ভারত : ঝুঁকিতে উদারনৈতিক গণতন্ত্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩:৪৭:২৭ অপরাহ্ন

অ্যাডভোকেট আনসার খান
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে ভারতে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরও উত্থান ঘটতে শুরু করেছিলো, যা ভারতীয় উদার গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, বহুত্ববাদী সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশটাতে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের বড়ধরণের উল্লম্পন লক্ষ্য করা গেছে। হিন্দুত্ববাদীতায় বিশ্বাসীরা যুক্তি দেখায় যে, ভারতীয়দেরকে-হিন্দুজাতি হওয়া উচিত। ফল স্বরূপ, মুসলিম বিদ্বেষী বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান করাসহ সংখ্যালঘু জনগণের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার ঘটনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদ একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে প্রচার ও গ্রহণ করে ক্ষমতাসীন বিজেপি জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে সক্ষম হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির জয় পাওয়া এবং নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করায় দেশটাতে হিন্দুত্ববাদীতা রাজনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলো।
তবে বিজেপির উত্থানের শুরুটা মূলত ১৯৯৯ সাল থেকে। ১৯৯৯ সালে বিজেপি একটা জোটের নেতৃত্বে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেছিলো। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স বা এনডিএ, নামের এ জোট ২৪টা আঞ্চলিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছিলো এবং বিজেপি ছিলো জোটের প্রধান দল। একারণে সরকারের নেতৃত্ব বিজেপির হাতে ছিলো। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বিজেপি সারা ভারতে তার মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো, যা এটাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
উগ্র ডান চরমপন্থীসংগঠনগুলো, বিশেষকরে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আর এস এস) এর ছায়ায় বছরের পর বছর ধরে যত্ন করে বিজেপির ভিত্তি তৈরি করার ফল হচ্ছে বিজেপির ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া, যা এখন শক্তভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে বিজেপিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দলটা পরবর্তীতে কোয়ালিশন না করেই এককভাবে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলো ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলো। তাই ভারতের বর্তমান পার্লামেন্টে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই।
বিজেপির বড়ধরণের বিজয় অর্জনের ফলে শতাধিক বছরের পুরানো দল জাতীয় কংগ্রেসসহ প্রগতিশীল দলগুলো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায়। সর্বভারতীয় পর্যায়ের তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত ভারতের জাতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় কংগ্রেস তার এতোদিনকার গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। জনগণের নিকট ক্রমেই তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মূখে পড়েছে। কংগ্রেস পার্টি যতোই দূর্বল হতে থাকে, বিজেপি ও উগ্র ডানপন্থার সংগঠনগুলো ততোটাই শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সূযোগ পেয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের রাজনৈতিক চেহারা উপস্থাপন করে, যেটাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি বা হিন্দু হওয়ার মূলত্ব হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী আদর্শ হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের জাতীয় পরিচয় দাবি করতে শুরু করে। এতে করে ভারতের ১৫০ মিলিয়ন মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দেখা দেয়।
মোদী ও বিজেপির ভারতীয় রাজনীতিতে একক উত্থানের ফলে উদারনৈতিক গণতন্ত্র, ধর্মীয় সম্প্রীতিসম্পন্ন বহুত্ববাদী সমাজ, সেক্যুলার সংস্কৃতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ভারত এখন প্রবল রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। বিজেপির উগ্র ডানপন্থার ছোবলে ভারতের সেক্যুলার সংবিধান, ধর্মীয় সম্প্রীতি, উদার গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে পড়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের পর্যায়ে পর্যবসিত হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় ভারত এখন হিন্দুত্ববাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবং ভারতের উদারগণতন্ত্র, বহুত্ববাদী সমাজ, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা, সেক্যুলারিজম এবং সংবিধানের মূল চেতনা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। তবে, হিন্দুত্ববাদীরা যতটুকু সংঘটিত ও সুসংহত, উদারপন্থী গণতন্ত্রীরা ঠিক ততটাই বিভাজিত ও দূর্বল। তাই সারা ভারতে হিন্দুত্ববাদের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে জোরেশোরে।প্রায় প্রতিটা রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত যতটা না উন্নত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দেশটা ব্যাপকভাবে মেরুকৃত হচ্ছে, প্রগতিশীল শক্তিগুলো দূর্বল ও শক্তিহীন হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রাধান্যতা (ম্যাজরিটারিয়ানিজম) প্রবল হচ্ছে রাষ্ট্র ও সমাজে, যেখানে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়ছে, তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবছে। ভারতের ইকো সিস্টেমটা ম্যাজেরিটারিয়ান ধর্মীয় রাজনীতিকে একটা প্রধান অবস্থান দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকগণ।এটা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ভারতীয়দের আচরণে প্রতিফলিত হচ্ছে, এরা উগ্র জাতীয়তাবাদ ও কট্টরপন্থার দিকে ঝোঁকেছে এবং সংবেদনশীল ঘৃণায় জড়িয়ে পড়ছে।
হিন্দুত্ববাদী দর্শনকে ডানপন্থার চরমরূপ, হিন্দুত্ববাদ রক্ষণশীলতার চরমরূপ এবং প্রায় ফ্যাসিববাদী চরিত্রের বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। কেননা, এটা ধ্রুপদী অর্থে, – এক জাতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রাধান্যতা ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের ধারণাকে অনুসরণ করে। হিন্দুত্ববাদ তাই স্বাভাবিকভাবেই নৃতাত্তি¦ক সংস্কৃতি, সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়কে ঘৃণা এবং অবজ্ঞা করে।
একসময় দক্ষিণ এশিয়া ও বিস্তৃত বিশ্বে ভারতকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য আদর্শ হিসেবে দেখা হতো, অথচ বিজেপির শাসনে এটা একটা সিনক্র্যাটিক জাতি হিসেবে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত কোনো অর্থেই আর ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ নয় বলে মনে করা হয়। বৃহত্তর উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে পরিচয় ছিলো, সেটাও হুমকিতে পড়েছে। ম্যাজরিটারিয়ান (বৃহত্তরবাদী) হয়ে ওঠার, হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জাতি সত্তায়ও সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকে প্রভাবিত করবে,ডানপন্থা ও উগ্রবাদীতাকে উসকে দিবে, যা আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা।
বিজেপির উত্থানের সাথে উগ্র ডানপন্থার উত্থান, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ও সর্বভারতে তার বিকাশ এক সূত্রে গাঁথা। আর এর সবকিছুর মূল নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। উগ্রবাদী চরম ডানপন্থী সংগঠনগুলো দীর্ঘ সময়ধরে প্রস্তুতি নিয়েই মোদীকে নেতা হিসেবে গড়ে তোলেছে এটা এখন সুস্পষ্ট। দক্ষিণ ভারত থেকে যার উত্থান, তিনি এখন সর্বভারতীয় ডানপন্থীদের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি একজন পপুলিস্ট বা লোকরঞ্জনবাদী নেতা হিসেবে সর্বভারতে উগ্র ডানপন্থার থাবা বিস্তৃত করেছেন। যে পশ্চিম বাংলাকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূতিকাগার মনে করা হতো সেখানেও বিজেপি থাবা বিস্তৃত করেছে মোদির নেতৃত্বে।
মোদীর নেতৃত্বে ডানপন্থীদের ঐক্যবদ্ধতার বিপরীতে জাতীয় কংগ্রেস এবং অন্যান্য অসাম্প্রদায়িক দলগুলো বহুধা বিভক্ত। কংগ্রেস তার সর্বভারতীয় সাংগঠনিক চরিত্র হারাতে বসেছে। আর বিজেপি সারা ভারতে হিন্দুত্ববাদের চাষ করে চলেছে। উদার গণতন্ত্র এখন মোদীর পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের পদধ্বনি অনুরণিত হচ্ছে ভারতে। যদিও পদ্ধতিগত গণতন্ত্র এখনো টিকে আছে বলে মনে করা হচ্ছে, বাস্তবে কিন্তু উদার চিন্তা-চেতনার গণতন্ত্র বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে ভারতে।এজন্য উদারনৈতিক গণতন্ত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে।
পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়,ভারতের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও গণমাধ্যমসমূহের ভবিষ্যত সম্পর্কে উদারপন্থীরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) সহ বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান, যেগুলো ভারতের সংবিধান অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, – সেগুলোর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বাড়ছে কারণে এসব প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মধ্যে পড়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছ।
আশংকা করা হচ্ছে যে, হিন্দুত্ববাদের উত্থান ও এর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)র উত্থানের ফলে দেশটাতে বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদারনৈতিক রাজনীতি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
বিজেপির উত্থানে ভারতে ম্যাজরিটারিয়ান প্রাধান্যতা ও কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাগুলোর বোধগম্য উপস্থিতিও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতকে একটা প্রক্রিয়াগত গণতন্ত্রে এবং সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে অবনমিত করার হুমকি সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ভারত কেবল নির্বাচনী গণতন্ত্রে পরিণত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে, যা দেশটার সংবিধান ও তার মৌলিক ভিত্তি উদারচিন্তার গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করা হয় এবং দেশটায় মোদীর শাসনে সেটাই হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয় ও ক্ষমতা খর্ব করা, ম্যাজরিটারিয়ানিজমের প্রাধান্যতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার মতো বিষয়গুলোর কারণে উদার গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে জনমনে উদ্বেগ দেখা গেলেও এর বিরুদ্ধে বড়ধরণের কোনো প্রতিবাদ জাগ্রত না হওয়ায় অথবা অসাম্প্রদায়িক উদারচিন্তার দলগুলো জনগণকে এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধকরণ ও সর্বভারতে উগ্রবাদী বিজেপি শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই গড়ে তুলতে না পারায় মোদী ও বিজেপির কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিস্তার ঘটছে সারা দেশে। এতে করে সংবিধানের স্বীকৃত উদারপন্থী গণতন্ত্র ভারত থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কর্তৃত্ববাদী উগ্র ডানপন্থার হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসন কায়েমের আশংকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর সংমিশ্রণ, বিশেষকরে, গণতান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয় ও ক্ষমতা হ্রাসের প্রতি জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জাগ্রত না হওয়ায়, বরং জনগণ তা সহজভাবে গ্রহণ করায় শাসক নরেন্দ্র মোদী সহজেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছেন এবং পক্ষান্তরে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠেছে।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।