মঙ্গলযাত্রা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ৪:১৩:৪০ অপরাহ্ন

অনাবিল রোদ্দুর
কিছুদিন আগেই মঙ্গলের মাটিতে মানুষের প্রথম পা পড়েছে। সেই মঙ্গলের মাটিতে প্রথম পা রেখেছেন বাংলাদেশের তরুণ নভোচারী বিশ্বনাথ রায়। বয়স ২১।
আরও দুজন নভোচারী ছিলেন। রফিক ইসলাম ও আব্দুল শফিউর। তাদের মঙ্গল অভিযানের কথা বিশ্বনাথ তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন। আমাকে তার ডায়েরিটা পড়তে দিয়েছেন তিনি। সেই ঘটনাটাই এখানে তুলে ধরছি।
২৭ ডিসেম্বর, ২০৩৫, সন্ধ্যা ৭:০৩
আজ আমাদের মঙ্গলে যাওয়ার প্রশিক্ষণ শেষ হলো। আমি বিশ্বনাথ রায়। আমার সঙ্গে আছেন রফিক ইসলাম ও আব্দুল শফিউর। আমরা যে রকেটে যাবো তাতে করে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় মঙ্গলে পৌঁছে যাওয়া যাবে। আমি শুরুতে মঙ্গলে নামবো। এরপর নামবেন রফিক ভাই। আব্দুল ভাই রকেট নিয়ে মঙ্গলের চারদিকে ঘুরবেন। আমাদের রকেটে আছে একটি লুনার মডিউল যার মাধ্যমে আমরা মঙ্গলে নামবো। এটি একটি ছোট নভোযান যা রকেটের সঙ্গে জোড়া লাগানো থাকে। নামার আগে মূল যান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এই লুনার মডিউল। পরশু রওনা হবো।তাই খুব উত্তেজিত।
২৮ ডিসেম্বর ২০৩৫, সন্ধ্যা ৬:১৩
বিচ্ছিরি দিন। আমাদের মঙ্গল অভিযানের কথা শুনে আমার এক বন্ধু ফেসবুকে লিখেছে, “যে রকেটে মঙ্গলে যাচ্ছো সে রকেট ১ সেকেন্ডও টিকতে পারে কিনা দেখ।” আরেক বন্ধু লিখেছে, “আমাদের মতো গরিব দেশের ক্ষেত্রে এসব মহাকাশ অভিযান মানায় না।” আমি তাদেরকে ফেসবুকে রিপ্লাই দিয়ে লিখেছি “নিজের চরকায় তেল দাও”।
২৯ ডিসেম্বর ২০৩৫, সন্ধ্যা ৭:০০
৭ ঘণ্টা হলো মঙ্গলে পৌঁছেছি। বাংলাদেশে এখন সন্ধ্যা। আমি মঙ্গলে নেমে বাংলাদেশের পতাকা পুঁতে রকেটে ফিরে এসেছি। এখন রফিক ভাই মঙ্গলে নেমে পাথর কুড়াচ্ছেন। কাল মঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করবো।৩১ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় পৃথিবীর দিকে রওনা দেবো। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, যে আমি অঙ্ক ভালো পারতাম না, সে আমি এখন মঙ্গলের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রেখেছি। নিজের জন্য তো গর্ব হচ্ছেই আরও বেশি গর্ব হচ্ছে নিজের দেশের জন্য।
৩০ ডিসেম্বর ২০৩৫, বেলা ১২:০০
আজ প্রচুর অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। ঘড়িতে তখন বাংলাদেশের সময় সকাল ১১:০০। মঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করলাম। এখানে ১০% অক্সিজেন ও ৯০% কার্বন ডাই অক্সাইড আছে। এতো অক্সিজেন এখানে এলো কীভাবে?
এর কারণ খুঁজে বের করার জন্য আমি আর রফিক ভাই হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি একটি ছোট পাড়া। পাড়া বলছি কারণ ওখানে কয়েকটি একতলা ছোট বাড়ি রয়েছে। আমরা দেখি একটি সবুজ রঙের লোক আমাদের দিকেই আসছে।আমাদের মোটেও ভয় লাগলো না। সে কাছে এসে আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে বাংলায় বলল, “ভালো আছেন? আমি জানি আপনারা পৃথিবী থেকে এসেছেন এবং আপনাদের গ্রহও বেশ উন্নত। আমরা অতো উন্নত না হলেও শুধু বাংলা ভাষাটাই জানি। কীভাবে জানি সেটা বলছি। আমরা একটি অনেক অনেক লম্বা দড়িতে একটি ক্যামেরা ও শব্দ রেকর্ডার বেঁধে পৃথিবীর দিকে দড়িটা ছুড়ে মারি। সেখানে দেখি মানুষেরা কী করছে ও শুনি কী বলছে। সেখান থেকেই আমরা ভাষাটা শিখে নিই।দড়িটা সম্ভবত বাংলাদেশে পড়েছিলো। আপনারা আমার বাসায় একটু আসবেন?”
আমি বললাম, ভালো আছি। আপনার বাসায় আসবো। বাড়িতে এসে লোকটা বলল, “আমাদের এখানে যন্ত্র বলতে ক্যামেরা আর রেকর্ডার। আমরা এগুলো বানিয়েছি একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে,যা ৩৯ বছর আগে পৃথিবী থেকে মঙ্গলে এসে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। সূর্যের আলোই আমাদের যন্ত্রগুলোকে শক্তি দেয়। এখানে একটি নদী আছে। আরও আছে এক ধরনের প্রাণি যেটা অক্সিজেন ছাড়ে ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। আমার মতো দেখতে সবাই তার কাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে।”
লোকটা যে গাড়ির কথা বলল সেটাতো নাসার পাথফাইন্ডার মহাকাশ যানের গাড়ি সোর্জোনার। এর কিছুক্ষণ পর আমি আর রফিক ভাই রকেটে ফিরে গেলাম। যাওয়ার আগে সেই মানুষটার ছবি তুললাম।
পহেলা জানুয়ারি, ২০৩৬, রাত ২:১৫
কিছুতেই ঘুম আসছে না। সন্ধ্যা সাতটায় পৃথিবীর দিকে রওনা দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছেছি রাত বারটায়। রওনা দেওয়ার সময় লুনার মডিউল রকেটের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে রওনা দিলাম। আমাদের রকেট প্যারাসুটের সাহায্যে বঙ্গোপসাগরে নামলো।
সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য জাহাজ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। আমরা একটি করিডোরের সাহায্যে জাহাজে ঢুকলাম। জাহাজে উঠে আমরা নভোচারীর পোশাক ছেড়ে সাধারণ পোশাক পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম।তিনি বললেন, “তোমরা যা করেছো তা দেশের জন্য এবং পুরো জাতির জন্য গৌরবময়। তোমরা প্রথম মানুষ হিসেবে মঙ্গলে পা রেখেছো। তোমাদেরকে ধন্যবাদ।” আমি বললাম, “আপনাকেও ধন্যবাদ।”
এরপর আমরা জাহাজ নিয়ে তীরের দিকে চললাম। তীরে গিয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ আমাদের দিকে ফুলের তোড়া ছুড়ে দিচ্ছে। আনন্দে আমার চোখে জল এসে গেলো।