রোজার ফজিলত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ৬:৫৭:২২ অপরাহ্ন

আলেমা সাজিদা তাওহিদা
প্রতিটি ফুল যেমন রং ও ঘ্রাণের দিক থেকে ভিন্ন, প্রতিটি ফল যেমন স্বাদ ও গুণের দিক থেকে আলাদা, ইবাদাতের অবস্থাও তেমন। কোনো কোনো ইবাদাতের কিছু বিশেষ প্রতিদান রয়েছে যার মাধ্যমে তা অন্য ইবাদাত থেকে আলাদা হয়ে ওঠে। প্রতিদানের প্রকারভেদে রোজা হচ্ছে একটি বিশেষ ইবাদাত। বান্দা রোজা রেখে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের চাহিদাকে বিসর্জন দেয়, যা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। তাই এই ইবাদাত যে করবে তার জন্য তিনি তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে অনেক উঁচু স্তরের প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-মানুষের প্রতিটি ভালো কাজের পরিমাণ দশগুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্থ্যাৎ এই উম্মতকে পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা এ নিয়ম অবলম্বন করেছেন-একটি ভালো কাজের পরিমাণ কমপক্ষে দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কখনো এরচেয়ে বেশি দেওয়া হবে।এমনকি কাউকে তিনি কোনো কাজের প্রতিদান সাতাশগুণও বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘রোজা এই স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে। এটা আমার পক্ষ থেকে আমার জন্য বিশেষ এক হাদিয়া। তার (বান্দার) এ ত্যাগের পুরস্কার আমি নিজেই দেবো সেটা যা-ই দিই না কেন।’
‘রোজাদারের জন্য দুটি বিশেষ আনন্দ রয়েছে। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আপন মালিকের সাক্ষাৎ লাভের সময়। আর এটা নিশ্চিত যে রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। রোজা (দুনিয়াতে শয়তান ও নফসের হামলা থেকে, গোনাহ থেকে এবং পরকালে দোযখের আগুন থেকে বেঁচে থাকার জন্য) ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখতে চায় তখন সে যেন অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা না বলে, ঝগড়া বিবাদ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায় তাহলেও সে যেন বলে দেয় আমি রোজাদার।’- (সহীহ বুখারী)
এই হাদিসে রোজা সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ যে কথা বলা হয়েছে তা হলো- আল্লাহ তায়ালা সকল নেক কাজ থেকে রোজাকে পৃথক করে নিজ হাতে এর পুরস্কার দেবেন। এর কারণও তিনি বলে দিয়েছেন- ‘রোজা কেবলই আমার জন্য। আমার বান্দা আমার জন্য তার পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদাকে বিসর্জন দেয়।’ আল্লাহ পাকের কী দয়া! তাঁর নিকট আমাদের এ দিনভর রোজার কত সম্মান! আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদিসে পাই-নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘রোজা ও কুরআন কেয়ামত দিবসে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণে বাঁধা দিয়েছি। আমি তার জন্য সুপারিশ করছি। আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। আমি তার জন্য সুপারিশ করছি। আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতএব উভয়ের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।’ (সুনানে বায়হাকী)
হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার জন্য একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার এই একটি রোজার বিনিময়ে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছর দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’ (কানজুল উম্মাল)
হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-‘বেহেশতে একটি রাইয়ান নামে দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। রোজাদার ব্যাতিত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ডেকে বলা হবে রোজাদাররা কোথায়? ডাক শুনে তারা এগিয়ে যাবে। এ দরজা দিয়ে তারা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না। সকল রোজাদার তা তে প্রবেশ করার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে আর কেউ তাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহীহ বুখারী)
তিরমিজি শরীফের বর্ণনায় আরও আছে-যে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে কখনোই পিপাসার্ত হবে না। রাইয়ান শব্দের শাব্দিক অর্থই হচ্ছে ‘পানিতে পূর্ণ’।
ভেবে দেখুন! রোজাদার মুসলমানগণ যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে তাকে রাইয়ান নামে নামকরণ করা কতটা নান্দনিক ও আশাতীত ব্যাপার। আর বেহেশতে প্রবেশ করার পর কখনো পিপাসার্ত না হওয়ার প্রতিদানটাও কী যথাযথ পুরস্কার। আসল পুরস্কার তো আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে দেবেন যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই আসুন, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অনুযায়ী সংযম ও তাক্বওয়ার পরীক্ষা দিয়ে রোজা রেখে পুরস্কার নিই তাঁর হাতেই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে রাইয়ানের জন্য কবুল করুন। তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (আমীন)