বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখ কি আমরা জানি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৫:০৩:০০ অপরাহ্ন

বোরহান বিশ্বাস
রোহারা তিন ভাই-বোন। বড় ভাই স্নাতকোত্তর পাশ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছোট ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে। সবার ছোট রোহা। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।
ছোট বলে রোহা সবার অত্যন্ত স্নেহের। ওর আবদারগুলোও থাকে উদ্ভট ধরণের। সবাই কোনো কিছু যখন একভাবে দেখে রোহা তার ভেতরে অন্য কিছু খুঁজে পায়। যেমন একবার একটি অফিসের আবেদন ফরম দেখার পর রোহা সেটা নিয়ে কি কাণ্ডটাই না ঘটালো।
ঘটনাটা খুলেই বলা যাক, রোহার বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন ফরম তুলতে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে রোহাও গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে বাবা ফরম তুলতেই রোহার চোখে পড়লো নাম, পিতার নাম, মাতার নামসহ অন্যান্য পরিচয়ের জায়গা জানার জন্য প্রতিটি লাইনের শেষে বিসর্গ চিহ্ন দেওয়া রয়েছে।
কিন্তু রোহা স্কুলে শিক্ষকদের কাছে শিখেছিল এসব জায়গায় কোলন (:) ব্যবহার করতে হয়। প্রথমে বাবা, পরে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের কানে বিষয়টি পৌঁছলো। সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো। বিষয়টি তাদের কাছে তেমন কিছুই মনে হলো না। রোহা গো ধরলো। ওটা ঠিক করতেই হবে। পিড়াপিড়ির এক পর্যায়ে তারা বললেন, ঠিক আছে ওটা আমরা দেখবো।
বেশ কিছুদিন পর রোহার বাবা আবার সেই অফিসটিতে গেলেন। কথার একপর্যায়ে এক কর্মকর্তা তাকে বললেন, আমরা কিন্তু ওই বিষয়টি ঠিক করে দিয়েছি। তিনি প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারলেন না। পরে ওই কর্মকর্তা হাতে একটি ফরম নিয়ে বললেন, বিসর্গের জায়গায় কোলন বসানো হয়েছে। এটা দেখার পর রোহার বাবার আনন্দ আর ধরে না। বাসায় ফিরে তিনি রোহাকে কাছে ডেকে চুমু খেলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশ জুড়ে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশেও নানা অনুষ্ঠান হবে। প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। রোহা অনেক নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারছে।
একদিন টেবিলে রাখা ‘সাধারণ জ্ঞান’ বিষয়ক বড় ভাইয়ার একটি বই দেখছিল রোহা। সেখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ইংরেজি ও বাংলা জন্ম তারিখটি ওর চোখে পড়লো। কিছু পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যুর ইংরেজি তারিখটি সে দেখলো। রোহা বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম ও মৃত্যু তারিখটি খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পেল না।
বাবা ও ভাইদের কাছে জিজ্ঞেস করলো রোহা। তারা বলতে পারলেন না বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখটি। ছোট ভাইয়া বললো, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চই তো আমরা জানি। বাংলা জন্ম তারিখ জানার দরকারটা কি? শুনে রোহার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
পরদিন রোহা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলো। তারাও কিছু বলতে পারলেন না। তবে, বিষয়টি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। তারা ভাবলেন, এমন একজন নেতা যিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, বাংলাদেশের নাম দিয়েছেন, জাতির পিতা, তার বাংলা জন্ম ও মৃত্যু তারিখটি তো আমাদের সবার জানা থাকা উচিত। কিন্তু কেউই জানি না, এটা কি হয়।
একদিন হঠাৎ রোহার বড় ভাই বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখটি অন্য একটি বইয়ে খুঁজে পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রোহাকে বিষয়টি জানালেন। রোহা জানতে পারলো বাংলা ১৩২৬ সনের ৩ চৈত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর মৃত্যুবরণ করেন ১৩৮২ বঙ্গাব্দের ২৯ শ্রাবণ।
রোহা হিসাব করে দেখলো ১০০ বছর পরও বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখ ৩ চৈত্র ১৭ মার্চেই পড়েছে। স্কুলে গিয়ে রোহা বন্ধুদের বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখটি জানালো। সবাই নতুন এ বিষয়টি জানতে পেরে বেশ খুশি হলো। শিক্ষকরাও খুশি হলেন রোহার জানার আগ্রহ দেখে।