মাথাগুজার ঠাঁই নেই বীর মুক্তিযোদ্ধা নজব উল্লার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২১, ১০:২৫:৪৬ অপরাহ্ন

আব্দুল আজিজ, রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে :
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও মাথাগুঁজার ঠাঁই নেই বীর মুক্তিযোদ্ধা নজব উল্লার। পরের বাড়িতে ভাড়া থেকে জীবন চলে তার। কষ্টে আছেন জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া ঘরহীন দেশের এ সূর্য সন্তান। তিনি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজারের একটি ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন। তার আপন কেউ নেই, নিজেই রান্নাসহ সংসারের সব কাজ করেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নজব উল্লা জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়াইয়া গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে শুধু স্ত্রী ছিলেন। তার কোন সন্তান নেই। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এখন অনেক কষ্ট করে নিজের সংসার চালান।
জাতির এই সৈনিক বলেন, আমি টগবগে তরুণ যুদ্ধে গেলাম। স্বাধীনতা সংগ্রাম করে আমি দেশে ফিরে আসলাম। কিছু দিন পার হলো। পনেরই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর এলাকার প্রভাবশালী লোকদের দাপটে আমি বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হলাম। শ্বশুর বাড়ি কুলাউড়া উপজেলা শরীফপুর ইউনিয়নে অনেক দিন কাটালাম। আমার স্ত্রী মারা গেলে আমি চলে আসি আমার এলাকায়। এখন আমি বাজারে ভাড়াটি ঘরে থাকি। ঘরের জন্য প্রশাসনসহ অনেকের কাছে দরখাস্ত দিলাম। কিন্তু কেউ আমাকে ঘর দিল না।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে মৌলভীবাজারের প্রয়াত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী, প্রয়াত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ও আব্দুল মতিনের হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি কাজ করেছি। আমাকে মুক্তি যোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে চিঠি পত্র আদান প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফিরে এসে বিয়ে করলাম। ১৫ আগস্টের পর প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অল্প ধরে জমি জমা বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাই। স্ত্রী মহিবুন নেছা মারা যাওয়ার পর এলাকায় চলে আসি। আমি নিঃসন্তান অসহায় মুক্তি যোদ্ধা স্বাধীনতার ৫০বছর পার হলেও আমার মাথা গুঁজার ঠাঁই হয়নি। আমি কষ্ট করে ৬ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে ফাউন্ডেশন দিয়ে ঘর তোলার অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন আমাকে সরকারি ঘর দিচ্ছে না। একটি কুচক্রী মহলের ইন্দনে এ ভূমি বিক্রিও করতে পারছি না। আমার সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসছেন না। বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েও একটি ঘর পাইনি।
স্থানীয় মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে আলাপ করলে মুক্তিযোদ্ধা ছয়ফুল ইসলাম ও হেমেন্দ্র দত্ত জানান, নজব উল্লা গেজেটভুক্ত ও সনদপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। সরকার তার পাশে দাঁড়ালে সে জীবনের শেষ সময়টুকু শান্তিতে কাটাতে পারত।
কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম বলেন, নজব উল্লা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যদি তিনি সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য হন তবে আমি এর ব্যবস্থা করবো। রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, তার নিজস্ব ভূমি না থাকায় ঘরের জন্য প্রস্তাব দেওয়া যাচ্ছে না। যেখানে ভূমি আছে সেখানে ফাউন্ডেশন দিয়ে ঘর উঠানোর কারণে কিছু করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।