মাধবপুরে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও বাঁচানো গেলো না ফাহমিদাকে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৫:১৬:২১ অপরাহ্ন

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আবাসিক ভবনে বাবা ও সৎ মায়ের নিষ্ঠুরতায় জীর্ণশীর্ন কংকালসার দেহ নিয়ে চার দেয়ালে একটি কক্ষে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও বাঁচানো গেলো না ফাহমিদাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ফাহমিদার জীবন প্রদীপ নিভে যায়। মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রায় দেড় মাস যাবৎ শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আবাসিক ভবনে সৎ মা ও বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় ছোট একটি কক্ষে ফাহমিদা প্রায় দেড় মাস বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে অনাহারে থেকে বন্দিদশায় ছিলেন। ফাহমিদার বন্দি জীবন ও অসুস্থতার খবর পেয়ে মাধবপুর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে গত বুধবার সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দি থাকায় ফাহমিনা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অপারেটর আলী আকবরের মেয়ে মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহমিদা আক্তার সর্দি, জ¦র, কাশিতে আক্রান্ত হয়। পিতা আকবর আলী ও সৎ মা তাকে ডাক্তার না দেখিয়ে পানি পড়া ও তাবিজ কবজ এনে দেয়। নিজ বাসার একটি কক্ষে ফেলে রাখায় দিন দিন ফাহমিদা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এভাবে প্রায় দেড়মাস ধরে চার দেয়ালের ভেতর আটকে রাখায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের লোকজন জানতে পেরে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন ও মাধবপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাককে খবর দেয়। খবর পেয়ে মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ সাবরিনা সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়। মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ সাবরিনা সুলতানা বলেন, ফাহমিদাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল সেটি ছিল নোংরা পরিবেশ। নিজ কক্ষেই ফাহমিদা মল মূত্র ত্যাগ করত। অযত্ন অবহেলায় ও গৃহে বন্দি রাখায় বিনা চিকিৎসায় ফাহমিদা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কংকাল সার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বন্দিদশা থেকে অযত্নে অবহেলায় ফাহমিদা মারা গেছে। মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুলিশ ফাহমিদাকে উদ্ধার করে জরুরীভাবে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে চিকিৎসার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ফাহমিদাকে চিকিৎসক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি। ফাহমিদা পিতা আকবর আলী জানান, গত ১৫ বছর আগে ফাহমিদার মায়ের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ফাহমিদা ও তার এক ভাই আমাদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করত। গত কিছুদিন আগে ফাহমিদা সর্দি জ¦র কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু ঔষধ দেওয়ার পর তার রোগ সারেনি। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ফাহমিদা সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে মারা গেছে।