বন্ধুত্ব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২২, ৪:৪৪:৩২ অপরাহ্ন

রুবি আক্তার
‘বন্ধুত্বে বয়স কখনই কোন বাঁধা নয়,/বন্ধুত্বে নিঃস্বার্থ ভালোবাসাটাই আসল বিষয়!’
ছোট্ট একটা মিষ্টি মেয়ে। তার বয়স মাত্র চার বছর। সে দেখতে যেমন মিষ্টি, কথাবার্তায়ও তেমনি পাকা বুড়ি এবং তার নামটাও খুব সুন্দর। তার নাম হলো সোহামনি। আর সোহার সাথে যার এতো গভীর এবং অদ্ভুত বন্ধুত্ব সে হলো তার এক আন্টিমনি। ওর আন্টি মনির বয়স বিশ বছর। ওদের মধ্যে বয়সের তফাত ষোল বছর। কিন্তু ওদের বন্ধুত্ব দেখলে বুঝাই যায় না যে ওদের মধ্যে কোন বয়সের তফাত আছে। ওরা একজন আরেকজনকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
একদিন দেখা না হলে একজন আরেকজনকে চোখে হারায়। সরাসরি দেখা না হলে ওদের ভিডিও কলে রোজই দেখা হয় কথা হয় প্রায় এক দুই ঘন্টা। সে এক অন্য রকম ভালোবাসা। এখন ওদের বন্ধুত্ব কিভাবে হল সেই গল্প বলি। সোহার আন্টির সাথে কিন্তু ওর রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক যে সব সময় রক্ত দিয়ে বিচার করতে হবে তা কিন্তু নয়। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও এই পৃথিবীতে আরও অনেক সম্পর্ক হয়। আর সেই সম্পর্কগুলো হয় মায়ার সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক।
যাই হোক এখন আসল কথায় আসি। প্রথম দেখাতে কিন্তু ওদের মধ্যে তেমন ভাব হয়নি। অবশ্য প্রথম দেখাতে সবার সাথে সব সময় ভাব হয়ও না। ওর আন্টি ওদের বাসায় প্রায়ই ঘুরতে আসে এবং ধীরে ধীরে ওদের মধ্যে খুব ভাব হয় এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর সম্পর্কে অনেক মায়া জড়ানো, এই মায়া কাটানো এতো সহজ না।
মৃত্যু ছাড়া হয়তো এই মায়া কেউ কোনদিন কাটাতে পারবে না। ওদের বন্ধুত্বটা কিন্তু যে সে বন্ধুত্ব নয়, ওরা একে অপরকে নিজেদের বেস্টফ্রেন্ড বলে দাবি করে। ওদের রোজই একে অপরের সাথে ফোনে কথা বলে। সোহা ওর আন্টির সাথে ফোনে কথা বলার সময় প্রত্যেকদিনই জিজ্ঞেস করে যে, আন্টি আপনি কি আজ আসবেন আমাদের বাসায়। যখন আন্টি বলে যে, আসবনা তখন তো ওর খুব মন খারাপ হয়। আর যখন আন্টি বলে যে, আসব তখন তো ওর খুশির সীমা থাকে না। ওকে যদি তখন বলা হয় যে, তুমি কতটুকু খুশি হয়েছো ও বলে, অনেক অনেক অনেক খুশি হয়েছি। সোহাকে যদি ওর আন্টি প্রশ্ন করে যে, তোমার বেস্টফ্রেন্ড কে? তখন সে বলে, আমার বেস্টফ্রেন্ড আমার আন্টিমনি। তখন সোহা আবার ওর আন্টিকে প্রশ্ন করে যে, আপনার বেস্টফ্রেন্ড কে? তখন আন্টি বলে আমার বেস্টফ্রেন্ড আমার সোনামনি।
আন্টি যখন ওদের বাসায় যায় তখন সে আন্টির কাছে রোজ বায়না করে যে আন্টি আজকে থেকে যান না রাতে। মাঝে মধ্যে ওর বায়না আন্টিমনিকে রাখতেই হয়। এর জন্য ওর আন্টিকে বাসায় অনেক বকাও শুনতে হয়। তবুও আন্টি ওর বায়না পূরণ করে। আন্টি ওকে খাইয়ে দেয়, নখ কেটে দেয় ওর চুল আঁচড়ে দেয় ইত্যাদি। আর সে যখন ঘুমাতে যায় তখন ওর আম্মু বলে যে তুমি কার সাথে ঘুমাবে তখন সে বলে, আমি আন্টিমনির সাথে ঘুমাবো। ঘুমাতে গেলে তার আন্টিমনিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। আর আন্টি যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে তার আন্টিমনিকে চুমু দেয় অনেক গুলো এবং আন্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, আন্টির উপর কাঁথা ঠিক করে দেয়। তখন ওর আম্মু ওকে বলে ও কি তোমার মেয়ে। তখন ও খুব হাসে। আন্টি আর সোহা এক হলে সে কি কথা। ওরা এক জায়গায় হলেই ওদের অনেক অনেক কথা হয়। সারাদিন ওরা নানান কথা বলতে বলতে পার করে দিতে পারে আর সময় ও কত দ্রুত চলে যায় বুঝতেই পারে না তারা। আন্টি যখন নিজের বাসায় চলে যায় তখন তার সে কি মন খারাপ হয় আর কান্না শুরু করে দেয়। এই হলো ওদের অদ্ভুত বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা।