টানা বর্ষণে সদর ও গোয়াইনঘাটে টিলা ধসে ৪টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত
পাহাড়-টিলা ধসের শঙ্কা তৎপরতা নেই প্রশাসনের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২২, ৬:২৭:২২ অপরাহ্ন

নূর আহমদ:
অব্যাহত টানা বর্ষণে সিলেটে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সিলেটের সদর ও গোয়াইনঘাটে পৃথক দুটি এলাকায় টিলা ধসের খবর পাওয়া গেছে। তবে, কোথাও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকি নিয়ে টিলার পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার। জেলা প্রশাসন থেকে কোনও ধরনের সতর্কতা কিংবা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন কিংবা নিরাপদে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার আখালিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, টিলারগাঁও, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, বালুচর, টুকেরবাজার, পাঠানটুলা, গুয়াবাড়ি, জাহাঙ্গীরনগর, আখালিয়া বড়গুল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টিলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এর বাসিন্দারা কেউ ঘর ভাড়া নিয়েছে, আবার কেউ নামমাত্র টাকা দিয়ে দখলদারদের কাছ থেকে জায়গা কিনেছে। বসবাসকারীদের মধ্যে নিম্নআয়ের লোকজনই বেশি। প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস বিভিন্ন টিলার পাদদেশে।
এদিকে, সিলেটে গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে টিলা ধসের ঝুঁকি বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারি বৃষ্টিপাত হলে সিলেট সদর উপজেলা খাদিম নগর ইউনিয়নের সাহেবেরে বাজার রামপুর গ্রামে টিলা ধসে বাসিন্দা আব্দুল খালিকের ঘরসহ তিনটি পাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আব্দুল খালিকের পুত্র খসরুল ইসলাম জানান, রাত দেড়টার দিকে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে তারা বৃষ্টিতে ধান ভিজে যাচ্ছে দেখে ধান গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ পেছনের টিলা ধসে তাদের ঘরের দেয়াল ভেঙে টিলার মাটি ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে তাদের আসবাবপত্র দরজা-জানালা ভেঙে যায়। তবে, কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এসময় তার চাচা আলকাছ মিয়ার ঘরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে, সবাই অল্পের জন্য বেঁচে যান ।
খসরুল ইসলাম জানান, টিলা তাদের ঘর থেকে বেশ কয়েক গজ দূরে। তারা কখনো টিলা কাটেননি। বাঁেশর ঝাড় রয়েছে। টিলার মাটি ধসের ঘটনা ঘটবে তারা কখনো কল্পনাও করেননি।
এদিকে টিলা ধসে একই গ্রামের আলমাস মিয়ার ছাগল, হাস মুরগিসহ ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর প্রথম খন্ড নয়াগ্রামে হাফিজ মোঃ ফয়জুল করিমের ঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
খাদিমনগর ইউনিয়নের ভাটা এলাকায় একটি মাদরাসা সামনে রেখে পেছনে টিলা কাটছেন টিলার মালিক। সেখানেও বেশ কয়েকটি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। টিলা ঘেঁষে পাকা বাসাবাড়িও গড়ে উঠেছে। আখালিয়া বড়গুল এলাকার একটি টিলা দখল করে বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। টিলা কেটে বাড়ি তৈরি করার ফলে টিলার মাটি দুর্বল হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে টিলাতে বসবাস করছেন সহস্রাধিক মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধা টিলায় বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আব্দুল সহিদ বলেন, অনেক কষ্ট করে ঘরবাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকছি। আমাদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। এরজন্য ঝুঁকি থাকলেও বসবাস করছেন তারা। টিলায় বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, টিলার নিচে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সেখানে আছেন তারা। কম টাকায় জায়গা পাওয়ায় একটু ঝুঁকি নিয়েই তারা ঘর বানিয়েছেন।
খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দিলোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ছোট-বড় বেশ কিছু টিলা রয়েছে। বরাবরই তাদের সতর্ক করা হয়। তবে কে শুনে কার কথা। তিনি রামপুর এলাকায় একটি টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান। টিলা ধসের বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার বলেন, সিলেটের ছয় উপজেলাসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০১১ সালে আদালতের একটি রিটে এক হাজার ২৫টি টিলার পরিসংখ্যান দেখা যায়। বাস্তবে এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। অনেক টিলার অস্থিত্বই নেই। ভূমি খেকোরা টিলা কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে। তিনি বলেন, আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলে এভাবে টিলা ধস অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, টিলা কাটা বন্ধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সিলেট পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, টিলা কিংবা পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্য অফিসের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ টিলা কিংবা পাহাড়ের নিচে যাতে কেউ বসবাস না করে, সে ব্যাপারেও সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আমরা যেখানেই টিলা কাটার খবর পাচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান জানান, টিলার নিচে বসবাসকারীদের সতর্ক করতে তিনি সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিবেন এবং তাদের ব্যবস্থা নিতে বলবেন।