প্রসঙ্গ : মাটি দূষণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ৩:৩৪:১৪ অপরাহ্ন

অহংকারী লোক প্রয়োজনের সময় কারও সহানুভূতি পায় না। – জন ফ্লোরিও
পানি দূষণ, বায়ু দূষণ আর শব্দ দূষণের মতোই মাটি দূষণ একটি মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। পরিবেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উপাদানের অন্যতম হচ্ছে মাটি। প্রাণীকূলের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য্য উপাদান এই মাটি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। সাধারণত যখন ভূপৃষ্ঠের দূষকগুলোর ঘনত্ব এতো বেশি হয়ে যায় যে, এটি ভূমির জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে, তখন তাকে মাটি দূষণ বলা হয়। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই এখন মাটি দূষণ একটি বৃহৎ সমস্যা। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মাটি দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী হুমকি-যা ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার মতো অঞ্চলে বিশেষত মারাত্মক। এই মাটি দূষণ থেকে রক্ষা পেতে সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এর জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। আইনের কঠোর প্রয়োগও নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে হবে বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা পরামর্শ দিয়েছে।
মাটি দূষণ হয় নানা কারণে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক, কীটনাশক ও সার ব্যবহার। এই মাটি দূষণ বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মাটির দূষক খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে; যার ফলে নানা রোগের জন্ম হয় মানবদেহে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষ ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এ দেশে কৃষি কাজে অবাধে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক সার। আর এই সার-কীটনাশক উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। যা সৃষ্টি করছে রোগ-ব্যাধি। কলকারখানার বর্জ্য দূষিত করে চলেছে মাটিকে। ইটভাটার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি উত্তোলিত করার মাধ্যমে ভূমিক্ষয় এবং মাটি দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মাটিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানগুলো মাটির উর্বরতা হ্রাস করে। ফসল উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। গাছপালা পশুপাখি মাটি থেকে তাদের খাদ্য সামগ্রী খুঁজে নেয়। কিন্তু মাটি যদি বিষাক্ত থাকে তাহলে তা গাছপালা এবং পশুপাখির খাদ্য নয়, বরং মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ দূষিত মাটিতে উদ্ভিদের উপকারী ব্যাকটেরিয়া অকার্যকর হয়ে পড়ে। আর প্লাস্টিক পণ্য মাটির যে সর্বনাশ করছে সেটা বলাই বাহুল্য। প্লাস্টিক পণ্য পলিথিন মাটিতে ফেলে দেয়ার ফলে মাটি দূষণ তো হচ্ছেই সেই সঙ্গে হচ্ছে পানি দূষণ-পরিবেশ দূষণ। প্লাস্টিক পণ্য পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থাও বিঘ্নিত করছে।
মাটি দূষণ রোধে সর্বাত্মক সচেতনতার পাশাপাশি কিছু কিছু বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। প্রথমত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে এগুলোর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে জৈব প্রযুক্তিতে অভ্যস্থ হতে হবে। দ্বিতীয়ত প্লাস্টিক পণ্য ও মেটাল পদার্থের পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন প্রচলিত রয়েছে আমাদের দেশে। এগুলো হচ্ছে-পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭, পরিবেশ আদালত আইন-২০০০, বালু মহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৩, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩। বিদ্যমান এসব আইনে মাটি দূষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। মাটি সুরক্ষায় এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।