মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ৫:২৪:৪৫ অপরাহ্ন

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
সময়টা দুপুর বেলা। ঝলোমলো আলোয় চারিদিক আলোকিত। তারওপরে আজ আবার ছুটির দিন পড়েছে। জয়নুল দাদার রুমে ঢোকে। দাদা খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন। মুক্তিযুদ্ধের বই। নাম ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো’।
জয়নাল ধিরে ধিরে গিয়ে তার দাদার পাশে দাঁড়ায়। সে দেখে, দাদা বই পড়ায় মগ্ন। এক সময় চোখ তুলে দেখেন তার অতি আদরের নাতি দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখছে মায়াবি চোখে। আর ভাবছেন- এই বয়সেও দাদা কত মনোযোগ দিয়ে বই পড়ে।
নাতিকে পাশে টেনে বসান দাদা। জয়নুল দাদাকে বলে, ‘দাদা, আপনি তো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন পাকবাহিনীর সাথে। এবং জিতেছেন। এটি আমাদের জন্য গৌরবের। সেদিন মা বললো- যুদ্ধে আপনি আহত হয়েছিলেন। কোথায় আঘাত লেগেছিল, দাদা?
দাদু পা তুলে জয়নালকে দেখান। এখনো দাগ স্পষ্টভাবে ফুটে আছে। জয়নাল একটু আঁতকে ওঠে। কী ভয়াবহ ব্যাপারটা!
জয়নুল দাদার কাছে জানতে চায় যুদ্ধদিনের গল্প কেন ছিল? দাদু বলেন, ‘সে তো দীর্ঘ স্মৃতির পাতায়। ঠিক আছে। শোনো, ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ কালোরাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর। বুঝতে দেরি হলেও রুখে দাঁড়াতে শুরু করে বীর বাঙালি। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে শুরু হয় যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধই হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ টানা নয়টি মাস যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর আসে চূড়ান্ত বিজয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফেরে বীর বেশে। কেউ কেউ পাকবাহিনীর গুলির আঘাতে শহিদ হয়। বলা হয়ে থাকে- মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ শহিদ হয় ও দুই লাখ নারী তাদের সম্ভ্রম হারায়।’
জয়নুল দাদাকে বলে, ‘জি দাদা, এমন কথা আমরা বইয়ে পড়েছি। যুদ্ধে আপনার আহত হওয়ার ঘটনা বলবেন আজ।’
দাদা বুকে জড়িয়ে ধরেন আদরের নাতিকে। চোখে জল টলোমলো করছে। কাঁদো কাঁদো গলায় দাদা বলতে শুরু করেন, ‘যুদ্ধজয়ের একদিন আগে পাকসেনার সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে আহত হই আমি। ওপাশ থেকে গুলি ছুড়লে আমার পায়ে গুলিটি লাগে। আরও অনেকেরই গুলি লাগে। আমাদের সাথে থাকা একজন মারা যায়। তবে সে দিন পাকবাহিনী সেই লড়াইয়ে হার মানে।’
‘তারপর কী ঘটে, দাদু?’
‘শহীদ সাথীকে কবর দিই সেখানে। খুব কষ্ট হচ্ছিল সেসময়। আহত হওয়ার পরও ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান মুখে ধরে আমরা ক্যাম্পে ফিরতে থাকি। সঙ্গে উড়াতে থাকি বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।’
‘অনেক কিছু জানতে পারলাম, দাদা।’
তারপর দাদা তার প্রিয় নাতির হাতে তুলে দেন পড়তে থাকা ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো’ বইটি। আর বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি এই বই পড়েও জানতে পারবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে।’
এত সুন্দর একটি বই উপহার দেওয়ায় জয়নাল তার দাদাকে ধন্যবাদ জানায়।