মাল্টা চাষে সফল বড়লেখার জাকির
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২২, ৫:৪৯:৪৮ অপরাহ্ন

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: জাকির হোসেন দীর্ঘদিন সৌদিআরব ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি ছুটিতে দেশে এসে নিজ বাগানে বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি মাত্র দু’টি মাল্টার গাছ লাগান। প্রায় তিন বছর পর দু’টি গাছে প্রায় ২শ’ কেজি মাল্টা উৎপাদন হয়। ভালো ফলন দেখে মাল্টা চাষে আগ্রহ বাড়ে জাকিরের। এরপর কৃষি বিভাগের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে তিনি বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা ফলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে ২৬০টি মাল্টা ফলের গাছ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করে বছরে এখন তাঁর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এরই মধ্যে সফল ফল চাষী হিসেবেও জাকির পুরস্কার পেয়েছেন। তাকে দেখে এলাকার অনেক যুবক এখন মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। তিনিও তাদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নানা পরামর্শও দিচ্ছেন।
জাকির হোসেনের বাড়ি বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ঘোলষা গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল আজিমের ছেলে।
আলাপকালে জাকির হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন সৌদিতে ছিলাম। ২০১৪ সালে ছুটিতে দেশে এসে প্রথমে ২৪ শতক জমিতে বিভিন্ন ফলের ৬০টি গাছ লাগাই। এরমধ্যে দুটি মাল্টার গাছ ছিলো। মাঝখানে বিদেশে আবারও গিয়েছিলাম। প্রায় তিন বছর পর ২০১৭ সালে দুটি মাল্টা গাছে প্রায় ২০০ কেজি মাল্টা উৎপাদন হয়। এতে মাল্টা চাষে আগ্রহ তৈরি হয়। পরে দেশে ফিরে আর বিদেশ যাইনি।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বড়লেখা কৃষি বিভাগে দেওয়া ১২০টি মাল্টার চারা ৪০ শতক জমিতে রোপণ করে মাল্টা ফলের চাষ শুরু করি। এর মধ্যে ১০০টি গাছ বড় হয়। তিন বছর পর গাছগুলোতে প্রথম মাল্টা উৎপাদন হয়। তখন ২৭ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করি। ২০২১ সালে এই গাছগুলোতে প্রায় তিন হাজার কেজির মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। এতে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় লাখ টাকার মতো। ২০২০ সালে আরও একটি মাল্টা বাগান করেছি। সেখানে ৬০টি মাল্টা গাছ লাগিয়েছি। পাশাপাশি বাগানে আরও বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রোপণ করেছি। ২০২১ সালে ৭৫ শতক জায়গা কিনে সেখানে আরও ১০০টি মাল্টা গাছ এবং ১০০ বারি-২ কমলার গাছ লাগিয়েছি। পাশাপাশি পেয়ারা আর কূল গাছও লাগিয়েছি। বাগান পরিচর্যার জন্য দুজন লোকও রেখেছি।
জাকির আরও বলেন, বছরে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে মাল্টার গাছে মুকুল আসে। এক সময় গাছ ফলে ফলে ভরে যায়। অক্টোবর মাসে মাল্টা পরিপক্ক হয়। তখন তা তুলে বাজারজাত করা হয়। এবছরও মাল্টার ভালো উৎপাদন হয়েছে। আমার বাগানের উৎপাদিত মাল্টা খুবই মিষ্টি। এগুলো ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারলে ৩ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে। বাকি গাছগুলোতে আগামী বছর মাল্টা ধরবে বলে আশা করছি। মাল্টার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করে বছরে এখন তার ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, গাছ লাগানোর পর ঠিকমতো পরিচর্যা করতে হয়। প্রথম থেকেই কৃষি বিভাগ আমাকে অনেক সহযোগিতা করছে। আমাকে দেখে এখন অনেকে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। আমাদের এলাকায় এখন ছোট বড় অনেক বাগান গড়ে উঠেছে। আমি তাদের নানা পরামর্শ দিই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবল সরকার বলেন, জাকির কৃষি বিভাগের দেওয়া মাল্টার চারা লাগিয়ে প্রথম মাল্টা চাষ শুরু করেছিলেন। তাকে আমরা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সফল চাষি হিসেবেও পুরস্কৃত করেছি। তাকে দেখে এখন অনেক যুবক মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। সবাই জাকির হোসেনের মতো হলে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য আসবে।