সচেতন হতে হবে নারীকেই
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২২, ৬:৪০:৪৪ অপরাহ্ন

সুরাইয়া সুলতানা বিথী
আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা কিছুতেই কমছে না। প্রত্যেক দিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকার খবরে একটা না একটা নারী নির্যাতনের সংবাদ ছাপা হয়েছে। এসব নির্যাতনগুলো দেখা যায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতন, বাবা কর্তৃক মেয়ে নির্যাতন, ভাই কর্তৃক বোন নির্যাতন, এলাকার সন্ত্রাসী লোকজন কর্তৃক নির্যাতন, প্রেমিক কর্তৃক নির্যাতন, ক্ষমতাবান লোকদের মাধ্যমে নির্যাতন এমন কি শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্তৃক নির্যাতন। এসব নির্যাতনের আবার বিভিন্ন শ্রেণি বিভাগ রয়েছে। বাবা মা, ভাই টাকার লোভে অপরিণত মেয়েকে গ্রামের বয়স্ক মোড়লের কাছে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চায়। মেয়ে রাজী না হলে শুরু হয় নির্যাতন। সন্ত্রাসী বখাটেরা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার কারণে চালায় নির্যাতন। ক্ষমতাবান লোকরা তাদের মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় চালায় নির্যাতন। স্বামী যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর চালায় নির্যাতন। সুতরাং যুগ যুগ ধরেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেই। নির্যাতনকারীরা শুধু নির্যাতন করেই ক্লান্ত হয় না, তারা নারীদেরকে হোটেল অথবা নির্যাতনের স্থানে নিয়ে কারো গলা কেটে কাউকে জবাই করে, কাউকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে। পত্রিকা খুললেই এসব ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক হিসেবে আমাদের চোখে পড়ে। এসব নির্যাতন রোধে প্রতিটি সরকার আইনের আওতায় রোধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও এসব নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। বরং বাড়ছে হু হু করে। নারীদের একটা অংশ পারিবারিক ক্ষেত্রেও নির্যাতনের শিকার হয়।
নারীরা শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সচরাচর। আধুনিক সভ্যতার নিরিখে নারীরা পুরুষের মতো ঘরে এবং বাইরে সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও নির্যাতনের হার কোথাও কমেনি। উচ্চ শিক্ষিত চাকরিজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারীরাও নির্যাতনের ক্ষেত্রে রেহাই পাচ্ছেন না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বলা যায় নারী নির্যাতন আমাদের দেশে একটি বড় ব্যাধি। প্রতিটি সরকারই নারী নির্যাতন রোধে সভা, সেমিনার প্রচার প্রচারণা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালালেও এর হার কমানো যাচ্ছে না। আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে একজন নারী। তিনি নারী-পুরুষ সকলকে সমতার ভিত্তিতে মাপকাটি করে যাচ্ছেন। উনার সাথে দেশ পরিচালনায় সর্বক্ষেত্রে এক বিরাট অংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন। মন্ত্রী, স্পিকার থেকে শুরু করে অনেক নারীই আজ দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
পুলিশ, প্রশাসন, বিমান, রেল, জাহাজ চালনা, সেনাবাহিনী, বিজিবি, সেবিকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নারীদের সরব উপস্থিতি ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা দিয়েছেন আমাদের দক্ষ প্রধানমন্ত্রী মহোদয়। কিন্তু নির্যাতন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। যে যত বড় অবস্থানে থাকুন না কেন কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব দিক বিবেচনায় নারীরা স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও কেন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ঘরে-বাইরে এ প্রশ্ন আজ সমাজের বিবেকবান মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষ সৃষ্টি করে নারীদেরকে চলাফেরার ক্ষেত্রে ভিন্ন জগৎ দান করলেও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পারিপার্শ্বিকতায় নারীরা আল্লাহর নির্দেশিত পথে সঠিকভাবে চলতে পারছে না বলেই তাদের প্রতি নির্যাতনের খড়গ অতি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অসচেতনতাই দায়ী বলেও অনেকে মনে করে থাকেন।
নারীরা যদি নিজেদেরকে নারী হিসেবে মনে করে নিজের দায়-দায়িত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মধ্যে চলতে পারে। তাহলে নারী নির্যাতন কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক কাজে লাগিয়ে চলাফেরার নির্দেশ দিয়েছেন। নৈতিকতা মেনে চলার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু আমাদের এ সমাজের নারীরা কতটুকু বা আল্লাহর নির্দেশিত নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে এ জন্য নারীরাই নিজেদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পথ খুলে দেয় এবং প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। এখানে একটি কথা বিশেষভাবে বলা যায় সরকারেরও এ বিষয়ে অধিক দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকার অধিক দায়িত্বশীল হলে নারীরা দিন দিন সচেতন হতে থাকবে এবং নিজেদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পুরুষের মানসিকতা আর আচরণগত পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা ও কর্মতৎপরতা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তনও প্রয়োজন। এ ধরনের সামাজিক পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তবে এ প্রক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মতামতে দ্রুত সাড়া দেওয়া; নারীর অবসর সময়ের ম্যাপিং করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো; অফলাইন নেটওয়ার্ক বাড়ানো বিশেষ করে যেখানে ইন্টারনেট সুবিধা নেই; প্রান্তিক এলাকাগুলোতে বিভিন্ন উপায়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য প্রচার করা।