মোবাইল ফোন টাওয়ার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২২, ৬:৪৮:৫৫ অপরাহ্ন

জটিল রোগে আক্রান্ত হবে পাঁচ কোটি মানুষ, দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে- এই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আর সেটা হতে পারে মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে নির্গত ক্ষতিকারক রশ্মির বিরূপ প্রভাবের কারণে। জানা গেছে, মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নির্গত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে আগামী বছর কয়েকের মধ্যে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। পরিবেশবিদ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদেরা বলেছেন, জিনগত পরিবর্তন ঘটবে ব্যাপকভাবে। জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে। মেধাশূন্য হয়ে পড়বে দেশের মানুষ। পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, ইতোমধ্যেই তা পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই এই জনস্বাস্থ্যগত সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। দেশে দেশে পরিবেশবাদিরা এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন।
দেশের সর্বত্র শহর-নগর-গ্রাম-গঞ্জে বিস্তৃত মোবাইল ফোন টাওয়ার। যে কয়টি মোবাইল ফোন কোম্পানী রয়েছে, সবগুলোই নিজেদের টাওয়ার স্থাপনের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করেনি। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেশির ভাগ টাওয়ারই স্থাপন করা হয়েছে। আর এইসব টাওয়ারের ক্ষতিকারক রশ্মি জনস্বাস্থ্যসহ প্রাণী ও উদ্ভিদের সর্বনাশ করে চলেছে। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, মোবাইল ফোন টাওয়ারের দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাবে মানবদেহে আলঝেইমার টিউমার, ব্রেইন টিউমার, দৃষ্টিহীনতার মতো নানা জটিল রোগের আক্রমণ হতে পার। যদিও এই ক্ষতিকর প্রভাব এখনই চোখে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব একদিন মহামারি আকারে দেখা দেবে। মোবাইল ফোন এবং ফোনের সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণকারী বেজ ট্রান্সমিশন মেগমেন্ট থেকে প্রতিনিয়ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি বের হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে- দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বেজ স্টেশন বা টাওয়ারের সংখ্যা বিশ হাজারের বেশি। এইসব টাওয়ার থেকে নির্গত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মানুষের শরীরের সেলগুলো ইলেকট্রিক ও কেমিক্যাল সিগন্যালের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। মানুষের এই স্বাভাবিক সিগন্যালের মধ্যে মোবাইল ফোন টাওয়ারগুলো থেকে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি মানবদেহের সেলগুলোর ওপর মারাত্মক বিক্রিয়া ঘটায়। এতে দেহে আলাদাভাবে ইলেকট্রোম্যাগনেটিং রেডিয়েশন উৎপন্ন হলে সেলের বিকৃতি ঘটে। আর এই বিকৃতি থেকেই মানুষের শরীরে নানান কঠিন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা মোবাইল ফোনে এক মিনিট কথা বললে ব্রেনে যে কম্পন তৈরি হয় সেই কম্পন স্থির হতে দু’ঘন্টা সময় লাগে। আর এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিং রেডিয়েশনের মধ্যে দীর্ঘ সময় চললে মানুষ অকাল বার্ধক্যের সম্মুখীন হতে পারে। তাছাড়া হতে পারে দৃষ্টিহীনতা ও চর্মরোগ। সেই সঙ্গে হবে বৃক্ষ সম্পদের বিকৃতি; ফলন কমে যাবে। জীববৈচিত্র্য মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সাধারণত মোবাইল ফোন টাওয়ারের আশেপাশে থাকা গাছের নারিকেলের কোন পানি থাকে না। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির কারণেই এরকম হয়ে থাকে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে। প্রতি মুহূর্তেই বেড়ে চলেছে গ্রাহকসংখ্যা। জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৯০ ভাগ মানুষই এখন ব্যবহার করছে মোবাইল ফোন। গ্রাহক চাহিদা মেটাতে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো তাদের নেটওয়ার্ক দ্রুত সম্প্রসারিত করছে; স্থাপন করছে নতুন নতুন টাওয়ার। [আর এই টাওয়ার স্থাপনে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় যেখানে সেখানে স্থাপন করা হচ্ছে এগুলো। অথচ জনবসতি ও জনসমাগম স্থলে স্থাপিত টাওয়ারগুলো থেকে নির্গত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে চলেছে। সুতরাং টাওয়ার স্থাপনের ক্ষেত্রে বাছাই করতে হবে জনসমাগম স্থল থেকে দূরবর্তী নিরাপদ স্থান। সর্বোপরি এই ক্ষতিকর রশ্মি থেকে মানবজাতি, বৃক্ষ সম্পদ, পশুপাখিসহ পরিবেশকে রক্ষার জন্য যথাযথ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকেই ঝুঁকতে হবে।]