logo
৯ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • সিলেট বিভাগ
    • সিলেট
    • সুনামগঞ্জ
    • হবিগঞ্জ
    • মৌলভীবাজার
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • ক্রীড়া
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • ডাক বিনোদন
  • প্রবাস
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • অন্যান্য
  • উপসম্পাদকীয়
  • সম্পাদকীয়
  • অন্যান্য
    • শিক্ষা
    • সাহিত্য
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • স্বাস্থ্য
    • শিশু মেলা
    • ইতিহাস- ঐতিহ্য
    • সাজসজ্জা
    • লাইফস্টাইল
    • মহিলা সমাজ
    • পাঁচ মিশালী
    • আমাদের পরিবার
  • ই-পেপার
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • প্রথম পাতা
  • শেষ পাতা
  • সিলেট
  • মৌলভীবাজার
  • সুনামগঞ্জ
  • হবিগঞ্জ
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • উপসম্পাদকীয়
  • ফিচার
  • অন্যান্য দেশ
  • যুক্তরাজ্য
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • অর্থনীতি
  • করোনা
  • ক্রীড়া
  • অন্যান্য খেলা
  • ক্রিকেট
  • ফুটবল
  • স্থানীয় ক্রিকেট
  • ডাক বিনোদন
  • ধর্ম
  • অন্যান্য
  • ইসলাম
  • পাঁচ মিশালী
  • প্রবাস
  • বিজ্ঞপ্তি
  • মহিলা সমাজ
  • মাল্টিমিডিয়া
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • লাইফস্টাইল
  • ইতিহাস- ঐতিহ্য
  • শিশু মেলা
  • সাজসজ্জা
  • শিক্ষা
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য
  • শিল্প
  • স্বাস্থ্য
  • বিশেষ সংখ্যা
  • Terms and Conditions
  • Privacy Policy
  • Contact
শিরোনাম
  • সৈয়দা জেবুন্নেছা হকসহ ৫ নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক পেলেন
  • তিনি সংগ্রামমুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
  • লক্ষ্য অর্জনে ধৈর্য ধরে কাজ করবে ঢাকা ও বেইজিং
  • গ্রেনেড ছুঁড়ে আওয়ামী লীগকে দমিয়ে রাখা যাবে না
  • নগরীতে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে চরম নৈরাজ্য
  1. হোম
  2. সাহিত্য

শাস্তি-পুরস্কার ও জাহাঙ্গীরের প্রশাসন


সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২২, ৫:৪২:৪২ অপরাহ্ন
শাস্তি-পুরস্কার ও জাহাঙ্গীরের প্রশাসন

মাহমুদুর রহমান
মধ্যযুগের শাসন বা রাজতন্ত্রে অভিজাতদের প্রভাবের পাশাপাশি স্বজনপ্রীতি অন্যতম। মোগল আমলে অভিজাতদের সঙ্গে বাদশাহর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রিয়পাত্র ও পরিবার ভূমিকা পালন করত। জাহাঙ্গীরের শাসনামলে অভিজাতদের ক্ষেত্রে একটি পারিবারিক অংশ সৃষ্টি হয়। তবে তা জাহাঙ্গীরের সিংহাসনে আরোহণের বছর দশেক পরের কথা। এখানে নূরজাহান, তার পিতা ইতিমাদ-উদ-দৌলা (গিয়াস বেগ), নূরজাহানের ভাই আসফ খান (আবুল হাসান) ও খুররমকে নিয়ে একটি চক্রের কথা বলা হয়। মূলত ইতিহাসবিদ বেণী প্রসাদ এ তত্ত্ব দিয়েছেন। মহাবত খাঁর পদোন্নতিতে বাধা, খান-এ-আজমের কারারুদ্ধ হওয়ার পেছনে এ চক্রের হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ নূরুল হাসান তথ্যসহ যুক্তি দিয়েছেন যে বাস্তবে এমন কোনো চক্র ছিল না। তার যুক্তি মেনে নিলেও ইতিমাদ-উদ-দৌলা ও আসফ খানের মনসব (যথাক্রমে ছয় হাজারি ও চার হাজারি) লক্ষ করলে বোঝা যায় তারা এ সময় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। মনসবের পাশাপাশি দরবারের অন্যান্য ক্ষেত্রে আসফ খানের পদোন্নতি হতে থাকে এবং নূরজাহানের পরিবারের সম্পদও বাড়ে। মূলত সে সময় এরাই জাহাঙ্গীরের বাদশাহির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে নূরজাহান অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন। জাহাঙ্গীর নিজেই আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে তিনি নূরজাহানের ওপর নির্ভর করতেন। গিয়াস বেগ ও আবুল হাসানও যথাক্রমে দাপ্তরিক ও সেনা বিভাগে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের জনপ্রিয় ধারায় এ চক্রকে যেভাবে বিশেষায়িত করা হয়, বাস্তবতা ছিল সে তুলনায় ভিন্ন। ‘মদ্যপ ও অলস’ বলে পরিচিত হলেও মোগল সিংহাসন লাভ করার অব্যবহিত পর থেকেই জাহাঙ্গীর তার দরবার ও রাজ্যের অভিজাতদের সঙ্গে উপযুক্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপকে আপাতদৃষ্টিতে স্বজনপ্রীতি, নিষ্ঠুরতা, লোক দেখানো এমনকি ভুল মনে হলেও সময় ও বাস্তবতা অনুসারে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাদশাহ জাহাঙ্গীর।

মোগল সাম্রাজ্যে দরবারি তথা অমাত্যদের সঙ্গে বাদশাহের কূটনৈতিক সম্পর্ক কৌতূহলোদ্দীপক। ক্ষমতায় থাকাকালীন, এমনকি ক্ষমতা লাভের আগেও তারা নানাভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতেন। এর উদ্দেশ্য মূলত নিজের অবস্থানকে সুসংহত করা। বাদশাহ নূর উদ-দ্বীন জাহাঙ্গীরও আকবরের উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরির চেষ্টা থেকে অভিজাতদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর সিংহাসন লাভ করেছিলেন তিনি। সিংহাসন লাভের পর আমির, গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ও নিজ সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেন। অভিজাতদের সঙ্গে তার এ সম্পর্ক কখনো ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ে, আবার কখনো রাজনৈতিক।

মোগল আমলে রাজতন্ত্র মূলত একক ক্ষমতা দ্বারা চালিত হতো। সেখানে বাদশাহ বা সম্রাটই প্রধান। কিন্তু দরবার, রাজ্য ও শাসনে আমিরদের (অমাত্য) গুরুত্ব ও প্রভাব অনস্বীকার্য। তাদের সমর্থন ছাড়া সিংহাসন ধরে রাখা অসম্ভব। শাহজাদা সেলিমের জন্য এদের সমর্থন ছিল আরো জরুরি। কেননা আকবরের মতো শাসকের পর সবাই একজন ‘যোগ্য’ উত্তরাধিকারীই আশা করতেন। ওদিকে জাহাঙ্গীরের পানাসক্তি সর্বজনবিদিত। এমকি পিতা আকবরকে তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও প্রচলিত ছিল। বিদ্রোহ তিনি করেছিলেন সে কথা সবাই জানে। সেখানে কেউ তার সমর্থক ছিলেন, কেউ ছিলেন বিরোধী। স্বাভাবিক হিসাব বলে, সিংহাসন লাভ করার পর একজন বাদশাহ তার সমর্থকদের পুরস্কৃত করবেন এবং বিরোধীদের দেবেন শাস্তি। কিন্তু জাহাঙ্গীর সে রকম কিছু করেননি। তিনি সমর্থক এবং বিরোধী উভয় পক্ষকে তুষ্ট করে নিজের ক্ষমতা ও মোগল সাম্রাজ্যকে সুসংহত করার চিন্তা করেছিলেন।
শাহজাদা সেলিম যখন মোগল সিংহাসন লাভ করলেন তখনো মোগল প্রশাসন নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘সাম্রাজ্যের ভিত্তি এবং ক্ষমতাবান আমিররা সবাই দ্বিধায় ভুগছিলেন এবং প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো সংকট ছিল। তারা এমন কিছু করার কথা ভাবছিলেন যা সাম্রাজ্যের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই আনতে পারত না।’
দরবারের এ অবস্থায় জাহাঙ্গীর প্রথমেই তার পিতার আমলের কর্মচারীদের নিজ নিজ পদের নিশ্চয়তা দেন। অতঃপর একটি ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেন যার অর্থ, আগে যারা বর্তমান বাদশাহর বিরোধী ছিলেন তাদের কঠোর কোনো শাস্তি দেয়া হবে না। জাহাঙ্গীর এখানেই ক্ষান্ত হননি। সমর্থক ও বিরোধী, উভয় পক্ষের আমিরদের তিনি এনাম ও খেলাৎ প্রদান করেন এবং বহু আমিরকে পদোন্নতি দেয়া হয়। এখানে খান-এ-আজম ও মান সিংহের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। উভয় আমির ছিলেন জাহাঙ্গীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা জাহাঙ্গীরের পুত্র খুসরোকে আকবরের উত্তরাধিকারী হিসেবে মোগল সিংহাসনে বসানোর চিন্তা ও চেষ্টা করেছিলেন।
তবে স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের তিনি উদারহস্তে দান করেছেন। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের বাল্য সহচর মুহম্মদ শরীফ খানের নাম প্রথমে আসে। বিদ্রোহকালীন আকবর তাকে সেলিমের কাছে প্রেরণ করেছিলেন যেন তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু শরীফ খান এলাহাবাদে থেকে যাওয়াই মনস্থ করেন। সিংহাসন লাভের পর জাহাঙ্গীর তার এ সমর্থক ও সহচরকে পাঁচ হাজারি মনসব প্রদানের পাশাপাশি তাকে উজিরের পদ প্রদান করেন। এখানেই শেষ নয়, তাকে রীতিমতো আমির উল-ওমরা হিসেবে ভূষিত করা হয়।
পরিচিত বা ক্ষমতাসীন অভিজাতদের পাশাপাশি আগে অবহেলিত অভিজাতদের প্রতিও তিনি উদারতা দেখিয়েছিলেন। মোগল দরবারে তুর্কি ও পারসিক অভিজাতদের প্রভাব ছিল বেশি। আফগানরা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিলেন। তাদের বিশ্বাস করা হতো না। জাহাঙ্গীর এই আফগানদের প্রতি উদার হয়ে তাদের আনুগত্য লাভের চেষ্টা করেন। তিনি পীর খানকে খান জাহান উপাধি প্রদান করেন। তিনি পরবর্তী সময়ে লেখেন, ‘তিনি আফগানদের প্রতি এতটা মনোযোগ দেন যে তারা বিরূপ মনোভাব ত্যাগ করে নিজেদের আনুগত্য প্রদান করে এবং অবস্থা এমন হয় যে তারা জীবন দিতেও দ্বিধা করত না। তারা সর্বোৎকৃষ্ট সেবার মাধ্যমে নিজেদের অভিজাতদের কাতারে নিয়ে আসেন এমনকি বাদশাহর সহচরেও পরিণত হন।’ অর্থাৎ তিনি নতুন অভিজাত শ্রেণী তৈরিও করেছিলেন।
জাহাঙ্গীর তার উদারতার সর্বাধিক প্রকাশ করেছিলেন বীর সিং দেওর প্রতি। আবুল ফজলের হত্যাকারী এ বুন্দেলাকে তিনি ওয়াতান জায়গির প্রদান করেন। এর অর্থ দান করা অঞ্চলে তার আধা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত থাকবে। জাহাঙ্গীরের শাসনামলে তিনি অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। বীর সিংকে পুরস্কৃত করার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরের পক্ষ থেকে আবুল ফজলের পরিবারকেও উদারতা দেখান। তিনি আবুল ফজলের পুত্র আবদুর রহমানকে দুই হাজারি মনসব প্রদান করেন। জাহাঙ্গীর জানতেন যে মোগল দরবারে এ অভিজাত পরিবারের প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে ফজলের পুত্রকে মনসব দেয়ার মাধ্যমে এ পরিবারের প্রতি তার বিরূপ মনোভাব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তিনি অভিজাতদের একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন যে এখন থেকে তাকে সমর্থন দিলে রাজানুকূল্য লাভ করবেন।
মোগল শাহজাদারাও মূলত মোগল অভিজাতদেরই অংশ। জাহাঙ্গীর তার পুত্রদের প্রতিও কূটনৈতিক সুলভ আচরণ করেছিলেন। আকবরের সময় থেকে খুসরোর প্রতি এক ধরনের রাজনৈতিক সমর্থন স্পষ্ট ছিল। জাহাঙ্গীর ক্ষমতায় এসে খুসরোর তুলনায় পারভেজকে গুরুত্ব দেন। পারভেজকে খেলাৎ, মণি-রত্ন, হাতি, পারস্যের ও তুর্কি ঘোড়া উপহার দেয়া হয়। এর মাধ্যমে খুসরোর সমর্থক অভিজাতদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চার করা হয়। এখানেই শেষ নয়, তিনি মেওয়ারের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান শুরু করেন, যেখানে ২০ হাজার সেনাদলের সেনাপতি করে পারভেজকে পাঠানো হয়। এ অভিযানে পারভেজের সঙ্গে এমন অনেক অভিজাতকে তিনি প্রেরণ করেন যারা একসময় খোলাখুলিভাবে খুসরোকে সমর্থন করে এসেছেন। অভিযান সফল হলে জাহাঙ্গীরের জন্য তা হতো বিরল সাফল্য, কেননা আকবরও মেওয়ার দখল করতে পারেননি। অন্যদিকে অভিযান ব্যর্থ হলে সে দায় খুসরোর সমর্থকদের কাঁধে চাপানো হতো।
খুররমের (পরবর্তী সময়ে শাহ জাহান) প্রতিও তিনি উদারতা দেখিয়েছেন। খুররমকে যে ধরনের উপহার ও আনুষ্ঠানিকতা দেয়া হয় তা এর প্রমাণ। এমনকি আত্মজীবনীতে জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন যে খুসরো নয়, খুররমই আকবরের প্রিয় ছিলেন। জাহাঙ্গীর লিখেছেন, ‘বহুবার তিনি (আকবর) বলেছেন, তার (খুররম) সঙ্গে তোমার অন্য পুত্রদের কোনো তুলনা চলে না। আমি তাকেই আমার যোগ্য পুত্র (উত্তরাধিকারী অর্থে) মনে করি।’
মোগল আমলের দরবারি অভিজাতদের মধ্যে ধর্ম ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাবুরের আমল থেকেই মোগল সেনা ও অভিজাতদের মধ্যে পারস্য প্রভাব ছিল, যাদের অনেকে ছিলেন শিয়া। দরবারে স্বাভাবিকভাবে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব (স্পষ্ট না হলেও) একটি সাধারণ বিষয় ছিল। এর মধ্যে আকবরের পক্ষ থেকে একটি নতুন ধর্মসদৃশ দর্শন (দ্বীন-ই-ইলাহি কোনো ধর্ম ছিল না তা আধুনিক গবেষকরা স্বীকার করেন) উপস্থাপনা করলে মোগল রাজনীতিতে ধর্ম একটি নিয়ামক হয়ে ওঠে। জাহাঙ্গীর সিংহাসনে বসে তার পিতার বহু পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তিনি দ্বীন-ই-ইলাহিকে পুরোপুরি নাকচ করে দেননি বা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি।
আকবরের সময় থেকেই মোগল ভারতে জেসুইটদের আগমন হয়েছিল। ফাদার মনসারেত তো রীতিমতো আকবরের পুত্রদের (জাহাঙ্গীরসহ) সঙ্গলাভ করেছেন। তাদের মতে, জাহাঙ্গীরের আচরণ খ্রিস্টানদের মতো ছিল। যদিও পাদ্রিরা নিজেদের প্রভাবের প্রমাণ দিতে গিয়ে এসব লিখেছেন, জাহাঙ্গীর মূলত মোগল ভারতে ধর্মীয় সহাবস্থানের পক্ষে ছিলেন। তার সমসাময়িক প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর-উজবেক, সাফাভি-তুলনায় এ সিদ্ধান্ত ছিল আধুনিক। সিংহাসনে আরোহণের পরই তিনি ঘোষণা করেন তার বাদশাহিতে শিয়া, সুন্নি, ইহুদি, জেসুইট সবাই সহাবস্থান করবে। তিনি শেখ আহমদ লাহোরীকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন এবং রাজ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার ব্যাপারে জনসম্মুখে ঘোষণা করেন।
ধর্মীয় প্রভাবশালী অভিজাতদের সঙ্গেও জাহাঙ্গীর সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। ভারতে চিশতিয়া তরিকার প্রভাব ছিল এবং জাহাঙ্গীরের জন্মের ক্ষেত্রে শেখ সেলিম চিশতীর ‘দোয়া’র বিষয়টি অজানা নয়। জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরোহণের পর চিশতিয়া এবং নখশবন্দিয়া উভয় তরিকার প্রতি উদারতা দেখান। বলা হয় নখশবন্দিয়া তরিকার শেখ হুসাইন জামি স্বপ্নে দেখেছিলেন যে জাহাঙ্গীরের হাতেই ক্ষমতা যাবে এবং তার দায়িত্বের মর্যাদা সম্পর্কে তাকে সতর্ক করা হয়। মোগল অভিজাতদের মধ্যে জেসুইটদের যুক্ত করার সুযোগ নেই। কিন্তু আকবরের সময় থেকে জেসুইটরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সাম্রাজ্যের কোনো কোনো অঞ্চলে তাদের প্রভাব ছিল।
মোগল বাদশাহরা গুণীর কদর করার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যক্তিকে সুযোগ দিতেন। জাহাঙ্গীরের সময়ের মোগল দরবারে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয়র আগমন ঘটে। স্যার টমাস রো এর অন্যতম। জাহাঙ্গীর তার শাসনে ইউরোপীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের একটি ইচ্ছা তার মধ্যে ছিল। টমাস রোকে তাই জাহাঙ্গীর তার দরবারে বিশেষ সমাদর করেন। বেনিয়া গোষ্ঠীর মধ্যে পর্তুগিজরাও ছিল, তবে তাদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের সংঘাত সৃষ্টি হয়। আকবরের মা হামিদা বেগম ও আকবরের স্ত্রী রুকাইয়া সুলতান বেগমের জাহাজ আরব সাগরে বাণিজ্য করার পাশাপাশি হজযাত্রী পরিবহন করত। এ রকম একটি জাহাজ সুরাটে পর্তুগিজরা দখল করলে জাহাঙ্গীর তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন। ক্ষমতা সুসংহত করার ক্ষেত্রে অভিজাতদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি প্রয়োজনে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও জাহাঙ্গীর কঠোরহস্ত হয়েছিলেন এবং এক্ষেত্রে তার ক্রোধের প্রথম বলি হয়েছিলেন তারই পুত্র খুসরো।
কথিত আছে উত্তরাধিকারী হিসেবে জাহাঙ্গীরের তুলনায় খুসরোকে পছন্দ করতেন আকবর। খুসরোর পক্ষে মোগল অভিজাতদের অনেকেই দাঁড়িয়েছিলেন। মান সিংহ ছিলেন খুসরোর মামা। জাহাঙ্গীর সিংহাসনে বসে তার এ ‘আত্মীয়’কে পুরস্কৃত করার পাশাপাশি নিজ নিরাপত্তার খাতিরে দরবার থেকে দূরে, বাংলায় প্রেরণ করেন। কিন্তু খুসরোর আরেক সমর্থক মীর্জা আজিজ কোকা (খুসরোর শ্বশুর) তখন দরবারেই ছিলেন। ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে খুসরো একটি বিদ্রোহের সূচনা করেন। ৬ এপ্রিল তিনি ৩৫০ জন ঘোড়সওয়ার সেনা নিয়ে সেকেন্দ্রায় আকবরের সমাধিতে যাওয়ার ভান করেন। তিন হাজার সেনা নিয়ে মথুরায় তার সঙ্গে হুসেন বেগ যোগদান করেন। সেখান থেকে মিলিত বাহিনী লাহোরের দিকে যাত্রা করে। পানিপথে আবদুর রহীমের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। আবদুর রহীম খুসরোকে তার সমর্থন দেন। তাদের লক্ষ্য ছিল লাহোর দখল করে সেখান থেকে খুসরোকে বাদশাহ ঘোষণা করা। কিন্তু লাহোরের প্রশাসক দিলওয়ার খানের প্রতিরোধের কারণে লাহোর দখল করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। নয়দিন লাহোর দুর্গ অবরোধ করে রাখা হয়।
জাহাঙ্গীর একাধিকবার বার্তা প্রেরণ করলেও খুসরো কর্ণপাত করেননি। মীর্জা আজিজ কোকা ও আবদুর রহীমের মতো মোগল অভিজাত ও সেনাপতিদের সাহায্য লাভ করে নিজেকে অজেয় মনে করেছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীরের বাহিনীর কাছে দ্রুতই হার স্বীকার করতে হয় তাকে। মূলত জাহাঙ্গীর নিজেই তার সেনা নিয়ে এসেছিলেন পুত্রকে শাস্তি দিতে। অন্যদিকে খুসরোর বাহিনীর বেশির ভাগই ছিল হুজুগে বিদ্রোহ করা। জানা যায়, তার বাহিনীতে অনেক কিশোর-যুবকও যোগ দিয়েছিল, যাদের কোনো রকম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না। হার তাই ছিল তাদের নিয়তি।
লাহোরে কামরানবাগে খুসরোকে তার পিতার সামনে হাজির করা হয়। শাস্তি হিসেবে খুসরোর বাহিনীর ধৃত সৈন্যদের শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মীর্জা আজিজ কোকা এবং আবদুর রহীম এ সময় থেকে জাহাঙ্গীরের নেকনজর হারান। খুসরোকেও ছাড় দেয়া হয়নি। তাকে প্রথমত হাতির পিঠে বসিয়ে তার সমর্থকদের দেয়া সব ধরনের শাস্তি দেখতে বাধ্য করা হয়। শাস্তি হিসেবে খুসরোকে আংশিকভাবে অন্ধ করে দেয়া হয়। কথিত আছে তার চোখে আলপিন ফুটানো হয়েছিল। অন্য মতে খুসরোর চোখের পাতা সেলাই করে দেয়া হয়, যেন পরে কখনো সেলাই খুলে দিলে দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে দরবার ও রাজ্যের অভিজাতদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর যেমন উদার ব্যবহার করেছেন, প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দিতেও পিছপা হননি। আজিজ কোকা ও রহীম নিঃসন্দেহে মোগল অভিজাত ছিলেন। আজিজ কোকা ছিলেন জাহাঙ্গীরের দুধভাই এবং আবদুর রহীম ছিলেন বৈরাম খানের পুত্র। দীর্ঘ সময় তিনি মোগল সেনাবহিনীর অন্যতম প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ ক্ষমতা সুসংহত করতে অভিজাতদের সঙ্গে যখন যে ধরনের আচরণ করা প্রয়োজন হয়েছে, বাদশাহ জাহাঙ্গীর তা-ই করেছেন। খুসরোর প্রতি কঠোর হস্ত জাহাঙ্গীর একসময় খুররমের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছেন, কিন্তু যখন তাকে হুমকি মনে হয়েছে তিনি কঠোর হয়েছেন।

শেয়ার করুন




সাহিত্য এর আরও খবর
চেনা শহরে অচেনা মানুষ

চেনা শহরে অচেনা মানুষ

জীবনের পরাজয়

জীবনের পরাজয়

ষোলআনা চৌধুরীর বয়ান

ষোলআনা চৌধুরীর বয়ান

সর্বশেষ সংবাদ
মহররম : হাহাকারের বেদনায় স্মৃতিমধূর মাস
মহররম : হাহাকারের বেদনায় স্মৃতিমধূর মাস
পবিত্র আশুরার চেতনা
পবিত্র আশুরার চেতনা
সারাদেশে ২ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা বিএনপি’র
সারাদেশে ২ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা বিএনপি’র
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের কল্যাণে পরিচিতি পেলো জগন্নাথপুরের ইয়াসমিন
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের কল্যাণে পরিচিতি পেলো জগন্নাথপুরের ইয়াসমিন
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ওয়ার্কার্স পার্টির মানববন্ধন
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ওয়ার্কার্স পার্টির মানববন্ধন
রত্নগর্ভা মা সুকৃতি বালা ভৌমিকের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কাল
রত্নগর্ভা মা সুকৃতি বালা ভৌমিকের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কাল
লিডিং ইউনিভার্সিটির সামার সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন ১৭ আগস্ট
লিডিং ইউনিভার্সিটির সামার সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন ১৭ আগস্ট
<span style='color:#000;font-size:18px;'>ভিসি অ্যাওয়ার্ড পেলেন শাবির তিন গবেষক</span><br/> বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে গবেষণা বৃদ্ধির বিকল্প নেই ——–শাবি ভিসি
ভিসি অ্যাওয়ার্ড পেলেন শাবির তিন গবেষক
বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে গবেষণা বৃদ্ধির বিকল্প নেই ——–শাবি ভিসি
বিশ্ববাজারে আরও কমলো জ্বালানি তেলের দাম
বিশ্ববাজারে আরও কমলো জ্বালানি তেলের দাম
বঙ্গমাতার জীবন থেকে বিশ্বের নারীরাও শিক্ষা নিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গমাতার জীবন থেকে বিশ্বের নারীরাও শিক্ষা নিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
বিমানবন্দরে যাত্রীকে চড় দেওয়ায় কাস্টমস কর্মকর্তা বরখাস্ত
বিমানবন্দরে যাত্রীকে চড় দেওয়ায় কাস্টমস কর্মকর্তা বরখাস্ত
খোলাবাজারে ডলারের দাম ছাড়াল ১১৫ টাকা
খোলাবাজারে ডলারের দাম ছাড়াল ১১৫ টাকা
দেশে করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৯৬
দেশে করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৯৬
<span style='color:#000;font-size:18px;'>সকল আসামি পলাতক </span><br/> জগন্নাথপুরের দুলা মিয়া হত্যা মামলায় ১ জনের আমৃত্যু ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
সকল আসামি পলাতক
জগন্নাথপুরের দুলা মিয়া হত্যা মামলায় ১ জনের আমৃত্যু ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
শাবিতে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন
শাবিতে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি : রাগীব আলী
সম্পাদক : আব্দুল হাই

কার্যালয় : মধুবন সুপার মার্কেট (৫ম তলা), বন্দরবাজার, সিলেট-৩১০০ ।
ফোন : পিএবিএক্স +৮৮ ০২৯৯৬৬৩১২৩৪, বিজ্ঞাপন: +৮৮ ০২৯৯৬৬৩৮২২৭
ই-মেইল: sylheterdak@yahoo.com
বিজ্ঞাপন : sylheterdakadv@gmail.com

  • Terms and Conditions
  • Privacy Policy
  • Contact

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh

Go to top