বালাগঞ্জে ৩ বছরেও শেষ হয়নি ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’র নির্মাণ কাজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ৩:২৫:০৪ অপরাহ্ন

মো. জিল্লুর রহমান জিলু, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে :
বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মিতব্য ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’র নির্মাণ কাজ প্রায় ৩ বছরেও শেষ হয়নি। জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ শুরু হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মাত্র কয়েকটি পিলার ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় উপজেলাবাসীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ইতোমধ্যে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী এএসএমজি কিবরিয়া জানিয়েছেন, নতুন করে সেতুর ডিজাইন প্রস্তুত করতে হবে। আগের ডিজাইনটি ‘উপযুক্ত নয়’।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল উপজেলা সদরের স্থানীয় ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে সেতুর ভিত্তিস্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এবং সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। এসময় বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবদাল মিয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হকসহ জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ বিপুল সংখ্যক স্থানীয় নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৬৭লাখ টাকা। প্রায় ১শ’ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪ মিটার প্রস্ত নির্মিতব্য এ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে পড়ে। সেতু নির্মাণ কাজ বর্তমানে ‘প্রায় পরিত্যক্ত’ পড়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণকৃত ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’ আদৌ হবে কি-না কেউ সঠিক বলতে পারছেন না। এ নিয়ে উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, উপজেলা সদরের বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর এ সেতু না থাকায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডসহ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর এবং দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শুধু তাই নয়, সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের শেষ প্রান্তে ওই সেতু না থাকায় বালাগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলাবাসীকেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়ক পাড়ি দিয়ে অবশেষে খেয়া নৌকায় উপজেলা সদরে পৌঁছতে হয়। এ কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আর যানবাহন নিয়ে উপজেলা সদরে যেতে হলে পার্শ্ববর্তী ওসমানীনগর উপজেলা ঘুরে বালাগঞ্জে পৌঁছতে হয়। এতে বাড়তি সময় এবং অর্থের অপচয় হয়ে থাকে। তাই বড়ভাঙ্গা নদীতে পাকা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সকল জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন বালাগঞ্জের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা।
এব্যাপারে আলাপকালে বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ মতিন, বালাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. জুনেদ মিয়া প্রমুখ বলেন, বড়ভাঙ্গা নদীতে পাকা সেতু না থাকায় বালাগঞ্জ সদরসহ পার্শ¦বর্তী দেওয়ান বাজার ও পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার নাগরিক উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য লোকন মিয়া, দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আলমসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ বড়ভাঙ্গা নদীতে সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এব্যাপারে আলাপকালে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে সেতুর কাজ হচ্ছে না।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী এএসএমজি কিবরিয়া বলেন, কাজটি মূলত উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে শুরু হয়েছিল। তবে, সময়ের ব্যবধানে হয়ত সেতুটির রি-ডিজাইন করতে হবে।
এদিকে, দীর্ঘদিনেও ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৪নং এবং ৩নং ওয়ার্ডবাসীর উদ্যোগে গত সোমবার এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।