‘প্রকৃতি ও পরিবেশ’ নিয়ে কিছু কথা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ৩:৫৮:০১ অপরাহ্ন

মুজিবুর রহমান মুজিব
সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী ষাটের দশক থেকে লিখে চলেছেন। এখনও ঈমানে আমানে, সুন্নতে, উজ্জ্বল তারুণ্য দীপ্তিতে ভরপুর। লিখে চলেছেন দু’হাতেই। প্রায় প্রতিদিন জাতীয়, স্থানীয় দৈনিকসমূহ এবং বিভিন্ন স্মরণিকা, ম্যাগাজিনে তাঁর অতীব মূল্যবান প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাপা হয়। তিনি পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কলাম লিখেন আন্তর্জাতিক পাতায় তখন মনে মন হয় তিনি একজন পেশাদার কুটনীতিবিদ, যখন চাষাবাদ ও কৃষিবিষয়ক রচনা লিখেন তখন মনে হবে তিনি একজন কৃষিবিদ- যখন স্বাস্থ্য বিষয়ক হেলথ টিপস লিখেন তখন মনে হবে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁর প্রবন্ধ সংকলন ‘স্বাস্থ্য সামাচার’ স্বাস্থ্য বিষয়ক সাহিত্যের ভূবনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আফতাব চৌধুরী বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী হলেও তিনি মূলত ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ’ বিষয়ক লেখক। প্রকৃতিপ্রেমি বৃক্ষসখা আফতাব চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায়। ছদকায়ে জারিয়া ও সুন্নতে রসুলুল্লাহ হিসাবে ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে তিনি এ কাজ করছেন। এমন মহৎ কর্মের স্বীকৃতিতে ১৯৯৮ সালে তিনি বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করে সিলেটবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন সিলেটের সোনার ছেলে আফতাব চৌধুরী।
বিগত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একুশতম গ্রন্থ ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ’। ধর্ম-কর্ম, সমাজসেবা, বই পুস্তক আর বৃক্ষরাজি নিয়েই ব্যস্ত আছে। ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ’ গ্রন্থে প্রাসঙ্গিক রচনা একুশটি। গ্রন্থখানি যথার্থভাবেই একুশময় হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে আমাদের জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বায়ান্নোর একুশে শুধু মাত্র ভাষার প্রেমই জড়িত ছিল না। একুশের বাঙালির জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ছিল জড়িত। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেতনায় উন্মেষ ঘটিয়ে ছিল। গ্রন্থের শুরুতে মানবতার স্বার্থেই পরিবেশ সংরক্ষণ প্রয়োজন দিয়ে শুরু করে একুশতম নিবন্ধ যুদ্ধের হাতিয়ার নির্মাণ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ দিয়ে শেষ হয়েছে। ভিতরে আছে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সমস্যা, পরিবেশ সংরক্ষণে দেশীয় গাছপালার অবদান। প্লাস্টিকের আগ্রাসন-বিপন্ন পরিবেশ। পরিবেশ সংরক্ষণে পাখির প্রভাব ও অবদান ইত্যাদি। সুন্দরবন রক্ষা এবং দেশীয় পরিবেশবাদিদের আন্দোলন সম্বন্ধেও সচেতন এই কলম সৈনিক। লিখেছেন সুন্দরবন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ অপরিহার্য। দেশব্যাপী নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার এই প্রকৃতিপ্রেমিক ও পরিবেশবাদী লেখক। এ ব্যাপারে তাঁর নদী ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন রচনাটি মূল্যবান ও প্রাসঙ্গিক। বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধিতেও সোচ্চার এই মানবতাবাদি লেখক। পারমাণবিক বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরেছেন তিনি গবেষকের ভাষায়। বন্য পশু-পক্ষি ও বন্যপ্রাণী প্রসঙ্গে তাঁর আগ্রহের কমতি নেই।
তাঁর বক্তব্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বাঘ গন্ডারের বংশ বৃদ্ধিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। রচনাগুলোতে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বরাবরের মত এই গ্রন্থেরও ভাষা সহজ, সরল, সুখপাঠ্য। শ্রেষ্ঠ করদাতা এবং বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এই গ্রন্থকার ‘অবদানে অমলিন’ এর মুখবন্ধ লেখক পরিচিতি লেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাঁর কাছে দাবী ছিল শুধু ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ’ নিয়ে একখানা গ্রন্থ লেখার। আমার দাবী পূর্ণ হলো, মোবারকবাদ জনাব আফতাব চৌধুরীকে। প্রকাশনা কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ। গ্রন্থখানা প্রকাশ করেছেন ফারহানা খানম চৌধুরী ও ফাহমিদা সুলতানা চৌধুরী (স্বর্ণা)। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করছি।