সিলেট নগরীতে ৬টিসহ ৫১টি স্থানে বসবে হাট
বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চলে কোরবানির পশুর ঘাটতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২২, ৫:২৮:১৫ অপরাহ্ন

নূর আহমদ
সিলেটে বন্যায় প্রাণীসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। নগরীসহ সিলেটের ৫১টি স্থানে পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, সিলেটে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩টি। এর বাইরে সিলেটে পারিবারিকভাবে পালিত আরও দেড় লাখ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। তবুও সিলেট বিভাগে ঘাটতি রয়েছে কোরবানির পশুর। বন্যাসহ চলমান দুর্যোগে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে বরাবরের মতো অন্য জেলাগুলো থেকে পর্যাপ্ত গরু হাটে এলে এই ঘাটতি পূরণ হবে। অন্যদিকে, বরাবরের মতোই প্রধানতম হাট কাজিরবাজারে কোরবানির গরু উঠতে শুরু করেছে।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, বিভাগে ১৪ হাজার ৯৭১ জন খামারির কাছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে ষাঁড় ৯১ হাজার ৩৭৫টি, বলদ ২৭ হাজার ৪৬৬টি, গাভী ২০ হাজার ৪৯০টি, মহিষ ৮ হাজার ১০৬টি, ছাগল ৬২ হাজার ৬১৩টি এবং ভেড়া ২৯ হাজার ১২৩টি রয়েছে। এছাড়া, এবার বিভাগে পারিবারিকভাবে পালনকৃত ১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৩টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। গত বছরের ঈদে বিভাগে পশু জবাইয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এবার সিলেট বিভাগে কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার ১৮০টি। ফলে বিভাগে এবার ১৪ হাজার ৭৭৪টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
অপরদিকে, চলমান বন্যায় প্রাণীসম্পদ বিভাগের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ১শ’ ২০ কোটি টাকারও বেশি। গত দেড় সপ্তাহ ধরে চলা বন্যায় অনেক গবাদি পশু ভেসে গেছে বলে দাবি খামারিদের। অনেকের কোরবানির জন্য পালন করা পশুও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। অবশ্য সিলেট বিভাগীয় প্রণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বীকার করেছেন প্রাণীসম্পদ বিভাগের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে কোরবানিযোগ্য পশুখাতে এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য তাঁর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৭৭ হাজার ৩৯২টি। এরমধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভী আছে ৪৩ হাজার ৭৭৪টি, মহিষ ৪ হাজার ৬৫২টি ও ছাগল-ভেড়া ২৮ হাজার ২৮ হাজার ৯শ’ ৬৬টি।
মৌলভীবাজারে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ৩৯ হাজার ১৩টি। পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভী আছে ১৯ হাজার ৪১৭টি, মহিষ ১ হাজার ৭৫৭টি, ছাগল-ভেড়া রয়েছে ১৭ হাজার ৮০৯টি।
হবিগঞ্জে মোট পশুর সংখ্যা ৫৮ হাজার ১০৯টি। এদের মধ্যে ষাঁড় বলদ, গাভী আছে ৩২ হাজার ৩১২টি, মহিষ রয়েছে ৭৩৩টি, ও ছাগল-ভেড়া রয়েছে ২৫ হাজার ৬৪টি সুনামগঞ্জে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ৬৯ হাজার ২৮৯টি। এরমধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভী আছে ৪৬ হাজার ৮২৮টি, মহিষ রয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৯৪টি ও ছাগল ভেড়া রয়েছে ২০ হাজার ৬৬৭টি।
সিলেট শহরতলীর খামারি ফখরুল ইসলাম বলেন, তার খামারে অর্ধশতাধিক কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা অনেক ক্ষতি করেছে। গরুগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। তবুও তিনি এবার গরুর প্রকৃত মূল্য পাবেন বলে আশাবাদী।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সিলেটে কোরবানির পশুর ঘাটতি রয়েছে। বন্যায় অনেক প্রাণীসম্পদের ক্ষতি করেছে। তবে সেটি খুব একটা প্রভাবে ফেলবে না।
তিনি বলেন, বানভাসী কৃষকদের অনেকেই কষ্ট করে হলেও গরু ধরে রেখেছেন কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য। তবে ছোট বাছুরগুলো গোখাদ্য সংকটে থাকায় অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ছোট গরুগুলো অন্য জেলায় চলে যাচ্ছে। প্রান্তিকভাবে পালিত এসব গরু ও বাইরের জেলা থেকে আগত গরুর মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে, গতকাল বুধবার সিলেটের জেলা প্রশাসন বৈঠক করে সিলেট নগরীসহ ৫১টি জায়গায় পশুর হাটের অনুমতি দিয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, সিলেট নগরীর ৬টি স্থানে এবং জেলার সকল উপজেলা মিলে ৫১টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপনের প্রাথমিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কোথাও কুরবানীর পশুর হাট বসার অনুমতি নেই। কোথাও অবৈধভাবে হাট বসালে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে পুলিশ সব সময় সতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পশুর হাটের নিরাপত্তা পুলিশ নিশ্চিত করবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লা তাহের বলেন, পুলিশ সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছে। পশুর হাট নিয়ে কোন বিশৃংখলা হতে দিবে না।
পশুর হাটের তালিকা
অপরদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী হাটগুলো ইজারা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সিসিক।
ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে সিলেট জেলায় বসছে ৫১টি অস্থায়ী পশুর হাট। এর মধ্যে ছয়টি বসবে সিলেট নগরীতে, বাকি ৪৫টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। সিলেটের জেলা প্রশাসক অস্থায়ী হাটের অনুমোদন দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের অব্যবহৃত জায়গা, চৌকিদেখি পয়েন্ট, ঝালোপাড়া মসজিদ সংলগ্ন জায়গা, মদিনা মার্কেটস্থ নবাবী মসজিদ সংলগ্ন জায়গা, নতুন টুকেরবাজার,মিরাপাড়া আব্দুল লতিফ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ।
অপরদিকে, সিলেট সদর উপজেলায় হাট বসবে দুটি। একটি জালালাবাদ ইউনিয়নের ইসলামগঞ্জ বাজার মাঠ ও কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বলাউরা বাজার।
কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পাড়ুয়া বাজার পার্শ্ববর্তী অস্থায়ী পশুর হাট, ভোলাগঞ্জ মাদরাসা মাঠ, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজনগর নতুন বাজার অস্থায়ী পশুর হাট এবং উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের আদর্শ চরার বাজার পার্শ্ববর্তী মাঠে হাট বসবে।
বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নে মুফতির বাজার, প্রীতিগঞ্জ বাজার, অলংকারী ইউনিয়নের টেরা বটের তল বাজার, রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা নয়াবাজার, পিচের মুখ বাজার, আশুগঞ্জ বাজার, উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংগেরকাছ বাজার মাঠ, বিশ্বনাথ ইউনিয়নের নাজির বাজারের পশ্চিম মাঠ, দেওকলস ইউনিয়নের বাগিচা বাজার, দশঘর ইউনিয়নের মিয়ার বাজারে হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ইউনিয়ন কমপ্লেক্স মাঠ, ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি বাজার, জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের শাহবাগ ক্বাসিমুল উলুম মাদরাসা পয়েন্ট, কাজলসার ইউনিয়নের রতনগঞ্জ গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমি স্কুল ও কলেজ পয়েন্ট, আটগ্রাম লুৎফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ পয়েন্ট, বারঠাকুরী ইউনিয়নের শরীফগঞ্জ চাপঘাট সুন্নী দাখিল মাদরাসা পয়েন্ট, সোনাসার স্টেশন, কসকনকপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন অফিস পয়েন্ট, ওয়াজেদ আলী মজুমদার উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্টে বসবে হাট।
বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের আজিজপুর বাজার, মুরার বাজার, বালাগঞ্জ ইউনিয়নের বালাগঞ্জ বাজার, বোয়ালজুর বাজার, বোয়ালজুর ইউনিয়নের কালিবাড়ী বাজার, পূর্ব পৈলেনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা বাজার ও পূর্ব গৌরিপুর ইউনিয়নের পূর্ব গৌরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার বিয়ানীবাজার পৌরসভা এলাকায় পিএইচজি সরকারি স্কুল মাঠ, মুরাগঞ্জ বাজার, চারখাই ইউনিয়নের চারখাই বাজার সংলগ্ন বাজার, তিলপাড়া ইউনিয়নের আছিরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মাঠ, মুড়িয়া ইউনিয়নের সারপার বাজার, ওহাব আলী মার্কেট সংলগ্ন মাঠ, মাথিউরা ইউনিয়নের ভাটার বাজার, মাথিউরা ঈদগাহ বাজার, নালবহর বাজারে পশুর হাট বসানো যাবে।
গোলপগঞ্জে হাট বসবে পৌরসভা এলাকায় সরকারি মোহাম্মদ চৌধুরী একাডেমি মাঠ, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ঢাকা দক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদরাসা মাঠ। ওসমানীনগর উপজেলা উসমানপুর ইউনিয়নের ময়না বাজার।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার জেলায় ৫১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। নগরে বসবে ৬টি। বাকি ৪৫টি উপজেলা এলাকায় বসবে। আজ (গতকাল শনিবার) জেলা প্রশাসক এসব হাটের অনুমোদন দিয়েছেন।