প্রকৃতিতে গ্রীষ্মকাল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২২, ৬:৪৩:০৭ অপরাহ্ন

সেলিনা আক্তার পলি
বাংলাদেশ ধানের দেশ গানের দেশ পাখ-পাখালি, গাছ-গাছালী, ফুল-ফল, লতা-পাতা বিভিন্ন ধরনের পুষ্পরাজির দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দু’মাস পর পর ঋতু বদল হয়। একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে বাংলাদেশ।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ষড়ঋতুর দেশ এই বাংলাদেশ। বারো মাসে বিরাজ করে ছয়টি ঋতু। একেক ঋতুতে একেক রূপ নিয়ে আসে ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ধরুণ এখন গ্রীষ্মকাল গ্রীষ্মের আগমনে বৈশাখী ঝড় বহে গাছপালা, ঘরবাড়ি ঝড়ে উল্টে দেয়। প্রচন্ড বাতাস বহে। গাছের ছোট ছোট আম, জাম, কাঁঠাল, জাম্বুরা ঝরে পড়ে। কৃষকরা ব্যস্ত থাকে বোরো ধান তুলতে। তারা আল্লা-আল্লা করে যেন বৈশাখী ঝড়ে শীলা, পানিতে ধানগুলো যেন তলিয়ে না যায়।
বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে উজানের পানি ভেসে আসে। হাওর, বিল, নদী, নালা-খাল পানিতে ভরে যায়। এইসব ঝড়-তুফানের মধ্যও কৃষকরা ধান কাটতে ব্যস্ত থাকে। আবার অনেক ধান পানিতে তলিয়ে যায়। উজানের পানিতে নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়। রাস্তাঘাট, হাটবাজার তলিয়ে যায়।
মানুষজন সীমাহীন কষ্টে পড়ে যায়। নৌকা চলে সারি সারি এ বাড়ি থেকে ওবাড়ি যেতে বাজারে যেতে কাজে কর্মে, স্কুল-কলেজে যেতে নৌকায় যেতে হয়। খাবার পানির সংকট হয়, লোকজন ফুটিয়ে পানি খায়। ভেলা নিয়ে লোকজন পারাপার হয়। প্রত্যেকের বাড়ির ঘাটে নৌকা বাধা থাকে, পুরুষ লোকেরা ফাঁস জাল দিয়ে বাড়ির আশেপাশে মাছ ধরে। সাথে উঠতি বয়সের ছেলেরা জাল পেতে মাছ ধরে। ছোট ছোট পোনা মাছ মারে। আকাশে বিজলী চমকায়, গর্জন করে উঠে। ক্ষেতে খামারে-হাওরে, রাস্তাঘাটে লোকজন বজ্রপাতে মারা যায়। হাওরে বড় বড় ঢেউ ওঠে। তাই গ্রীষ্মকাল আমাদের জন্য কিছুটা বিপদজনক।
গ্রীষ্মের আগমনে বিজলী, ঝড়-তুফান, বন্যা থাকলেও বিভিন্ন ধরনের বর্ণিল ফুলে ফলে ভরে যায় গ্রীষ্মকাল। আবার গ্রীষ্মের তাপদাহ উপেক্ষা করেও গাছে গাছে শাখা-প্রশাখায় ফুটে নানা রঙের রঙিন ফুল। বেশি উঁচু গাছে ফুল ফুটে। শুধু তাই নয় ফুলগুলোর স্থায়ীত্বও বেশি। বৈশাখ মাসের প্রথম ভাগেই পাওয়া যায় কয়েকটি বাহারি ফুল তার মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, গন্ধরাজ, সোনালু, স্বর্ণচাপা, উদয়পদ্ম, গুলাচি, লালসোনাইল ইত্যাদি গ্রীষ্মের প্রথম ফুল।
তবে টকটকে লাল রক্তবর্ণ কৃষ্ণচূড়ার মত মাঝে মাঝে হলুদ রঙের কৃষ্ণচূড়াও দেখা যায়। তখন গাছে হলুদ রঙের ফুল দেখা যায় এটা হলুদ কৃষ্ণচূড়া, আবার কমলা রঙের মধ্যে হলুদ বর্ণেরও কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফোটে তিনটি কৃষ্ণিচূড়া বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবন মাস পর্যন্ত গাছে ফুল ফোটে। কৃষ্ণচূড়া শীতের শেষভাগে গাছে পাতা শূন্য হয়ে যায়। বসন্তের মাঝামাঝিতে ছোট ছোট কচি পাতা গজায়। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ। সব ঋতুই বাংলাদেশের প্রকৃতিতে নবজাগরণের বার্তা নিয়ে আসে। গ্রীষ্মে আম, কাঁঠাল, পানি জাম, গোলাপ জাম গাছে গাছে পাকে। প্রত্যেকের বাড়িতে এইসব ফুল, ফলের গাছ আছে। তখন আম, কাঁঠাল বিভিন্ন জাতের ফল খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। মেয়ের বাড়ি ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আম, কাঁঠাল, আনারস দেওয়ার প্রচলন আছে। এটা বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্য। তাইতো কবির কন্ঠে ভেসে ওঠেÑ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’।