নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে
ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ তুরস্ক ও সিরিয়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৬:৫৫:৪২ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক : ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। ধসে পড়েছে হাজার হাজার ভবন। ক্ষণে ক্ষণে উদ্ধার করা হচ্ছে মৃতদেহ ও আহতদের। নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫০৯ জনে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা বাড়ছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
হাসপাতাল ও ধসে পড়া ভবনগুলোর সামনে স্বজনদের খুঁজতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্পের সময় বেশিরভাগ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এই ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগির ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ২৪১ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর ৪২টি ভূকম্পন সংঘটিত হয় যার মধ্যে বৃহত্তমটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।
অপরদিকে, ১২ ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্কের কাহরামানামারাস প্রদেশের এলবিস্তান শহরে। যা গাজিয়ান্তেপ শহরের উত্তরে ৮০ মাইল দূরে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, এটি আফটারশক (ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পন) নয়। এটি সকালেরটি থেকে আলাদা।
তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশেই বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এখনও ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। তাদেরকে উদ্ধারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বাহিনী। সাধারণ মানুষও এতে হাত লাগিয়েছেন। কোনও কোনও পরিবারে সকল সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শোক পালন করবেন বলেও আত্মীয়-পরিজন নেই অনেকের।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে অনুমান করে বলেছে যে, এই ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজার ছাড়াতে পারে। তুরস্ক প্রশাসন জানিয়েছে ভূমিকম্পে প্রায় তিন হাজার ভবন ধসে পড়েছে।
তুরস্কের কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, গাজিয়ানটেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, মালতায়া এবং আদানাসহ বিভিন্ন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা এবং লাত্তাকিয়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশ দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
দ্রুত উদ্ধারকাজের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা করেছে তুরস্ক। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য বাহিনী প্রেরণ করেছে। সেনাবাহিনী নামিয়েছে তুরস্ক।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন যে, ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পের চেয়ে এবারের ভূমিকম্প আরও ভয়ঙ্কর। ওই ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই বিপদ মোকাবেলা করবেন বলে বার্তা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
জানা গেছে, এটি হলো শতাধিক বছরের মধ্যে তুরস্কে সবচাইতে ভয়াবহ ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগির ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ২৪১ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর ৪২টি ভূকম্পন সংঘটিত হয় যার মধ্যে বৃহত্তমটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। তুরস্ক ও সিরিয়া প্রতিবেশী লেবাননেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
সিরিয়ার এটমিড শহরের একজন ডাক্তার জানান যে, তার শহরে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।
ডা. মুহীব কাদ্দোর বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন যে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু লোক চাপা পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আশংকা এ দুর্যোগে শত শত লোক নিহত হতে পারে।
এদিকে, ভূমিকম্পের পর শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা ১,৫৪১-এ দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে।
ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সিরিয়ায় ৯৬৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ২,৫০৯-এরও বেশি।
দুটি দেশেই দুর্গত এলাকা জুড়ে এক বিশাল উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে বাদ সেধেছে প্রতিকূল আবহাওয়া। শীতকালীন তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তুষারে অনেক সড়ক ঢেকে গেছে।
তবে গ্রাম ও শহরগুলোয় উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ অনুসন্ধানের সাথে সাথে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
২ বাংলাদেশি নিখোঁজ
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খাহরামানমারাসের ভূমিকম্পে দুই বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন -নূরে আলম ও রিংকু। তারা দু’জনই শিক্ষার্থী। তারা যে ভবনে থাকতেন সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
ইস্তান্বুলে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মোহাম্মেদ নুর-আলম বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ওই অঞ্চলের অনারারি কনসালের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি।
ওই অঞ্চলে গাজিয়ানতেপ শহরে বেশিরভাগ বাংলাদেশি অবস্থান করে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কেউ কেউ সেখানে ব্যবসা করেন। কেউ এনজিওতেও চাকরি করেন। ওই অঞ্চলে প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি বসবাস করেন।
তিনি বলেন, ভূমিকম্প যেখানে হয়েছে সেখানে আবহাওয়া খুব খারাপ এবং তুষারপাতের কারণে উদ্ধার অভিযানে কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।