বিশ্বকাপ ফুটবল: অঘটনে বিশ্বকাপ শুরু আর্জেন্টিনার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ৫:০৯:২৯ অপরাহ্ন

পেনাল্টি মিসে পোল্যান্ডের জয় হাতছাড়া ॥ ডেনমার্ককে রুখে দিলো তিউনিসিয়া
স্পোর্টস ডেস্ক : রাশিয়া বিশ্বকাপ ভরাডুবির পর ২০১৯ কোপা আমেরিকায় ছিল হতাশা। সব মিলে একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া দল ছিল আর্জেন্টিনার। সেই দলটাই অবিশ্বাস্য উত্থান দেখেছিল লিওনেল স্ক্যালোনির ছোঁয়ায়। টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডের পাশাপাশি দূর হয় ট্রফি খরা। মেসির শেষ বিশ্বকাপে তাই স্মরণীয় কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন ছিল আলবিসেলেস্তেদের। কিন্তু কোথায় কী! সেই দলটার অপরাজেয় যাত্রার লাগাম টেনে ধরে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিয়েছে সৌদি আরব। আর্জেন্টিনা হেরেছে ২-১ গোলে!
লুসাইল স্টেডিয়ামে ৪৮ মিনিটে রক্ষণের দুর্বলতায় হজম করা গোলটাই আর্জেন্টিনার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় মূলত। দ্বিতীয় গোল তুলে নেওয়ার পর সৌদির আঁটাসাটো রক্ষণের সামনে মেসিরা আর গোলমুখই খুলতে পারেনি। সেজন্য সৌদির দুর্দান্ত রক্ষণের পাশাপাশি গোলকিপারকেও অবদান দিতে হবে। ৮৪ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে মেসি হেড করেছিলেন। সেটি জমা পড়েছে আল ওয়াইসের নির্ভরযোগ্য হাতে। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় দেখা গেছে তার বীরত্ব। অথচ প্রথমার্ধে আধিপত্য ছিল আর্জেন্টিনারই। তাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৪৮ ধাপ পিছিয়ে থাকা দলটার বিপক্ষে দ্বিতীয় মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার। ১২ গজ দূর থেকে মেসি জোরালো শট করেছিলেন। দারুণ রিফ্লেক্সে সেটি সেভ করেন সৌদি গোলকিপার আল ওয়াইস। তবে ১০ মিনিটে কোনও ভুল হয়নি। ভার রিভিউর পর পেনাল্টি থেকে জাল কাঁপান মেসি। তার পর হাইলাইন ধরে খেলার চেষ্টা করেছে সৌদি। তাতে বিপদটা বাড়ে আর্জেন্টাইনদেরই। বার বার অফসাইডে বাতিল হয়েছে তিন গোল। চাপ ধরে রেখে মেসি দ্বিতীয় গোল পেয়েছিলেন ২২ মিনিটে। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়ায় বাতিল হয়ে যায় তা। ২৮ মিনিটে মার্তিনেজও জাল কাঁপিয়েছিলেন। এবারও তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় অফসাইড! ৩৪ মিনিটে আবার জাল কাঁপান মার্তিনেজ। পুনরায় অফসাইডের ফাঁদে পড়ে গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার আধিপত্যের ম্যাচে অফসাইডের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো- ৭টি। তার পর তো ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে গেলো দ্বিতীয়ার্ধেই। ৪৮ মিনিটে সৌদি আরবকে সমতায় ফেরান সালেহ আল সেহরি। আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের ভুলে গোলপোস্টের নিচে একা দাঁড়ানো মার্তিনেজের করার কিছুই ছিল না। দুর্বল রক্ষণের ফল হাতেনাতে মেলে ৫৩ মিনিটেই। স্কোরলাইন ২-১ করে সৌদি আরব মেসিদের পরাজয়ের সব আয়োজনই সম্পন্ন করে ফেলে তখন। আর্জেন্টিনার রক্ষণকে পুরোপুরি পরাস্ত করেন সালেম আল দাওসারি। বাঁকানো শটে দূরের জাল কাঁপান সৌদি উইঙ্গার।
তালগোল পাকানো অবস্থায় আর ম্যাচে ফেরার মতো অবস্থায় দেখা যায়নি মেসি-ডি মারিয়াদের। ৬২ মিনিটে ডি মারিয়ার ভাসানো বল মাথায় ছোঁয়াতে পারেননি মার্তিনেজ। পরের মিনিটেও দুর্দান্ত সেভে আর্জেন্টিনার হতাশা বাড়িয়েছেন সৌদি গোলকিপার। এর পর তো তাদের আঁটোসাটো রক্ষণে মেসিরা আর কুলিয়েই উঠতে পারেনি।
লেভানদোভস্কির পেনাল্টি মিসে পোল্যান্ডের জয় হাতছাড়া
সুযোগ এসেছিল একদমই খেলার ধারার বিপরীতে। বিশ্বকাপে একটি গোলের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা রবের্ত লেভানদোভস্কি কাজে লাগাতে পারলেন না সেই সুবর্ণ সুযোগও। পোলিশ ‘গোলমেশিন’ মিস করলেন পেনাল্টি! বেঁচে গেল মেক্সিকো।
দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ মঙ্গলবার ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচটি গোল শূন্য ড্র হয়েছে।
বল দখল, আক্রমণ, গোলের সুযোগ তৈরি, গোলের জন্য শট, লক্ষ্যে শট সব মাপকাঠিতেই এগিয়ে ছিল মেক্সিকো। তবে সবচেয়ে নিশ্চিত সুযোগটা তো পেয়েছিল পোল্যান্ডই। কিন্তু গিয়েরমো ওচোয়া বিশ্ব আসরে আরও একবার দেখালেন, গোলরক্ষক হিসেবে কতটা অসাধারণ তিনি। ঠেকিয়ে দিলেন সময়ের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন- লেভানদোভস্কির স্পট কিক। খেলায় প্রাণের অভাব ছিল না। আক্রমণ ও পাল্টা-আক্রমণও ছিল যথেষ্ট। তবে মাঝমাঠ দখলে এগিয়ে থাকায় আক্রমণ বেশি করে মেক্সিকো। চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত তারা। ইয়েরভিং লোসানোর ক্রসে দূরের পোস্টে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আলেক্সিস ভেগা। ২৬তম মিনিটে আবার সুযোগ পায় কনকাকাফ অঞ্চলের দেশটি। এক্তর এররেরার ক্রসে একটুর জন্য ভেগার চেষ্টা থাকেনি লক্ষ্যে। বেঁচে যায় পোল্যান্ড। দুই মিনিট পর প্রায় এগিয়েই যাচ্ছিল মেক্সিকো। লুইস চাবেসের ক্রস একটুর জন্য নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি হেসসু গায়র্দো। পোল্যান্ডের একজন ক্লিয়ার করতে গিয়ে বিপদ প্রায় ডেকেই এনেছিলেন। তার ভাগ্য ভালো বল গায়ার্দোর পায়ে লেগে পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল পোল্যান্ড। ৫৮তম মিনিটে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে লেভানদোভস্কির স্পট কিক ঠেকিয়ে দিয়ে মেক্সিকোর ত্রাতা ওচোয়া! এতে বিশ্ব আসরে গোলের জন্য পোলিশ অধিনায়কের অপেক্ষা আরও বাড়ল। ফিরতি বলেও সুযোগ ছিল; কিন্তু পোল্যান্ডের দুইজন শট নিতে ব্যর্থ হন। লেভানদোভস্কিকেই মেক্সিকোর এক্তর মোরেনো ফাউল করায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। ৬৪তম মিনিটে পোল্যান্ডের ত্রাতা স্ট্যাসনি। এদসন আলভারেসের ক্রসে মাথা ছুঁয়ে একটু দিক পাল্টে দেন হেনরি মার্তিন। তবে তৎপর ছিলেন ইউভেন্তুস গোলরক্ষক। ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন হেড। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে এরপর দারুণ জমে ওঠে লড়াই। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে নিজেদের ততটা মেলে ধরতে পারেনি কোনো দলই। জমাট রক্ষণ ভাঙতে না পেরে আচমকা শটে গোলের চেষ্টা করে। সেগুলো খুব একটা ভাবাতে পারেনি কোনো গোলরক্ষককে। ‘সি’ গ্রুপের একটি করে ম্যাচ শেষে ৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ সৌদি আরব। এক পয়েন্ট নিয়ে নিয়ে পরের দুটি জায়গায় মেক্সিকো ও পোল্যান্ড। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা শূন্য পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে।
ডেনমার্ককে রুখে দিল তিউনিসিয়া
পরিবেশবান্ধব স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে কাতার। শীতকালীন বিশ্বকাপ হলেও মরুর দেশ কাতার ইউরোপের প্রতিনিধিদের জন্য গরমই। যে কারণে স্টেডিয়াম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। তবু শীত ও গরমের দেশের মধ্যে পার্থক্য থেকেই যায়।
কন্ডিশন অনুযায়ী, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো সুবিধা একটু বেশি পাবে। ডাচদের কাছে হারলেও সেনেগালের দুর্দান্ত লড়াই। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের রূপকথার জয় ওই কথাই বলছে। এবার উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া রুখে দিল কাতার বিশ্বকাপে ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে পা রাখা ডেনমার্ককে।
পুরো ম্যাচ ডেনিসরা নিয়ন্ত্রণ করেছে। ম্যাচে ৬৮ শতাংশ বলের দখল রেখেছে নিজেদের পায়ে। গোল মুখে পাঁচটি গোল হওয়ার মতোই আক্রমণ করেছে। কিন্তু ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০ এ থাকা ডেনিসরা ৩০ নম্বরে থাকা তিউনিসদের বিপক্ষে গোল করতে পারেনি। গোল মুখে মাত্র একটি শট নেয়া তিউনিসিয়ার জন্য এই ড্র ও একটি পয়েন্ট তাই বড় প্রাপ্তি।
অন্যদিকে ড্র করে একটি পয়েন্ট পেলেও ডেনমার্ক খেলোয়াড়দের চোখে মুখে ছিল স্পষ্ট হতাশা। দলটির অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ও গোলরক্ষক কাসপার স্মাইকেল যেমন কিছুক্ষণ উপরের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে থেকে হতাশায় মাথা নাড়লেন। যেন নকআউটের কোন ম্যাচ হেরেছেন তারা।