শিক্ষায় আ’লীগের রুহেল, মামলায় পাপলু সম্পদে বিএনপির শাহীন এগিয়ে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জানুয়ারি ২০২১, ২:১৮:৫১ অপরাহ্ন

গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন
মাহফুজ আহমদ চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ (সিলেট) থেকে :
গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ৩০ জানুয়ারী। সেই নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাংলাদেশ আওয়ীমী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহেল আহমদ ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন। তাদের বিপরীতে ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল জগ প্রতীক ও সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে। নির্বাচন কমিশনে এ চার প্রার্থীর দাখিলকৃত হলফনামায় সর্বাধিক মামলা রয়েছে সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুর বিরুদ্ধে। স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিনের। শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ রুহেল আহমদ।
হলফ নামায় উল্লেখ রয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ রুহেল আহমদ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক , তার হলফনামা সূত্রে আরো জানা যায়, অতীতে তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারী মামলা ছিলো যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। রুহেল আহমদের পেশা ব্যবসা। তার বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে নগদ ২৮ হাজার টাকা। স্ত্রীর রয়েছে ৩ লক্ষ ২০হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ২লক্ষ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং ব্যবসায় পুঁজি রয়েছে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ৪ শতক কৃষি ও ৪ শতক অকৃষি জমি।
বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন দাখিলকৃত হলফনামায় নিজেকে স্ব-শিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে, যা বিচারাধীন। প্রাইভেট বিনোদন সেন্টার, ভূমি উন্নয়ন ও বিক্রয় সংক্রান্ত এবং কমিশন এজেন্ট ব্যবসা রয়েছে তার। গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিনের বার্ষিক আয় ভাড়া থেকে ১লক্ষ ৪১ হাজার ৯শত ৬০ টাকা, ব্যবসা থেকে ৪লক্ষ ২হাজার ২শ’ ৪ টাকা, চাকুরী থেকে ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ১৪লক্ষ ৫১ হাজার ৮শ ৬১ টাকা। স্ত্রীর রয়েছে ৭৫ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, এক লক্ষ ২০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ১লক্ষ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে ৫০০ শতক কৃষি জমি, যৌথ মালিকানাধীন ৬৫০ শতক কৃষি ও ১২৫ শতক অকৃষি জমি রয়েছে।
বর্তমান মেয়র মো. আমিনুল ইসলাম রাবেল তার হলফনামায় নিজেকে এসএসসি পাশ উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। পেশায় তিনি বেসরকারি চাকুরী উল্লেখ করেছেন। তার অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ ৭লক্ষ ৮৪ হাজার ৪শ ১০টাকা রয়েছে। মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা থেকে বার্ষিক প্রাপ্ত আয় হচ্ছে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানা থেকে ৩৪ শতক কৃষি ও ৩ শতক অকৃষি, বাড়ি থেকে সাড়ে ৩শতক জমি রয়েছে। এ বিবরণীতে তার কোন স্বর্ণালংকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, আসবাপত্র ও তার স্ত্রীর সম্পদের কোন উল্লেখ নেই।
সাবেক পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এস এস সি। তার বিরুদ্ধে ১৩টি ফৌজদারি মামলা ছিল। এর মধ্যে ১১টি থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। বর্তমানে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ধারাধীন দুটি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। তার পেশা ব্যবসা (ক্যাবল নেটওয়ার্ক, রড-সিমেন্ট, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, বিটুমিন, পাথর সরবরাহকারী ও ঠিকাদারী এবং কাপড়ের ব্যবসা)। তার নামে রয়েছে লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে এক লক্ষ টাকা মূল্যের একটি সিঙ্গেল ব্যারেল শর্টগান ও দেড় লক্ষ টাকা মূল্যের একটি পিস্তল। পাপলুর বাৎসরিক আয় দোকান ভাড়া থেকে এক লক্ষ ৫৯ হাজার ৭শ’ ৫ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৬শ’ ৭৫ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আয় এক লক্ষ ৫১ হাজার ৬শ’ ৩৩ টাকা। নিজের নামে অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ৮শ’ ৯২ টাকা। রয়েছে ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি নোহা মাইক্রোবাস। আছে দেড় লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, এক লক্ষ ১০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে যৌথ মালিকানা থেকে ১১৬ শতক কৃষি জমি ও ৯ দশমিক ৭৬ শতক অকৃষি জমি পেয়েছেন দানপত্রে, ৮ দশমিক ৫৭ শতক ক্রয়সূত্রে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে আরো ৩ শতকের মালিক তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৮শ’ ৮৪ টাকা। আর সিসি ও হোম লোন এবং দুই ব্যাংকে ব্যক্তিগত দেনা ৮১ লক্ষ ৩৮ হাজার ১শ’ ২৩ টাকা।
উল্লেখ্য, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ৪ মেয়র প্রার্থী, ৯টি ওয়ার্ডে ৪৭ পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩টি ওয়ার্ডে ১০ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২২ হাজার ৯শ’ ১৬ জন ভোটার রয়েছেন। পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৬শ’ ৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৩শ’ ১৯ জন।