাদ্য সংকট রয়েছে। তবে, পাখি শুমারি ছাড়া পাখির সঠিক সংখ্যা নিরূপন করা সম্ভব নয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, কাংলি,গোবরকুড়ি বিল দু’টি মাছের অভয়াশ্রম। ফলে এই দু’টি বিলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেশী এবং তাদের কিচির-মিচির শব্দ শোনা যায়। এলাকাবাসীরা জানান,পাখি শিকারিরা সুযোগের সন্ধানে আছে। পাহারা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। উপজেলা মৎস্য অফিসার আজহারুল আলম জানান,ভিসিজি‘এর সদস্যরা অবৈধভাবে মাছ ও পাখি শিকারীদেরকে প্রতিহত করতে সক্রিয় রয়েছে।
২০০৩ সালে বিষ টোপ দিয়ে পরিযায়ী পাখি নিধনের ফলে পরবর্তী বছর গুলিতে পরিযায়ী পাখির আগমন কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর হাওর উন্নয়নের দায়িত্বে ছিল। সেই সময় দহবিল, চাতলা, হারাম ডিংগা, নাগুয়া,লরিবাই ও কৈয়ার কোনা বিলকে পাখির অভয়াশ্রম হিসাবে চিহ্নিত করে সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। গ্রুপ ভিত্তিক কমিটি গঠন করে পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা এখনও বহাল রয়েছে। তবে পাহারা আরো জোরদার এবং সক্রিয় করা দরকার। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত পাখি শিকারের কোন খবর তিনি পাননি। বিষয়টির প্রতি তিনি সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন, পরিযায়ী পাখিরা যাতে নিরাপদে হাওরে থাকতে পারে।