সিলেট জেলা বিএনপি’র অভিযোগ
বন্যার প্রকৃত চিত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২২, ৬:১০:০৭ অপরাহ্ন

বন্যার মূল কারণ-ইটনা-মিঠামইন রাস্তা ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সমালোচনা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের প্রকৃত বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সিলেট জেলা বিএনপি। তারা এও বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ জেলায় বন্যার মূল কারণ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য নির্মিত ইটনা-মিঠামইন সড়ক। সংবাদ সম্মেলনে বন্যার্তদের না দেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের বিদেশ সফরেরও সমালোচনা করা হয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিলেট জেলা বিএনপি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরের পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজন করা হলো এ সংবাদ সম্মেলনের।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেটে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব সরকারী ভাবে দেয়া হয়েছে-বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক ভিন্ন। বাস্তবে সিলেটের অবস্থা আরো ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের জনৈক নেতার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে তারা এখন সাংবাদিকদের উপরও ক্ষেপেছেন। সাংবাদিকরা সিলেটের প্রকৃত অবস্থা গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন স্বাধীন সাংবাদিকতায়ও হস্তক্ষেপ করতে চায়। তারা সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এ পর্যন্ত ২৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে মর্মে স্বীকার করেছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
আর কত প্রাণহালি হলে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে? -প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বন্যায় বিএনপির কর্মতৎপরতা নিয়ে ঠাট্টা করছেন।
সরকার ও আওয়ামী লীগ-এটি প্রাকৃতি বন্যা বললেও-এটি মানবসৃষ্ট বন্যা বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির বাড়িতে যাবার জন্য হাওরের বুক চিরে নির্মিত হয়েছে ৮৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৭ কিলোমিটার অপরিকল্পিত রাস্তা। এর মধ্যে হাওরাঞ্চল বাঁধ রয়েছে ৩০ কিলোমিটার । শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সুবিধার জন্যই পানিতে হাবু ডুবু খেতে হচ্ছে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা ॥ বানভাসি মানুষকে বিপদে রেখে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সমালেচনা করেন কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেন, বন্যায় সিলেট অঞ্চলে এক দু:সহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্র ৫ ঘন্টার জন্য মঙ্গলবার সিলেট এসেছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফের বিদেশের উদ্দেশ্যে ১৩ দিনের জন্য উড়াল দেন মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের বিপদের মধ্যে মন্ত্রী আমোদ-ফূর্তির মোডে আছে।
বিএনপি পক্ষ থেকে বলা হয়, শতাব্দীর এই ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের মানুষ অসহায় হয়ে চরম দুর্ভোগের মাঝে সময় পার করছে। বিএনপি’পর পক্ষ থেকে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ২শ’ পরিবারকে ত্রাণ ও শুকনো খাবার, ১ লক্ষ ৯৩ হাজার জনকে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং ১১ হাজার ৩ শত পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বন্যা শুরুর পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তিনি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ ও বন্যা কবলিত এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, বিএনপি নেতা এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মাহবুবুল হক চৌধুরী, এডভোকেট সাঈদ আহমদ, কোহিনুর আহমদ, এডভোকেট মুজিব, রফিকুল ইসলাম শাহপরান, শাকিল মোর্শেদ, এডভোকেট মোস্তাক আহমদ ও এডভোকেট আল আসলাম মুমিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।