মাকড়সা ও তেলাপোকা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২২, ৬:০৯:৫১ অপরাহ্ন

বিনতা দেবী
মানিপ্লেন্ট বাথরুমের ভেন্টিলেটারে বেড়ে উঠছিল। দেখতে খুবই ভালো লাগতো। বিশেষ করে কাঁচের গ্লাস দিয়ে ভোরের সূর্যালোকে গাছগুলো দেখতে খুব চমৎকার লাগত। সে সুযোগে কখন যে দু’টি মাকড়সা সেখানে জাল বুনতে শুরু করল গৃহকর্তী টেরই পাননি।
দিনের আলোতে ওরা বাথরুমের বাইরে অন্য কোথায় খাবারের সন্ধানে বের হয়ে পড়ত। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনায়ে এলে ওরা বাথরুমে ঢুকে পড়ত। আর এদিক ওদিক ওয়ালে পায়চারী করত, মনে হয় ছোট ছোট পোকা, পিঁপড়ে এগুলো খেয়ে জীবন ধারণ করত।
এক রাতে এক তেলাপোকা বাথরুমের মেঝেতে পায়চারী করতে দেখে মাড়কসা হেসে হেসে বলল, ওরে তেলচোরার বেটা তেলচোরা তুই আমার রাজ্যে কেন এসেছিল। গোসল করবি না! এতো রাতে প্রস্রাব পায়খানা করবি?
তেলাপোকা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দাঁতে দাঁতে কটমট করে কর্কস কণ্ঠে দাবানলের মত উত্তেজিত হয়ে বলল, আমি গোসল করব না প্রস্রাব করব তাতে তোর কি? তোরা এখানে কি করিস! গৃহকর্তী দেখতে পেলে খবর বেমালুম হবে। ও বুঝেছি ওরা বাথরুমে ঢুকলে তোরা মানিপ্লেন্ট গাছটার ঝুপে লুকিয়ে পড়িস তাই না। চোরের বাচ্চারা চোর আবার আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করিস। ইচ্ছে করছে তোদের থ্যাবড়া নাকে একটা আঁচড় দিতে।
জানিস আমার সাহস কত। ঘরের সাহেব গিন্নীরা যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমি রাজার মত সারা ঘর ঘুরে বেড়াই আর যেথায় যা পাই খেয়ে সাবাড় করি ওরা আমার সাড়া শব্দ পায় না, চোর হতে যাব কেন?
আমার দাদামশাই আদর করে আমার নাম রেখেছিল ‘তেলচুরা’। এটা নাকি খানদানী নাম। বইয়ের ভাষায় ‘তেলাপোকা’ এটাও বাহারী নাম, লোকে শুনলেই ভয় পায়। এসব শুনে মাকড়সা চড়াও হয়ে উঠল। বলল, ওরে তেলাপোকা আর তেলচোরা নামের বাহাদুরী করতে আমার সাথে আসিস না, জানিস বৃটিশরা আমার নাম কি দিয়েছে। বৃটিশ আমার নাম দিয়েছে ঝঢ়রফবৎ.
তেলাপোকাও একটা নাম হলো। তোকে অট্ট ঠ্যাংগী বললে আমি খুশী হতাম। ওরে বোকা এটা ইংরেজী নাম বুঝলি ইংরেজী নাম এটা তোর পক্ষে বুঝা সম্ভবই না। এসব নিয়ে মাকড়সা ও তেলাপোকার মধ্যে তুমুল কান্ড বেঁধে গেল। এক পর্যায় গুলাগুলি, লাঠি টানাটানি শুরু হল। এর ফল স্বরূপ বিবি মাকড়সার পা-গুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেল ও বাথরুমের মেঝেতে পড়ে চিৎকার করে আর্তনাদ করতে লাগলো। এক সময় বাথরুমে আসা গৃহকর্তীর পায়ের নীচে পড়ে মরেই গেল। আহারে কি কষ্টই না পেল বেচারী।
আর সাহেব মাকড়সা তো লম্বা লম্বা কথা বলছিল, এবার সে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য মানিপ্লেন্ট গাছের ঝোপে লুকিয়ে পড়ল।
অবশেষে পিঁপড়েরা এসে টেনে হিছড়ে মৃত বিবি মাড়কসাটাকে তাদের শীতের খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য গর্তে নিয়ে ঢুকাল।
আর তেলাপোকার বেটা তেলাপোকার দেখাই মিলল না ও বাথরুমেই কোথায় চুপটি মেরে লুকিয়ে পড়ল। যে যার প্রাণ রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।