লাল সবুজের দেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:২৪:২৪ অপরাহ্ন

আরিফুর রহমান সেলিম
সাকিব পতাকার দিকে তাকিয়ে অবাক বিস্ময়ে চোখ বন্ধ করে রাখে দুই মিনিট। সে বুঝতে পারেনা বাতাসে পতাকার কেন মাত্র দুটো রং। কেন চারিদিকে এত সবুজ আর মাঝখানে গোলাকার লাল রং। কেন সাকিবের স্কুলে প্রতিদিনই টাঙ্গানো হয় এই পতাকাটা। স্কুলের স্যার ম্যাডামকে সাহস করে প্রশ্নটা করতে গিয়েও করেনা সাকিব। মনে মনে প্ল্যান করে বেড়াতে গিয়ে শুভ ভাইকে সে এই প্রশ্নটা করবে।
শুভর বয়স সাত বছর। এবার ক্লাস টুয়ে পড়ে। ভীষণ চঞ্চল। একমাত্র বোন শুভকে নিয়েই কাটে তার সারা বেলা খেলাধুলা, স্থলে যাওয়া, বাসায় টিচারের কাছে পড়া এটাই তর কাজ। ও হ্যা তার আরো একটা কাজ আছে সেটা হলো মাকে প্রশ্ন করা । দিনের মধ্যে মাকে একশো প্রশ্ন তার করা চাইই চাই।
আম্মু আকাশে কয়টা রং, ঘড়ির পিছনে লেজ থাকে কেন? টিকটিকি টিক টিক করে কেন? দাদু চশমা পরে কেন? এ রকম কতশত প্রশ্ন। আম্মু এসব প্রশ্ন শোনে আর হাসে। হেসে হেসে উত্তর দেয়। বাচ্চাদের এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাহলে বাচ্চাদের মনে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। তাই ওর মা কখনো শুভর প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হয় না। দুই দিন পরেই যোলোই ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। শুভদের স্কুলে তাই অনেক আয়োজন কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলা, উপস্থিত বক্তৃতা, গান, নাচ আর খেলাধুলার প্রতিযোগিতা। ও গত বছর বক্তৃতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। সে যখন বক্তৃতায় বললো ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ তখন সবার শরীরের পশম দাড়িয়ে গেলো। হঠাৎ মনে হলো যেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠই শোনা গেলো। ভাষণ শোনে সবাই করতালি দিয়েছিলো। ও খুব খুশি হয়েছিলো। তাই এবারো সে উপস্থিত বক্তৃতায় নাম দিয়েছে।
স্কুলে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রধান শিক্ষক প্রথমেই বক্তৃতায় স্মরণ করলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও ত্রিশ লক্ষ শহীদকে। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা লাভ করেছি স্বাধীন দেশ ও লাল সবুজের পতাকা। পতাকার দিকে তাকিয়ে প্রধান শিক্ষক কাঁদতে কাঁদতে বললেন এই পতাকা ত্রিশ লক্ষ প্রাণের দামে কেনা। তোমরা সেটা মনে রাখবে। এই পতাকার মান রাখবে। চির সবুজ শ্যামল বাংলার প্রকৃতি হচ্ছে সবুজ রং আর পতাকার মাঝের যে লাল বৃত্ত সেটাই হলো শহীদদের রক্ত। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার কারণেই আমরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি আর নয় মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয় লাভ করি। শুভর প্রধান শিক্ষক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার কান্না ভেজা কণ্ঠের বক্তৃতা শুনে সবাই কাঁদতে লাগল। তার পর শুরু হলো খেলা প্রথমেই বিস্কুট খেলা। ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়ে এসে বিস্কুট কামড় দিয়ে ধরতে লাফাতে লাগলো। তাদের হাত বাঁধা। ক্লাস ওয়ানের একটা ছেলের লাফাতে গিয়ে প্যান্ট খুলে গেলো। ছাত্রছাত্রী শিক্ষক সবাই তখন হি হি হি করে হাসতে লাগল।
বিস্কুট খেলা আর উপস্থিত বক্তৃতায় শুভ এবারো প্রথম হলো। পুরস্কার হিসেবে শুভ পেলো একটি গল্পের বই ‘পুঁটি হলো প্রধানমন্ত্রী আর একটা জগ। বইটি পেয়ে শুভ খুব খুশি হলো। কারণ বইয়ের নামটি খুব সুন্দর ও মজার।
বিজয় দিবসের পর স্কুল বন্ধ দিয়ে দিল। সাকিবদের স্কুলও বন্ধ। সাকিব তাই বন্ধের ছুটিতে তার একমাত্র খালামনির বাড়িতে বেড়াতে এলো। এখানে এলে তার খুব ভালো লাগে তার খালাতো বোন শুভা তাকে অনেক আদর করে আর আপেল, আপেল বলে ডাকে। খালাতো ভাই শুভর সাথে ক্রিকেট খেলা যায়। বাড়ির পাশে মাঠ দৌড়াদৌড়ি আর লুকোচুরি খেলা যায়। খালামণির হাতের মজার রান্নাও সাকিবের খুব প্রিয়।
হঠাৎ সাকিবের মনে পড়লো পতাকার কথা। পতাকার দুটো রঙের কথা। সেই লাল সবুজের রঙের কথা। সাকিব শুভকে বললো ভাইয়া বলতো পতাকার রং লাল আর সবুজ কেন? শুভ তখন বললো সবুজ হলো আমাদের সবুজ প্রকৃতি আর লাল হলো শহীদদের রক্তের রং যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাই বাংলাদেশকে বলা হয় লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশ।