রমজান : ক্ষমায় ভরপুর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২২, ১১:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন

মুন্সি আব্দুল কাদির
রমজান ধাপে ধাপে শুধু ক্ষমার ঘোষণা। ক্ষমাই সফলতা, ক্ষমাই সার্থকতা। যে ক্ষমা পেল তার হারানোর কোন ভয় নেই। ব্যর্থতার কোন পরশ তাকে ছুঁতে পারবে না। দুঃখ বেদনা তাকে পরাভূত করতে পারবে না। আমার মাওলা অনেক অনেক দয়াবান, মেহেরবান। তাঁর অসীম রহমত সকল কিছুকে বেষ্টন করে আছে। যতদূর চোখ যায়, কল্পনার যগৎ যতদূর বিস্তৃত সবখানে তার দয়া আর ভালবাসার পরশ দেখতে পাই, কল্পনা করি। আমার কল্পনার সীমা পরিসীমা পেরিয়েও তাঁর রহমত ভরপুর। তাঁর দেওয়া শাস্তির মধ্যেও দয়া মিশে আছে। এই দুনিয়ায় তাঁর দেওয়া শাস্তি আমাকে কল্যাণের পথে আহবান করে। আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলে। আমাকে ভুল পথে চলা থেমে যেতে আহবান করে। আমার মাথায় মায়ার হাতে পরশ বুলিয়ে বলতে থাকে, আর ভুল পথে, ভুল মতে চলিস না। আয় আমার দিকে ফিরে আয়। রমজান মাস শ্রেষ্ঠ মাস, জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। জীবনের শ্রেষ্ঠতম সফলতা রমজানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। শ্রেষ্ঠতম পুরস্কার আমাকে গ্রহণ করার জন্য ডাকছে।
রমজানে সকলের জন্য সফলতার দুয়ার খুলে দেয়। ব্যর্থতার সকল দরজা আটকিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও যে ব্যর্থতার দরজায় বার বার আঘাত করে খুলতে চায়। সে আসলেও তো ব্যর্থ, কপালপোড়া। রমজান আসার সাথে সাথে কল্যাণের আহবানকারী ঘোষণা দিতে থাকে হে কল্যাণের পথে যাত্রী তুমি দ্রুত পদে কল্যাণের দিকে অগ্রসর হও। আর হে পাপী তুমি থেমে যাও। পাপের পথে, ধ্বংসের পথে আর অগ্রসর হয়ো না। রমজানের দিনে রোজা রাতে নামাজে দাড়ানো শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের খোঁজ, কত যে ক্ষমার ঘোষণা!
১. রোজা আদায়কারীদের আসল লাভ মহান প্রভুর ক্ষমা। ক্ষমাই মুক্তি, ক্ষমাই নিস্কৃতি, ক্ষমাই কল্যাণ, ক্ষমাই সফলতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মান সামা রামাদানা ইমানান ওয়া ইহতিসাবান গুফিরা লাহু মা তাক্কাদ্দামা মিন জানবিহি। যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সাথে রোজা আদায় করবে তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। মহান মালিকের কি অপরূপ ঘোষণা। তাকে নিশ্চিত মাফ করে দেওয়া হবে। তার সকল ব্যর্থতা আজ সফলতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। কোন দুঃখ, গ্লানি আর তাকে স্পর্শ করবে না। এত দিন তার নাম দুজখিদের খাতায় থাকলেও ওখান থেকে তার নাম মুছে ফেলা হবে। দুজখীর খাতায় তার নামের কোন চিহ্নও অবশিষ্ট থাকবে না। তার নাম এখন জান্নাতীদের খাতায় উঠানো হবে।
২. আগের কথা ঘোষণা দিয়েই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে যান নি। মহান রবের পক্ষ থেকে আরো যে কয়েকটি ক্ষমার ঘোষণা রয়েছে। এটা যে মহা রহমত আর ক্ষমার মাস। ক্ষমা আর ভালবাসায় ভরপুর ভান্ডার নিয়ে মহান মালিক বসে আছেন। রোজা রেখে তুমি ব্যর্থ হয়েছ। তাতে কি হয়েছে। দিনে তুমি ব্যর্থ হয়েছে। এতে হয়েছেটা কী। তোমার ক্ষমা পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় নি। তোমার সফলতার আরো দুটি চাঞ্চ তোমার এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মান ক্বামা রামাদানা ইমানান ওয়া ইহতিসাবান গুফিরা লাহু মা তাক্কাদ্দামা মিন জানবিহি- যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। হ্যাঁ তুমি দিনে ক্ষমা পেতে ব্যর্থ হয়েছ। তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তুমি রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে যাও। তোমার গুনাহ থাকবে না। তুমি ক্ষমা পেয়ে যাবে। তুমি আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাবে।
৩. তারপরও মনে করো তুমি ব্যর্থ। রোজায় ত্রুটি করেছ। নামাজে ত্রুটি করেছ, তুমি ক্ষমা পাওনি। তোমার রোজা, নামাজ হয়নি। তুমি হতাশ হয়োনা। তোমার ক্ষমার আরো সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এই দেখ রমজানের শেষ দশকে তুমি কোমর বেধে মাওলার ইবাদতে লেগে যাও। এই শেষ দশকে এক মহিমাম্বিত রজনী রয়েছে। এই রাতে যদি মাওলাকে ডাকতে পার, তোমার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। মান ক্বামা ফি লাইলাতিল কাদরি ইমানান ওয়া ইহতিসাবান গুফিরা লাহু মা তাক্কাদ্দামা মিন জানবিহি- যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ আদায় করবে তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
মহান রবের কী আলীশান ঘোষণা। একবার ব্যর্থ হয়েছ, হতাশ হয়োনা। দুই বার ক্ষমা পেতে ব্যর্থ হয়েছ, থেমে যেয়ো না। ঘাবড়িয়ে যেয়ো না। কদরের রাতে দাঁড়িয়ে যাও। তুমি সফল। সফলতা তোমাকে বার বার ধরা দেয়। তুমি যদি সফলতা না চাও, কার কী করার আছে। আগে তুমি আগাতে হবে। তারপর সফলতা তোমার পদে এসে চুম্বন করবে। এখানে তোমার চাওয়া জরুরি। মাওলা তার সাহায্য, ক্ষমা, রমহত, নাজাত নিয়ে তোমার দিকে চেয়ে আছেন । বান্দা কখন মাওলাকে ডাক দিবে। বান্দাকে তাই বার বার সুযোগ দিয়ে যান। তারপরও যে ব্যর্থ, কপাল পোড়া। তার জন্যই কেবল অভিশাপ। মানুষের অভিশাপ, পৃথিবীবাসীর অভিশাপ, আকাশবাসীর অভিশাপ, সকল সৃষ্টির অভিশাপ। আজ এই রমজানে সফলতা খুঁজে নেই, ব্যর্থতা মুছে দেই। তা একান্ত আমার উপর নির্ভর করছে।