সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিশ্বব্যাংক কিসের দাতা লোন নিই-শোধ করি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২২, ৬:২৮:৫৪ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক : পদ্মা সেতুর নামে স্যাংকশন হওয়া বিশ্ব ব্যাংকের সেই টাকা উদ্ধার করে বাংলাদেশ অন্য প্রজেক্টে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেই টাকাটা বাংলাদেশের নামে স্যাংকশন হবে সেই টাকাটা নষ্ট করার কোনো রাইট তাদের নেই। অর্থাৎ পদ্মা সেতু থেকে তারা টাকা বন্ধ করেছে, টাকা কিন্তু আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এই টাকা অন্যান্য প্রজেক্টে আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি। এটা কিন্তু করা যায়। এটা আমাদের অনেকে জানে না। আমি জানি না, কেন জানে না। ’
কোনো দেশের নামে বিশ্ব ব্যাংক কোনো টাকা বরাদ্দ করলে সেই টাকা সেই দেশকেই দিতে হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের নামে যে টাকা হবে সেটা টাকা তাকে দিতে হবে, সে বাধ্য। কাজেই একটা প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলে সেটা চলে যাবে সেটা কিন্তু হয় না। ’
বিশ্ব ব্যাংক কোনো দাতা সংস্থা নয় জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘অনেকে বলে বিশ্বব্যাংক দাতা। বিশ্বব্যাংকের আমরা কিন্তু অংশীদার। তারা কোনো অনুদান দেয় না। আমরা লোন নিই। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ, আমাদের যারা কাজ করে তারা এটা কেন মাথায় রাখে না যে এরা কোনো দাতা না। আমরা তাদের কাছে ভিক্ষা নিই না। ব্যাংকের একটা অংশীদার হিসেবে আমরা লোন নিই এবং সুদসহ সেই লোন পরিশোধ করি। আমরা কিন্তু সেখান থেকে লোন নিই। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ওই দাতা দাতা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। কিসের দাতা, এরা উন্নয়ন সহযোগী। আমি লোন নিই সুদসহ পরিশোধ করি। সুদের হার কম। এটা ঠিক। কিন্তু সুদ দিয়ে তো আমরা টাকা পরিশোধ করছি। আমরা তো ভিক্ষা নিচ্ছি না। আমরা ঋণ নিই এবং শোধ করি। এই-টুকু সুবিধা স্বল্প সুদ। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের একটা ধারণা বা মানসিকতা আছে যে আমরা অন্যের টাকা ছাড়া কিছু করতে পারি না। আমাদের মানসিকতার এই দৈনতাটা ছিল।’
যারা পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনামূলক নানা কথা বলেছেন, সেসবের কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদের সেই সব বক্তব্যের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনার দায়ভার তাদের কাঁধেই অর্পণ করেন। এখানে তাঁর কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই উল্লেখ করে বরং তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধন্যবাদ জানাই এই কারণে-কেননা এই ঘটনা ঘটেছিল বলেই আজকে সাহস নিয়ে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে আজকে বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশের অনেকেরই একটা মানসিকতা ছিল যে আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই পরনির্ভরশীলতা এবং পরমুখাপেক্ষিতাই আমাদের মাঝে ছিল, একটা দীনতা ছিল।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রচলিত প্রবাদের উল্লেখ করে বলেন, ‘নিজের ভার ভাল না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কি?’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন যে বন্ধ করেছিল সেটাতো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচণায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক তহবিল প্রত্যাহার করে নেয়ার পরে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই অচলায়তন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, বাংলাদেশ যে পারে সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি, এতেই আমি খুশী।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ বা এর কাজের গুণগত মান নিয়ে কোন আপোষ করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২৫ তারিখে আমরা পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবো, আমি দেশবাসী সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কেননা, তাদের সাহসে সাহসী হয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উৎসব সবাই করবেন কিন্তু প্রত্যেকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করবেন এবং নিয়ম মানবেন এবং কোথাও কোন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন।
তিনি বলেন, যার যার জায়গা থেকে যেমন ভাবে হোক এই উৎসবে সবাই সামিল হবেন-এটা আমাদের মর্যাদার বিষয় যে আমরাও পারি। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি। কাজেই সেভাবেই সবাই উৎসবে সামিল হবেন।
তিনি এ সময় সকলের মঙ্গল কামনা করে সকলের দোয়া চান বাংলাদেশ যাতে বিশ্বে এভাবেই মাথা উঁচু করে চলতে পারে।
সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন । সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।