# এখনো অধরা অভিযুক্ত নোমান # সিএনজি অটোরিকশা জব্দ
সহকর্মীর খুনীদের গ্রেফতার দাবিতে রাজপথে ব্যাংক কর্মকর্তারা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩:৪১:০৫ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টারঃ
সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের হামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ খুনের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে, সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে। কতোয়ালী থানার ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে ব্যাংক কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় আন্দোলনে নেমেছেন সর্বস্তরের ব্যাংক কর্মকর্তা। তারা গতকাল মঙ্গলবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেন এবং অনতিবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গত শনিবার বিকেলে জৈন্তাপুরের হরিপুর থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় (নম্বর- সিলেট-থ-১২-৪২৭১) নগরীর বন্দরবাজারে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ। সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে সিলেট কালেক্টরেট জামে মসজিদের সামনে আসার পর সিএনজি অটোরিকশা চালক নোমান হাছনুর (২৮) সাথে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় মওদুদের। এক পর্যায়ে নোমানসহ আরো কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালক মওদুদ আহমেদকে বেধড়ক মারধর করেন। এসময় মওদুদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান মুরাদ আহমেদ ও ইউনুছ আলী নামে দুই ব্যক্তি। রাত ৮টা ৪২ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান মওদুদ আহমেদ। তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অগ্রণী ব্যাংক, হরিপুর গ্যাস ফিল্ড শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি হরিপুরেই একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
এদিকে, রোববার নিহত মওদুদের বড়ভাই আব্দুল ওয়াদুদ বাদি হয়ে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের টুকেরগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সিএনজি অটোরিকশা চালক নোমান হাছনুর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে কতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল হোতা নোমান কিংবা জড়িত অন্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অবশ্য মামলার এজাহারে উল্লেখিত সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমদের ‘খুনিদের’ দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর সহকর্মী ব্যাংকাররা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সিলেটের ব্যাংকগুলোতে চাকুরিরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে দুপুরে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। মানববন্ধনে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা মওদুদ আহমদকে মারধর করে নির্মমভাবে মেরে ফেলার ঘটনায় জড়িত সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ দাবি পূরণ না হলে তারা পর্যায়ক্রমে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মানববন্ধন শেষে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নিশি মোহন নাথ বলেন, আপাতত আমরা মওদুদ আহমদের ‘খুনিদের’ দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। আগামীকাল (আজ) বুধবার সিলেটের সকল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতীকি প্রতিবাদ জানাবো। তারপরও দোষীরা গ্রেফতার না হলে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
অগ্রণী ব্যাংক অফিসার সমিতি, সিলেট এর সভাপতি মোঃ ওলিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ মঈনুদ্দিন নুমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পূবালী ব্যাংকের অফিসার আব্দুর রহমান রিপন, প্রাইম ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার মোঃ বাবুল মিয়া, সিলেট কলেজ শিক্ষক পরিষদ এর সভাপতি জ্যোতিষ মজুমদার, বেসিক ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার শামস মোঃ জাবেদ সুফিয়ান, রুপালী ব্যাংকের এসপিও নিশি মোহন নাথ, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের এভিপি মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ, এনআরবি ব্যাংকের নিখিলেশ দাস, সোনালী ব্যাংকের অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ, অগ্রণী ব্যাংকের হরিপুর শাখার ম্যানেজার মোঃ সারোয়ার আহমেদ, অগ্রণী ব্যাংক কামালবাজার শাখার ম্যানেজার সৌমেন রায়, অগ্রণী ব্যাংক ঢাকাদক্ষিণ শাখার ম্যানেজার আশরাফুল আলম টিটু, অগ্রণী ব্যাংক সুবিদবাজার শাখার ম্যানেজার মোঃ রুবেল আহমদ, অগ্রণী ব্যাংক লালদিঘীরপাড় শাখার এসও রথীন্দ্র কুমার দাস, অগ্রণী ব্যাংক বন্দরবাজার শাখার অফিসার সুশান্ত দেব, অগ্রণী ব্যাংক জালালপুর বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ শামছুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মজিদ, সোনালী ব্যাংক এর পিও মতিলাল মালাকার, সোনালী ব্যাংকের পিও আশুতোষ বাবু, কৃষি ব্যাংক সিবিএ-এর সাধারণ সম্পাদক শানুর আলী, সিলেট কর্মচারী ফেডারেশন এর সভাপতি মোঃ মোফাখখারুল ইসলাম, সিলেট শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য এনামুল মুনীর, পূবালী ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা আবু তাহের, পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার জাকিয়া সুলতানা কেয়া, সোনালী ব্যাংকের এজিএম মোঃ আবুল ফজল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, ওয়ান ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার রাফি সাফকাত আদিল, যাত্রী অধিকার পরিষদের এম এ মতিন, কৃষি ব্যাংকের মুখ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তা শরীফ মোঃ তাহাওয়ার হোসাইন, রূপালী ব্যাংকের এজিএম বিপ্লব কুমার তালুকদার, এজিএম সজল কুমার দাস, অগ্রণী ব্যাংকের এজিএম মোঃ মনির হোসেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার মোঃ কামরান আহমেদ, সিলেট জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামীম রশীদ চৌধুরী, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মোঃ সুয়েব, অগ্রণী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মাহমুদ রেজা, অগ্রণী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ আশেক এলাহী এবং বিভিন্ন ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু পরিষদ, স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ, সিবিএ, অফিসার সমিতি ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে, ব্যাংক অফিসার্স ক্লাব, সিলেট, ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ নকীব হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হাদী খুনিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল-এর নব নির্বাচিত সভাপতি জাবেদ আহমদ অনুরূপ এক বিবৃতিতে ঘাতকদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন।