logo
২১শে এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • সিলেট বিভাগ
    • সিলেট
    • সুনামগঞ্জ
    • হবিগঞ্জ
    • মৌলভীবাজার
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • ক্রীড়া
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • ডাক বিনোদন
  • প্রবাস
  • শিক্ষা
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • অন্যান্য
  • মুক্তমত
  • সম্পাদকীয়
  • অন্যান্য
    • সাহিত্য
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • স্বাস্থ্য
    • শিশু মেলা
    • ইতিহাস- ঐতিহ্য
    • সাজসজ্জা
    • লাইফস্টাইল
    • মহিলা সমাজ
    • পাঁচ মিশালী
    • আমাদের পরিবার
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
  • প্রথম পাতা
  • শেষ পাতা
  • সিলেট
  • মৌলভীবাজার
  • সুনামগঞ্জ
  • হবিগঞ্জ
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • মুক্তমত
  • ফিচার
  • অন্যান্য দেশ
  • যুক্তরাজ্য
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • অর্থনীতি
  • করোনা
  • ক্রীড়া
  • অন্যান্য খেলা
  • ক্রিকেট
  • ফুটবল
  • স্থানীয় ক্রিকেট
  • ডাক বিনোদন
  • ধর্ম
  • অন্যান্য
  • ইসলাম
  • পাঁচ মিশালী
  • প্রবাস
  • বিজ্ঞপ্তি
  • মহিলা সমাজ
  • মাল্টিমিডিয়া
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • লাইফস্টাইল
  • ইতিহাস- ঐতিহ্য
  • শিশু মেলা
  • সাজসজ্জা
  • শিক্ষা
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য
  • শিল্প
  • স্বাস্থ্য
  • আমাদের পরিবার
  • Terms and Conditions
  • Privacy Policy
  • Contact
শিরোনাম
  • করোনায় আরও ৯৫ জনের মৃত্যু
  • সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
  • সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর
  • বিএনপিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান কাদেরের
  • ‘করোনায় দেশে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে’
  1. হোম
  2. অনলাইন

শিলা


সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ২:৩৩:১৯ অপরাহ্ন
শিলা

আজিজ ইবনে গণি
শিলা কখন এসে পাথরের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি সে। আনমনে চিঠি লিখছে বন্ধু রিপনের কাছে। এতো চুপিসারে অফিস রুমে এসে শিলা ঢুকেছে যে, সে বুঝার কোনো শক্তিই নেই। হঠাৎ শিলার হাত থেকে বই মাটিতে পড়ে যায়। এতে শব্দ হয়। আর এই শব্দে সে সচকিত হয়। তাকায় সম্মুখে।
: আশ্চর্য। তুমি…..? আর কিছু বলতে সাহস পায় না সে। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার উঠে দাঁড়ানো দেখে বই ফেলেই দৌঁড় দেয় বাইরে। সে উঠে দাঁড়িয়ে ছিল যে বইটি নিজ হাতে তাকে তুলে দেবে। কিন্তু হিতে বিপরীত। শিলা তাতে, ভয় পেয়ে যায়। পুরুষের সামনে তার এই প্রথম দাঁড়ানো। অর্থাৎ প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে পাথরেরও একই, প্রথম। তার মামাতো বোন জায়েদার কাছ থেকে শিলার গল্প শুনেছে এবং তাকে ভালো লাগে একথাও নাকি বলেছে। তাই সে-ও প্রেমাগ্রহে বেরিয়ে আসে বাইরে অফিস রুম থেকে। অপলক চেয়ে থাকে তার চলে চাওয়া পথ পানে। মনে মনে কষ্ট পায় এতো কাছে আসলো শিলা অথচ কিছুই বলা হয়নি তাকে। সেও বলেনি, তবে কেন নিরর্থক আগমন? তাই ভেতরে কে যেন গেয়ে উঠে-
তোমার যাবার বেলা
আমার প্রেমের কথা তুলবো না
মন যদি ভেঙ্গে যায় যায়
কিছু বলবো না… …।
শিলাও দূরে গিয়ে ফিরে তাকায় তার পানে। তার মতিগতি প্রতিক্রিয়াটা লক্ষ করে। দেখে এখনও সে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। ছাতার আড়াল থেকে সংক্ষিপ্তাকারে টা টা দিয়ে গলির মোড়ে হারিয়ে যায়। সে-ও হাত উঁচু করে তাকে বিদেয় সম্ভাষণ জানায়।
আজ পাথরের আনন্দের শেষ নাই। অফিস রুমে হাতওয়ালা চেয়ারে গিয়ে বসে আয়েসে। তাকে নিয়ে ভাবতে থাকে আকাশ পাতাল। যাকে প্রতিদিন সে রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখতো আর ছাতা তোলে তার পানে চেয়ে মৃদ হাসতো, যে জায়েদার কাছে বলেছিল, তাকে খুব পছন্দ, আজ সেই মেয়ে সশরীরে অফিসে এসে দেখা করে গেল! এ আনন্দ সে রাখবে কোথায়? এ মুহূর্তে তার পিয়াস পায় এককাপ কফির। পাশেই হোটেল স্বাদ। ডাক পাড়ে বয়কে। অর্ডার নিয়ে গেলে বয় কিছুক্ষণ পরেই অফিসে নিয়ে আসে। টেবিলে রেখে বলে-
: পাথর ভাই, আপনার কফি। এতোক্ষণে পাথর অন্য জগতে। নিথর হয়ে আছে যেন। কোনো নড়াচড়া নেই। বয় মনে মনে ভাবে সে তো আমার দিকে তাকাচ্ছে, অথচ সাড়া-শব্দ নেই ? কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে, সাহস করে বলে-
: পাথর ভাই, আছো না কি? তোমার কফি।
: কফি? হ-হ। -বলে সম্বিত ফিরে পায়। ‘দে দে’ -বলে হাত বাড়ায় কফির দিকে। আয়েসে সুখে পিয়াস মারে কফির কাপে। পৃথিবীর সব সুখ বুঝি এ মুহূর্তে এখানেই।
শিলা এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। প্রতিদিন স্কুলে যাবার পথে ছাতাটি তুলে পাথর রায়হানকে দেখার চেষ্টা করে। ভেরাইটিজ ব্যবসা রয়েছে তার। আলাদা অফিস করে সে বসে থাকে। সম্পূর্ণ ব্যবসা পরিচালনা করে কর্মচারীরা। রাস্তার ধারেই তার অফিস। ফলে শিলা যাওয়া-আসার সময় অফিসের দিকে তাকায়। পাথরের সুন্দর শুভ্র চেহারা, চিমছাম ফিগার দেখে তার খুব পছন্দ হয়েছে তাকে। ভালো লাগার কথা বাহকের মাধ্যমে তার কানেও দিয়েছে। কিন্তু পাথর তাতে পাত্তা দেয় না যদিও সব বুঝতে পারছে। আর এই ভালো লাগাতে হৃদয়ের ছোট্ট ঘরটায় স্থান করে দিয়েছে শিলা। পাথর তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। কিন্তু সে প্রতিদিন ফলো করে মেয়েটা তার অফিসের সামনে এসেই ছাতা তোলে মৃদু হাসে। এ হাসির রহস্য সে বুঝতে পারলেও না বুঝার ভান করে থাকে। তার মনের ছোট্ট ঘরটায় তাকেও যে স্থান করে দিয়েছে তা শিলাকে বুঝতে দেয়নি সে।
পাথর রায়হানের পাশের স্টেশনারী দোকান-ই শিলার ভাই মাহফুজের। কাস্টমার এবং কর্মচারীদের দেখাশুনা এবং সব ধরনের ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যেও বাইরের দিকে তার চোখ আছে। পাথরের দোকানের সামনেই শিলা এসে ছাতাটি তোলে তার দিকে তাকায় এবং হাসে তা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছে সে। আর সেদিন তার অফিস রুমে সরাসরি আগমন তা নিজ চোখে দেখে তো জ্বলে আগুন। যদিও তাদের মধ্যে হাসি বিনিময় ছাড়া আর কিছু নেই কিন্তু মাহফুজ তা মানতে রাজি নয়। সে তাড়া দু’জনকে নিয়ে ভাবছে আকাশ-পাতাল। যা হচ্ছে না তা-ও। অবশেষে সহ্য করতে না পেরে পাথরের বড় ভাইকে একদিন দোকানে খবর দিয়ে এনে বলে-
: তোমার ভাই পাথর আমার বোনের সঙ্গে যা করছে তা সহ্য করার মত নয়।
: কি করছে?
: এখনো বলছো কি করছে? ভাই ভাইয়ের খবর রাখো না, থাকো কোথায়?
: আরে ভাই, তার সঙ্গে তো আমি সব সময় ছায়ার মত থাকতে পারবো না। কি করছে তুমি-ই বলো?
: তুমি তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করো।
: আইচ্ছা ভাই, ঠিক আছে।
মাহফুজের কর্মচারী দিয়ে পাথরকে ডেকে নেয়া হলো তার দোকানে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো মাহফুজ যা বলছে তা কি সত্য? সব কিছু শুনে পাথর তো নিথর হতবাক। কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে সে শিলার হাসা হাসি এবং সেদিন শিলার দোকানে আসা স্বীকার করেছে। আর ওই স্বীকারোক্তিকে কেন্দ্র করে তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। মাহফুজ রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা বিধায় তার কথাই সকলের কাছে গ্রাহ্য হলো। এবং তাকে শাস্তি হিসাবে মাহফুজের কাছে ক্ষমা চাইতে হলো। উপস্থিত সকলের রায়কে সেদিন গুরুত্ব দিতে গিয়ে তাকে মাহফুজের হাত ধরে বলতে হয় এভাবে-
: ভাই সাহেব, আমাকে ক্ষমা করো, আর কোনো দিন এমন কাজ হবে না।
: যাও, ক্ষমা করেদিলাম, তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মত ক্ষমা করবো না তো কি করবো?
সেদিন পাথর ক্ষমা চাইলেও ভেতরে তার অনেক প্রশ্ন, ঢের কষ্ট। আসলে অপরাধী কে? একটুও যাচাই-বাছাই করা হয়নি। একতরফা তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শাস্তিও ঘাড়-পেতে নিতে হয়। কিন্তু সে এর প্রতিবাদ করতে পারেনি। কারণ একটাই মাহফুজ রাজনৈতিক দলের নেতা এবং তার পিছে অনেক গুণ্ডা-পান্ডা আছে। ক্ষমা না চাইলে যদি কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলে। তাই তার চাপা কষ্ট, আর প্রশ্ন ভেতরেই গুমড়ে কাঁদে। এদিকে শিলার কানেও ঘটনাটি গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু তাকে শাসিয়ে কিছু বলেনি মাহফুজ। শুধু একদিন বলেছিল- রাস্তায় কি করো না করো সব আমি দেখি জানি। সেদিন থেকেই সে একটু সতর্ক। এ ঘটনা বিচার কার্যে রূপ নেবে তা সে ভাবতেও পারেনি। মনে মনে অনুতপ্ত হয়, পাথরকে অযথাই ক্ষমা চাইতে হলো। তার কি দোষ? দোষ তো আসলে আমার, তার দোকানে একদিন আমি গিয়েছি এবং তার সামনে গিয়ে আমি-ই তো হেসে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতাম। অথচ আমি বিচার কার্যের বাইরে আমাকে ডাকা হলো না কেন? একতরফা পাথরই দোষী? না, না, তা হয় না। কিন্তু এ কথা তার ভাইকে বলতে সাহস পায় না। তাই তার মনেও ক্রোধ আর কষ্ট জমাটবদ্ধ হয়।
প্রায় পনের-বিশ দিন চলে গেছে ঘটনার। অফিস খুলে আনমনে বারান্দায় পায়চারী করছে পাথর। দোকান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মাহফুজ। ডাক পাড়ে তাকে। ডাক শুনে তো সে চমকে উঠে। ছাৎ করে উঠে যেন বুক। এক অজানা-অচেনা ভয়ে কেঁপে ওঠে তার বুক, সমস্ত শরীর। কি জানি কি হয়। আবার কি নতুন কোনো নালিশ কেউ খাঁড়া করলো?
ডাক শুনে ভয়ার্ত হৃদয়ে কাছে যায় তার। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে-
: ডাকলেন কেন মাহফুজ ভাই।
: কেন ডেকেছি কাছে না আসলে বলি কি বরে?
পা, তার কাঁপছে। শরীরও।
যদি অজানা কোনো ভুলের কারণে কাছে যেতেই চড়-থাপ্পড় খেতে হয়। তাই সে কাছে না গিয়ে একটু ব্যবধান রেখে দাঁড়ায়। মাহফুজ চেয়ার থেকে উঠে থাক থেকে একটি প্যাকেট পাথরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
: ওইটার ভিতর জুতা আছে। জুতাগুলো শিলার। আমাদের বাড়িতে যাও, তাকে দিয়ে এসো।
: ঠিক আছে ভাইসাব। আর কোনো কিছু?
: না। তাড়াতাড়ি যাও। তোমার দোকান আমি দেখবো।
এবার পাথরের গলায় একটু রস হয়। গলা যেন তার শুকিয়ে মরু সাহারা। বড় রকমের কোনো বিপদ থেকে সে বাঁচলো। কিন্তু এরপরও শেষ নয়। মনে মনে অপমানবোধ করে। এতো নীচ একটা কাজ মাহফুজ তাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে যে তার ভাবতেও কষ্ট হয়। মাহফুজের মনের জ্বালা বুঝি এখনো মেটেনি। তার বোনের জুতা বহন করায়ে না কি সমূহ ক্রোধ মিটানোর চেষ্টা করছে। আসলে মাহফুজের মনের উদ্দেশ্যটা কি অনুধাবন করতে পারে না পাথর। কখনও ভাবে, তার বোনের সাথে মোলাকাত করার জন্য কি এ সুযোগ করে দিচ্ছে? মনের কথা উজাড় করে বলার জন্য এ সুবর্ণ সময়? তার জন্য বোধ হয় তার মায়া বেড়েছে। কষ্ট লেগেছে। তাই সে ভেতরে ভেতরে আনন্দবোধ করে এবং একটা রিকশা ডেকে শোধায়-
: নগরগঞ্জ চেনো?
: চিনি।
: তবে চলো।
রিকশায় প্যাটেলে পা রাখে ড্রাইভার। চাপ দেয় এবং সামনের দিকে ঘুরতে থাকে তিনটা চাকা। পাথরের মনও মনের ঘরে নেই। রিকশার চাকার মত ঘুরছে যেন তারও মাথা। কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। যে জুতা এখন সে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে সে জুতা।
পেটাই না কি অবশেষে খেতে হয় শিলার হাতে। কী তার ভাগ্যে সে ভেবে কূল পায় না। হঠাৎ কখন শিলার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছেছে রিক্সা টেরই পায়নি। ডান হাতের চাপ ফেলে ড্রাইভারের কাঁধে। রিক্সা থামায়। টাকা শোধ করে নেমে পড়ে।
দেয়াল ফিরানো বাড়ি। সামনে মনোরম গেইট। গেইটে কলিং বেল সংযুক্ত। তার হাত এগোয় কলিং বেল-এর দিকে শব্দ শুনে বেরিয়ে আসে তানরুজ। মাহফুজের ছোট ভাই।
: আরে পাথর ভাই তুমি? আসো, আসো ভিতরে আসো।
: না, ভিতরে আর যাচ্ছি না। এগুলো শিলার। মাহফুজ ভাই দিয়েছেন।
: তা তো বুঝলাম। যার মাল তার হাতেই তুমি দেবে। আগে ভিতরে আসো তো।
নাছোড়বান্দা তানরুজ। পাথরের হাত ধরে টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল। বড় বড় করে ডাকতে থাকলো শিলাকে। সে ডাক শুনে বেরিয়ে আসে বারান্দায়। তাকে ডাকে-
: চেয়ে দেখো কে এসেছে।
শিলা চোখ তুলে তাকায় তার পানে। বুকটা যেন ছাৎ করে ওঠে। ভালবাসার মানুষ আজ তার বাড়িতে। সে বিনা দোষে অপরাধী সেজে শাস্তি নিতে তাকে আজ সব কিছু খুলে বলতে চায়। কিন্তু কোথায় যেন একটা বাঁধা এসে দাঁড়ায় সম্মুখে। এতো কাছে পেয়েও মন উজাড় করে কিছুই বলতে পারবে না আজ। মনে আজ বড়ো খেদ। তার দিকে তাকাতে আজ বড়ো কষ্ট হয় তার। সমূহ যাতনা বুকে চেপে রেখে বলে আরে শিলা-
: পাথর ভাই, তুমি এসেছো? ভাইয়ার সঙ্গে ভেতরে যাও, ড্রইং রুমে গিয়ে বসো।
: ঠিক আছে, বেশিক্ষণ বসবো না।
প্রচন্ড গরমের দিক। ফ্যানের সুইচ অন করে তানরোজ। শিলা ভেতরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে আনা ঠান্ডা পানি দেয় প্রথমে। তারপর ট্রে থেকে শরবতের গ্লাস তুলে দেয় পাথরের হাতে। পাথরের ভয় এতোক্ষণে অনেকটা কেটে গেছে। আদর-আপ্যায়নে মনের দুঃখ অনেকটা ভুলে গেছে এবং স্বপ্ন দেখে শিলাকে নিয়ে নতুনভাবে। শরবত দিয়ে বুঝি তাদের নতুন জীবন শুরু! এতো মিষ্টি মেয়েকে সে জীবনে হারাতে চায় না। নয়া সুখানুভবে সে হারিয়ে যায় অজানায়।
টেবিলেই রাখা ছিল জুতার প্যাকেট। তানরুজের ইশারায় প্যাকেটটি নেয় শিলা। পাশের রুমে গিয়ে প্যাকেটটি খুলে পায়ে দেয় জুতা। মাপ মতো বসেছে পায়ে। জুতার ডিজাইনটাও ভালো। সব মিলে তার পছন্দ হয়েছে জুতাজোড়া। তাই ফিরে এসে তাকে কৃতজ্ঞতা জানায়। কষ্ট করে বাড়িতে নিয়ে আসায় অনুশোচনা জ্ঞাপন করে এবং লাজুক সুরে বলে-
: পাথর ভাই, শুনে অবশ্য খুশি হবে যে, পরশু দিন আমার বিয়ে ঠিক, তুমি আসতে ভুলবে না। কথাটি শোনা মাত্র যেন তার পায়ের নীচ থেকে সব মাটি সরে গেছে। মনাকাশে ছেয়ে যায় কালো মেঘের ভেলায়। অনুভব করে ভয়ানক এক ঝড়ের পূর্বাভাব। এ কি সত্য শুনছে না তাকে পরখ করা হচ্ছে? কিছুক্ষণ তাকে অন্যমনস্ক দেখে শিলা আবার বলে উঠে-
: কী হলো পাথর ভাই? কথা বলছো না যে, তুমি আসবে তো?
এবার সে সজাগ হয়। কী বলবে ভেবে সে কিছু পায় না। জিহ্বার মধ্যখানে কে যেন পেরেক ঠুকে দিয়েছে। অনেক কষ্ট করে পেরেকটি উপড়ে তুলে তারপর বলে-
: ঠিক আছে শিলা। আসবো। তোমার এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমি না এসে পারি? এখন তবে আসি।
: কিছু খেলে না যে। আমি কিন্তু পরশু অপেক্ষায় থাকবো।
: খেলাম তো। -বলে সে নির্বাক হয়ে যায়। চোখে শুধু একবার চোখ রাখে। তারপর তাকায় তানরুজের দিকে। সে অন্য টেবিলে দৈনিক পত্রিকা পড়ায় ব্যস্ত। তাদের কথাবার্তা সে লক্ষ করেনি পুরোপুরি। তার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে সে বলে-
: কষ্ট দিলাম তানরুজ ভাই।
: কষ্টের কি আছে? বরং তুমি এসেই কষ্ট করলে। এসো কিন্তু পরশু।
: অবশ্য, অবশ্য।
-কথাটি বলে সে পা বাড়ায় বাইরের দিকে। তানরুজ ও শিলা তার পিছু পিছু বেরিয়ে আসে বারান্দা পর্যন্ত। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার পানে। কিন্তু সে কষ্ট করে হলেও একবারও দেখে নেয়নি শিলাকে। তার মাথা ভারী হয়ে আসে। আরো বেশি করে অপমানবোধ করে। সমূহ স্বপ্ন তার ধূলায় মিশে যায়। নারীর কোনো সংজ্ঞা সে এ মুহূর্তে খুঁজে পায় না। নারীর হাসা আর কাঁদা, সবই কি ছলনা?
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। অতীতের সব ভুলে গেছে পাথর। ব্যবসা নিয়ে সে এখন খুবই ব্যস্ত। নতুন আরো একটি দোকান উদ্বোধন হয়েছে। দোকানের হিসেব-নিকেশ সবই তার দেখতে হয়। এমনি এক ব্যস্ত সময়, মাগরিবের বাদ। টেবিলের ডান সাইটে মোবাইল রাখা। হিসেবের ফাঁক-ফোকরে গ্রাহকের সঙ্গে কখনও কখনও সামনে বসে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে। এমন সময় বেজে উঠলো মোবাইল সেট। হাত বাড়ালো মোবাইলের দিকে। সেটে হাত রাখার আগেই কেটে গেল লাইন। আবার সে নিমগ্ন হলো হিসেবে-নিকেশে। বেজে উঠলো আবার। মোবাইল ধরে ওকে করার আগেই বাতাসে মিলোয় রিংটোন। বিরক্ততায় ভরে উঠে তার মন। মিসকল একটা বাজে কাজ। যে কেউ-ই এ রকম করুক না কেন, তার খারাপ লাগে। হিসাবের খাতায় আর মন বসে না। এমন সময় আবার মিসকল। এবার গোস্বা উঠে তার। কে সে? তাকে জানতে নাম্বারটিতে কল দেয়। অপর পান্ত থেকে মেয়েলী কণ্ঠ আসে-
: হ্যালো, আমি তোমার খুব কাছের মানুষ।
: কাছের মানুষ। কে আপনি?
: আপনি নয়, তুমি। এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে আমাকে?
: আমি যে তোমার খুব আপনজন ছিলাম।
: আমার আপন-টাপন কেউ নাই। অতীতে-বর্তমানেও। কোনোদিনও না। আচ্ছা, আপনি কে? নাম কি?
: আবারও আপনি? আমাকে আগে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করো এবং স্মরণ করে দেখো কণ্ঠ দিয়ে চেনা যায় কিনা।
: মোবাইলে সবসময় কণ্ঠ চেনা যায় না। আমি চিনতে পারছি না, নাম বলেন।
: বলবো না। মাত্র তো দু’বছর। এর মধ্যেই ভুলে গেলে আমাকে?
: আপনাকে ভুলা, না ভুলা- এ সব কিছুই আমার বোঝার নেই। আপনি আমার আবার কে যে সারাজীবন স্মরণ রাখবো?
: আমি তোমার সব! তুমি ভুলে গেলেও আমি তোমাকে ভুলি নাই।
: ভুলার মত কাজ যদি কেউ করে তাহলে তো ভুলতে হবেই। নারীরা ছলনাময়ী কেউ যদি তাদের হাসা এবং কাঁদায় মন গলায়, তাহলে জীবন শেষ। ওদের বিশ্বাস করতে নেই। প্লিজ আমি রেখে দিচ্ছি। নিজের পকেটের পয়সা নষ্ট করে এসব নষ্টামীতে আমি নেই। এর চেয়ে আপনি সোজা বলুন আপনি কে? কেন আমাকে যন্ত্রণা দেন?
: যন্ত্রণা? কিসের যন্ত্রণা?
: সবার জীবনে কমবেশি যন্ত্রণা থাকে। আমি অতীতকে ভুলে গেছি।
: আমি ভুলি নাই। এখনও আমাকে জ্বালায়-পোড়ায়।
: তুমি তাহলে…?
: হ্যাঁ, আমি শিলা। তোমার হৃদয় শিলা।
-আর কিছু বলার আগেই মোবাইলের ও প্রান্ত অফ হয়ে যায়। সে বারবার এ নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু সংযোগ দেয়া সম্ভব নয় বলে ঘোষণা আসে। পাথর যে অতীতকে ভুলে গিয়েছিল, সে অতীত-ই আজ আবার কাছে এসেছে। কেন এসেছে? কষ্ট দিতে? অতীতের সব ঘটনা- আজ তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠে শিলার মৃদু মায়াবী হাসি।

শেয়ার করুন

অনলাইন এর আরও খবর
করোনায় আরও ৯৫ জনের মৃত্যু

করোনায় আরও ৯৫ জনের মৃত্যু

সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু

সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু

সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর

সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান কাদেরের

বিএনপিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান কাদেরের

সর্বশেষ সংবাদ
করোনায় আরও ৯৫ জনের মৃত্যু
করোনায় আরও ৯৫ জনের মৃত্যু
সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর
সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর
বিএনপিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান কাদেরের
বিএনপিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান কাদেরের
একাত্তুরের এপ্রিলের স্মৃতিময় দিনগুলি
একাত্তুরের এপ্রিলের স্মৃতিময় দিনগুলি
ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ ও রণাঙ্গনের স্মৃতি
ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ ও রণাঙ্গনের স্মৃতি
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অজানা অধ্যায়
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অজানা অধ্যায়
করোনাকালের রমজান : আমাদের করণীয়
করোনাকালের রমজান : আমাদের করণীয়
চরিত্র গঠনে রোজার গুরুত্ব
চরিত্র গঠনে রোজার গুরুত্ব
<span style='color:#000;font-size:18px;'>হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন। -আল কুরআন</span><br/> তীব্র পানি সংকট আসন্ন
হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন। -আল কুরআন
তীব্র পানি সংকট আসন্ন
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর
সাংবাদিক বকসী’র মৃত্যুতে সিলেট প্রেসক্লাবের শোক
সাংবাদিক বকসী’র মৃত্যুতে সিলেট প্রেসক্লাবের শোক
মৌলভীবাজারে লকডাউন মানতে নারাজ শ্রমজীবী মানুষ
মৌলভীবাজারে লকডাউন মানতে নারাজ শ্রমজীবী মানুষ
সিলেট বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৩৬ সুস্থ ১০৫
সিলেট বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৩৬ সুস্থ ১০৫
<span style='color:#000;font-size:18px;'>ম্যাচ প্রিভিউ</span><br/> কেন্ডি টেস্ট বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তির পরীক্ষা
ম্যাচ প্রিভিউ
কেন্ডি টেস্ট বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তির পরীক্ষা

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি : রাগীব আলী
সম্পাদক : আব্দুল হাই

কার্যালয় : মধুবন সুপার মার্কেট (৫ম তলা), বন্দরবাজার, সিলেট-৩১০০ ।
ফোন: পিএবিএক্স ৭১৪৬৩৪, ৭১৯৪৪৭, , ফ্যাক্স: ৭১৫৩০০
মোবাইল: ০১৭৯২ ২৫২২২৫ (বার্তা), ৭২২২২৭ (বিজ্ঞাপন), ০১৫৩৮ ৪১২১২১
ই-মেইল: sylheterdak@yahoo.com
বিজ্ঞাপন : sylheterdakadv@gmail.com

  • Terms and Conditions
  • Privacy Policy
  • Contact

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh

Go to top