বাগদত্তা স্ত্রীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসে পর্নোগ্রাফী মামলায় গ্রেফতার হলেন প্রবাসী যুবক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩:১৩:৫০ অপরাহ্ন

নূর আহমদ::
প্রথম বিয়ের পরিসমাপ্তি হতে না হতেই নতুন বাগদত্তা স্ত্রীকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে খেতে এসে ধরা পড়ে এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবক এখন শ্রীঘরে। প্রথম স্ত্রীর দায়ের করা পর্নোগ্রাফী ও যৌতুক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। প্রবাসী আশরফ আলী বিশ্বনাথ উপজেলার সিঙ্গেরকাছ-এর সিংরাউলী গ্রামের আরশ আলীর পুত্র। গত বৃহস্পতিবার রাতে আশরফ আলী গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে প্রথম স্ত্রীর সাথে থাকাকালীন সময়ের অন্তরঙ্গ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জিম্মি করে নেয়ার নানা চেষ্টা কাহিনী।
সিলেট নগরীর কুয়ারপার (১৯ ইঙ্গুলাল রোড) এর বাসিন্দা মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল বিশ্বনাথ উপজেলার সিঙ্গেরকাছ এর সিংরাউলী গ্রামের আরশ আলীর পুত্র আশরফ আলীর সাথে তার মেয়ে আয়শা বেগমের পারিবারিকভাবে ধুমধাম করে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে কারো কোন চাহিদা নেই বলে জানালেও বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর বদলে যায় আশরফ আলী। নগরীর দক্ষিণ সুরমার একটি অভিজাত পার্টি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার দাবি জানায় সে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার আগেই টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কনে পক্ষ বরের চাহিদামত সেন্টারে না করে নগরীর আরামবাগের সমমানের অন্য একটি অভিজাত পার্টি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করেন। বিয়ের অনুষ্ঠান পর্যন্ত সম্পর্ক ভালো চললেও ফেরা যাত্রার পর বিয়ের আগের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আয়শা বেগমকে মানসিক নির্যাতন শুরু করে আশরফ আলী। যদি স্বামীকে চায়, তাহলে সে যেন কখনো বাবার বাড়িতে না আসে এমন শর্ত দিয়ে বসে আয়শা বেগমকে।। এরপর থেকে শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন।
গিয়াস উদ্দিনের দাবি, মেয়ে জামাই আশরফ আলীর বাবা-মাসহ পরিবারের সকল সদস্য প্রবাসে। বিয়ের এক মাস পর ছেলে বিদেশে যাওয়ার সময় বাসায় দূরসম্পর্কীয় দুই পুরুষ আত্মীয়কে রেখে মেয়েকে বাবার বাড়িতে না দিয়ে চলে যায়। এক পর্যায়ে মেয়ের মা ওই বাসায় গিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। তখন মেয়ের মায়ের সাথেও দুর্ব্যবহার করে আশরাফ। আয়শাকে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে মেয়ে আয়শাকে নিজেদের বাসায় নিয়ে আসতে বাধ্য হন গিয়াস উদ্দিন।
অন্যদিকে, স্ত্রীকে বাবা-মাকে ছেড়ে আসতে পারলে সংসার করবে বলে সাফ জানিয়ে দেয় আশরফ আলী। সংসার টিকানোর সার্থে স্বামী দেশে আসলে তার ডাকে সাড়া দিয়ে তার সাথে চলে গিয়েছিলেন আয়শা। এরপর সাত মাস বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ না করে বিশ্বনাথে লামাকাজী এলাকায় স্বামীর স্বজনদের সাথে অবস্থান করেন। তাকে সেখানে রেখেই চলে যান স্বামী। কিন্তু মেয়ের পরিবারকে জানানো হয়, তারা স্বামী স্ত্রী মালয়েশিয়া গেছেন বেড়াতে। সর্বশেষ সাত মাস পর লামাকাজী এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় আয়শাকে। ওই বাসায় অবস্থানকালে সার্বক্ষণিক বাসার দরজা তালা দিয়ে রাখা হতো। আশরফ আলী তার স্বজনদের মাধ্যমে খাবার পাঠাতো।
আয়শার বাবা গিয়াস উদ্দিন এর দাবি, সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি মীমাংশার জন্য বসেছিলেন। তবে, আশরফ কথা রাখেননি। নগদ কাবিনের প্রায় ১০ লাখ টাকা স্ত্রীকে বুঝিয়ে দুই দফায় সে টাকা আশরাফ নিয়ে গেছে। নিজেদের দেয়াসহ প্রায় ২০/২৫ ভরি স্বর্ণালংকারও নিয়ে গেছে। স্বামীর এই মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার মেয়ের পক্ষ থেকে তালাকনামা পাঠানো হয়। দেশে এবং বিদেশে নোটিশ পাঠানোর পরও তাতে সে সাড়া দেয়নি। উল্টো তালাকনামা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আশরফ আলী। স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের ফোন দিয়ে হুমকী দিতে থাকে। স্ত্রী কিভাবে তাকে তালাক দেয় দেখে নেয়ার হুমকী দিতে থাকে অব্যাহতভাবে। মেয়ের ভাই বোনকে অপহরণ করে নিয়ে প্রাণে হত্যারও হুমকী দেয়। সর্বশেষ মেয়ের বড় ভাইয়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে মিলনের অন্তরঙ্গ ভিডিও পাঠিয়ে ভাইরাল করার হুমকী দেয় আশরফ আলী। এমনকি ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজনদের মোবাইলেও এই ভিডিও পাঠায়। এরপর স্ত্রী বাদী হয়ে কতোয়ালী থানায় পর্নোগ্রাফি ও যৌতুক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৪১ (২৫/১০/২০২০) ইং।
অপরদিকে, তার স্ত্রী তালাক দেয়ার পর থেকে আশরফ আলী একাধিকবার দেশে আসতে থাকেন। সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ দেয়ার পরও তাতে সাড়া না দিয়ে নতুন সংসার করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। অন্যদিকে পুলিশও তাকে খোঁজছিলো। তবে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে লম্বা দাড়ি রেখে এবার দেশে ফিরেন আশরফ আলী। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের নতুন বাগদত্তা স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন নগরীর জিন্দাবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে । এসময় তার প্রথম স্ত্রীর এক স্বজনের চোখে তা ধরা পড়ে। খবর পেয়ে অন্য স্বজনরাও ছুটে আসেন।
গিয়াস উদ্দিনের দাবি, তারা রেষ্টুরেন্টে অপ্রীতিকর কিছু ঘটাতে চাননি। আশরফ আলীকে চিনতে পেরে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে আশরফ আলীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
মামলার বাদী আয়শা বেগম দাবি করেন, এমন কোন মানসিক নির্যাতন নেই যা আশরফ আলী তাকে করেনি। শারীরিক নির্যাতনও করেছে একাধিকবার। তারপরও সংসার করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবুও তার দিল গলেনি । আর কোন মেয়ের যেন ক্ষতি না করতে পারে এরজন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চান তিনি।
আশরফ আলীর আপন মামা মতিউর রহমান জানান, তার ভাগনার আচরণ অনেকটা মাদকাসক্তের মতো। মাঝে মাঝে তার উপরও চড়াও হয়। কখন দেশে আসে, আবার কখন যায় তা জানা যায়না। আয়শার সাথে বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি সাথে ছিলেন। চেষ্টা করেছেন দুই পক্ষকে মিলিয়ে নেয়ার। কিন্তু তার ভাগনা আশরফের আচরণ উগ্র। তিনি নিজেও বাধ্য হয়ে প্রাণের ভয়ে আশরফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান।
কতোয়ালী থানার এস আই শেখ মিজানুর রহমান বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরফ আলী পর্নোগ্রাফি মামলার পলাতক আসামী। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কতোয়ালী থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদ জানান, আটক আশরফ আলীর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার পলাতক আসামী সে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।