মীম-মাহী ভয় পেয়েছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:২০:৫৮ অপরাহ্ন

মো: মনজুর আলম
মীম ও মাহী দুই বোন। তারা খুবই আদুরে। যে কেউ তাদেরকে দেখে বুঝতে পারে তারা খুবই ভদ্র, নম্র স্বভাবের। ছোট দুই বোন প্রায়ই বাবাকে বলে: আব্বা, আমাদেরকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাও না। অনেক দিন হয়ে গেলো এমনকি কয়েক বছর হয়ে গেলো আমরা আমাদের নিজ বাড়ি সিলেটে বেড়াতে যাইনি। মীম ও মাহীরা চট্টগ্রামে বসবাস করে। তাদের বাবা জুয়েল সাব চট্টগ্রামেও বাড়ি করেছেন। বাচ্চাদের পড়ালেখা ও নিজের ব্যবসার কারণে সবসময় তাদের আসল বাড়ি সিলেটে আসা হয় না। মীম ও মাহীর অনেক অনুরোধে জুয়েল সাব এবার রাজি হলেন। বাচ্চাদের পরীক্ষাও শেষ। শীতের মৌসুম তাই বেড়াতে ভালো লাগবে।
এদিকে মীম-মাহী চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে আসছে শুনে সিলেটের আত্মীয় স্বজনরা অনেক খুশি হলো। তারা অপেক্ষা করছে কখন আসবে চাচাত বোন মীম-মাহী, কখন আসবেন জুয়েল আঙ্কেল আর চাচী মণি। সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। অবশেষে সেদিনটি একদিন চলে এলো। ট্রেনযোগে তারা সিলেট আসবে। তবে সিলেট রেলস্টেশনে না এসে তারা কুলাউড়ায় নামবে। কারণ তারা বিয়ানীবাজার যাবে। বিয়ানীবাজারের জলঢুফ তাদের নিজ বাড়ি। এ এলাকাটিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পাহাড়ী এলাকা। চায়ের বাগান ও আনারসের জন্য বিখ্যাত। আগর গাছও এখানে আছে।
প্রকৃতির টানে এবং আত্মীয় স্বজন দেখতে মীম ও মাহী তাদের মা-বাবাকে ব্যস্ত করে তুলেছিল। কিন্তু ট্রেন যাত্রার প্রাক্কালে একটি ঘটনায় তারা ভয় পেয়েছিল। এখন তারা সে ঘটনা মনে করে ভয়ে আতকে উঠে। ট্রেন ছাড়ার কিছু আগে হঠাৎ দেখা গেলো এক লোক আরেক লোককে তাড়া করছে মীম ও মাহীর সীটের পাশে এসে তারা মারামারি করছে। একজন অপরজনকে কিল, ঘুষি মারছে আর বলছে তুই যাত্রীর ব্যারকারে রাখা ব্যাগ টানলে কেন। তুমুল মারামারি আর হট্টগোল। তীব্র চেঁচামেচিতে পাশের বগি থেকে অন্য যাত্রী এসে ঐ ব্যক্তি আরো মারতে লাগল। মীম ও মাহী এ দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেলো এবং ভয়ে কান্নার উপক্রম। শিশুদের সামনে এমন আচরণ শিশু মনে বড় প্রভাব বিস্তার করে। স্বাভাবিক চলনে বা হাসিখুশিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ঐদিকে ট্রেনটি (পাহাড়িকা) ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।
পরে শুনা গেলো আসলে ঐ ব্যক্তির সাথে তার পূর্ব শত্রুতা ছিল। ট্রেনে কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। অন্য বগি থেকে যে ব্যক্তি এসে চোর ভেবে তাকে মেরেছিল জুয়েল সাহেবের সাথে ঐ ব্যক্তির ঝগড়া বেঁধে যায়। জুয়েল সাহেব প্রশ্ন করেন। আপনি কি ভেবে তাকে মারলেন সেতো চুরি করেনি। কিছু না বুঝে হাত তুললেন। এক পর্যায়ে জুয়েল সাহেব তাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিলেন। এবার আরো হট্টগোল বেঁধে গেলো। এবার যাত্রী-যাত্রী ঝগড়া লেগে যায়। মীম ও মাহী আরো ভয় পায়। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেলো তবুও ঝগড়া থামে না। এবার এক মুরব্বী বললেন, আপনি আমার ছেলেকে ট্রেন থেকে নামালেন কেন? ঝগড়া আরো তুমুল রূপ ধারণ করল। এক পর্যায়ে মীম ও মাহী বলেই ফেলল আমাদের ভয় লাগছে। তখন কিছু লোক বাচ্চাদের এ মনোভাবনা বুঝে উভয়কে শান্ত করার চেষ্টা চালায়। মীম ও মাহী আনন্দ ভ্রমণ করেছিল বটে তবে ভয়ের কথা এখনো ভুলতে পারেনি। শিশুদের প্রতি মায়ার দৃষ্টি দেয়া উচিত।