সাইবার অপরাধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ৫:১৩:২৩ অপরাহ্ন

মো. লোকমান হেকিম
শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। যত নতুন যুগ আসছে, শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েই চলছে। শিক্ষা ছাড়া পুরো পৃথিবীটাই অচল। আমাদের দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ডিজিটাল কেন্দ্র, গড়ে তোলা হয়েছে অনলাইন পরিকাঠামো। বেড়েছে মানুষের অনলাইন পরিভ্রমণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার। করোনাকালে মিলেছে এর ইতিবাচক সুফল। তবে একই সঙ্গে একটা উদ্বেগের দিক হলো, ইন্টারনেটনির্ভর ভার্চুয়াল জগতের প্রভাবে বেড়েছে সাইবার অপরাধ, হামলা। মানুষ যত বেশি সময় কাটাচ্ছে, ততই অপরাধীরাও তাদের নিশানা করতে বেছে নিচ্ছে ভার্চুয়াল জগতকে। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে সাইবার অপরাধ বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ, ২০১৯ সালে যা ছিল ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। বয়সভিত্তিক সাইবার অপরাধের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্তদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। আক্রান্তদের বড় অংশও কম বয়সী। কাজেই সাইবার পরিসরে তরুণ প্রজন্ম কতটা নিরাপত্তাহীন, তা তথ্যেই স্পষ্ট।
কেবল তরুণরাই নন, সাইবার পরিসরে বয়োজ্যেষ্ঠরাও নিরাপদ নন। নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা দিন দিন হুমকিতে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হচ্ছে ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ফিশিংয়ের মাধ্যমে হ্যাক করা ওইসব তথ্য ব্যবহার করে নানা প্রতারণার জালে, মানহানিকর পরিস্থিতিতে ফেলা হচ্ছে এমনকি সমাজ-রাষ্ট্রের গণ্যমান্যদেরও সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত দেশগুলোয় অন্যান্য অপরাধ কমে গেলেও সাইবার অপরাধের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার হামলা বা অপরাধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হ্যাকিং আক্রমণ। এতে ভূক্তভোগীর কম্পিউটারে ফাইল আটকে দেওয়া হয় এবং এর বিনিময়ে অর্থ দাবি করা হয়। আগে এ ধরনের আক্রমণ ছিল বড় ধরনের নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন ই-মেইলের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীর কম্পিউটারেও চলে আসছে। হ্যাকাররা সাধারণ ব্যবহারকারীর পাশাপাশি এখন বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালিয়ে বিপদে ফেলছে, দাবি করা হচ্ছে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর সফটওয়্যার নির্দিষ্ট কম্পিউটার সিষ্টেমে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ফাইল আটকে দেওয়া বা লক করার আগে তা কপি করে রাখছে হ্যাকাররা। এরপর ওই ফাইল খোলার জন্য অর্থ দাবি করা হচ্ছে। এতে বেশি ভূক্তভোগী হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাদ যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশি^ক ইকোসিস্টেমে সাইবার অপরাধকে বড় ধরনের অপরাধ বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ ধরনের অপরাধকে মনে করা হচ্ছে অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে। এটি প্রতিরোধে দেশে দেশে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। অনেক দেশে এরই মধ্যে এ ধরনের আইন তৈরি করা হয়েছে। বাকিরাও এ প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শুধু আইন প্রণয়ন করে ক্ষান্তি নয়, সেটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করে দূর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধী প্রযুক্তি উদ্ভাবন কীভাবে আরো বেগবান করা যায়, সেগুলো কীভাবে সাইবার নিরাপত্তায় কাজে লাগানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। এরই মধ্যে কিছু প্রতিরোধী প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে, সেগুলো যথাসম্ভব সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে ওইসব দেশে। একই সঙ্গে অনেক দেশে নিরপত্তা বাহিনীকে সাইবার সুরক্ষায় সুপ্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। কিংবা সংশ্লিষ্ট বাহিনীতে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ দল গঠন করা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় দেওয়া হচ্ছে বাড়তি নজর। আমাদের দেশে সাইবার অপরাধে ভূক্তভোগীদের অভিযোগের হার হতাশাজনক। সাধারণ মানুষ সাইবার হামলার শিকার হলে খুব কম ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে আসছে। এর পেছনে সচেতনতার অভাবই মূলত দায়ী। কাজেই এ ধরনের অপরাধের প্রতিকার নিশ্চিতে সাইবার সচেতনতার পাশাপাশি সাইবার সাক্ষরতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক কোনো অধ্যায় মাধ্যমিকের পাঠ্যপ্স্তুকে সংযোজন করা দরকার বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায় থেকে অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়েও সচেতনতা দরকার। একই সঙ্গে দেশে একটি সময়োপযোগী সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : শিক্ষক-কলামিস্ট।