logo
৬ই মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • সিলেট বিভাগ
    • সিলেট
    • সুনামগঞ্জ
    • হবিগঞ্জ
    • মৌলভীবাজার
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • ক্রীড়া
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • ডাক বিনোদন
  • প্রবাস
  • শিক্ষা
  • ধর্ম ও জীবন
    • ইসলাম
    • অন্যান্য
  • মুক্তমত
  • সম্পাদকীয়
  • অন্যান্য
    • সাহিত্য
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • স্বাস্থ্য
    • শিশু মেলা
    • ইতিহাস- ঐতিহ্য
    • সাজসজ্জা
    • লাইফস্টাইল
    • মহিলা সমাজ
    • পাঁচ মিশালী
    • আমাদের পরিবার
  • হোম
  • আজকের পত্রিকা
  • প্রথম পাতা
  • শেষ পাতা
  • সিলেট
  • মৌলভীবাজার
  • সুনামগঞ্জ
  • হবিগঞ্জ
  • অনলাইন
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • মুক্তমত
  • ফিচার
  • অন্যান্য দেশ
  • যুক্তরাজ্য
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • অর্থনীতি
  • করোনা
  • ক্রীড়া
  • অন্যান্য খেলা
  • ক্রিকেট
  • ফুটবল
  • স্থানীয় ক্রিকেট
  • ডাক বিনোদন
  • ধর্ম
  • অন্যান্য
  • ইসলাম
  • পাঁচ মিশালী
  • প্রবাস
  • বিজ্ঞপ্তি
  • মহিলা সমাজ
  • মাল্টিমিডিয়া
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • লাইফস্টাইল
  • ইতিহাস- ঐতিহ্য
  • শিশু মেলা
  • সাজসজ্জা
  • শিক্ষা
  • সম্পাদকীয়
  • সাহিত্য
  • শিল্প
  • স্বাস্থ্য
  • আমাদের পরিবার
শিরোনাম
  • ঢাকায় পৌঁছালো নতুন উড়োজাহাজ ‘শ্বেতবলাকা’
  • সিলেটের প্রখ্যাত শিশু সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম খানের ইন্তেকাল
  • চলমান সেতুসমূহে কাজের মান নিশ্চিতে তদারকি বাড়ানো হবে
  • ২৪ ঘন্টায় আরও ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৩৫
  • আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
  1. হোম
  2. ইতিহাস- ঐতিহ্য

সিলেটবাসীর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন


সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৪:৩৮:১৭ অপরাহ্ন
সিলেটবাসীর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন

রতীশ চন্দ্র দাস তালুকদার
ভারত বিভক্তির পূর্বেই পাকিস্তান ও ভারতের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেস সমর্থিত বুদ্ধিজীবী মহলে হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার আলোচনা চলতে থাকে। মুসলিম লীগ সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ জিয়াদ্দিন আহমদ প্রথম প্রকাশ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। তখন ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জিয়াদ্দিন আহমদের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত বক্তব্যের বিরুদ্ধে তাঁর মতামত তুলে ধরেন। তিনি ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
তিনি লিখেন ‘হিন্দীর অনুকরণে উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা রূপে গণ্য হলে তাহা শুধু পশ্চাদগমনই হবে। পাকিস্তান ডোমিনিয়দের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বিভিন্ন যেমন পুশতু, বেলুচি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি ও বাংলা। কিন্তু উর্দু কোন অঞ্চলেই মাতৃভাষারূপে চালু নয়।’ এ প্রবন্ধে তিনি পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করার অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন ‘যদি বাংলাভাষার অতিরিক্ত কোন রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবী বিবেচনা করা কর্তব্য।’ দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের জন্মের পূর্বেই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অভিমত প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। সুতরাং বলা যায়, পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সাথে সাথেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নবীজও রোপিত হয়।
ভাষা সংগ্রামে সিলেটবাসীর ভূমিকা খুবই গৌরবদীপ্ত, তবে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি অবশ্য উর্দুর পক্ষেও মতামত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সিলেটের সমাজসচেতন মহিলা সমাজ, ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদগণ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা থেকে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো না। তবে যে কয়টি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো তারমধ্যে সিলেটের ‘নওবেলাল’ সাপ্তাহিকীটি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময়ে খুবই প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৪৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকা উর্দুর সপক্ষে একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ করে। পূর্ব বাঙলার অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে পত্রিকাটি মন্তব্য করে বাংলাদেশের লোকের সাধারণ ভাষা ক্রমশঃ সংস্কৃত প্রভাবাচ্ছন্ন হলো এবং মুসলমানরা ভদ্রলোক শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য সেই ভাষার বাকবৈশিষ্ট্য গ্রহণ করলো। নিজের ঐতিহ্যের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক দিয়েও সে হয়ে দাঁড়ালো দো-আঁশলা। সিলেটের কয়েকজন রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দীনের কাছে প্রেরিত এক স্মারকলিপিতে উর্দুর সমর্থনে যে যুুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তা ছিল মর্নিং নিউজের সম্পাদকীয়েরই প্রতিধ্বনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই মানি অর্ডার, ডাকটিকেট ও মুদ্রায় ইংরেজি ও উর্দু ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আবার পাকিস্তানের বাঙালি শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা, বাংলাকে আরবি হরফে লেখা ইত্যাদি নিয়ে সভা সমিতিতে বক্তব্য প্রকাশ করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। ফলে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ জানুয়ারি পাকিস্তানের মন্ত্রী আব্দুর রব নিশতার সিলেট সফরে আসেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম এবং অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলাকে ব্যবহারের দাবী জানাতে সিলেট মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আবদুস সামাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সাথে দেখা করে। একটি মহিলা প্রতিনিধি দলও সে সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী প্রকাশ করতে মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে। সে সময় রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে সিলেটের আলেম সমাজের মধ্যে কিছুটা দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়। সিলেট শহরে একটি তারিখবিহীন প্রচারপত্রে মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে বলা হয় ‘আপনাদের দ্বীনি ফরজ সর্বত্র সভা সমিতি করে উর্দুর সমর্থনে জনমত গঠন করা এবং উর্দু বিরোধীদের ফেরেববাজী থেকে মুসলিম জনসাধারণকে রক্ষা করা।’ তখন সাপ্তাহিক ‘নওবেলালে’ এ প্রচারপত্রের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া ভাষায় প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়। তবে এর প্রায় একমাস পরে সিলেটের মুনশীবাজারে জমিয়তে উলেমা ইসলামের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই সভায় গৃহীত প্রস্তাবের এক জায়গায় বলা হয় ‘সমস্ত পাকিস্তানের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বাংলা ভাষাভাষী। সুতরাং গণনীতির দিক দিয়া সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া স্বাভাবিক।’ ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেটের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় মহিলা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন, এ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছিলেন বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরী, সৈয়দা শাহের বানু, সৈয়েদা লুৎফুন্নেসা খাতুন, সৈয়েদা জেবুন্নেসা খাতুন ও রাবেয়া খাতুন সহ আরও অনেকে। এ স্মারকলিপির সংবাদ প্রকাশের পর উর্দু সমর্থক সিলেটের ‘ইস্টার্ন হেরাল্ড’ পত্রিকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত অশালীন ভাষায় বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরীকে আক্রমণ করে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ১১ মার্চ সাপ্তাহিক ‘নওবেলালে’ অন্যতম স্বাক্ষরকারিনী সৈয়েদা নজিবুন্নেসা খাতুন লেখেন ‘যারা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী হইয়া মাতৃভাষার বিরুদ্ধাচরণ করেন, তাহারা মাতৃভাষার বিশ্বাসঘাতক কুপুত্রতুল্য।’ তিনি আরও লেখেন ‘যাহারা ধর্মের দোহাই দিয়ে উর্দুকে সমর্থন করেন, তাহাদের জিজ্ঞাসা করি যে, উর্দু ভাষাভিজ্ঞ অপেক্ষা সিলেটের উর্দু অনভিজ্ঞ মুসলমানরা ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পালনে কোন অংশে হীন?’ বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবীতে যে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সোচ্চার হয়ে উঠে, সেটি হলো তমদ্দুন মজলিশ। সেই তমদ্দুন মজলিশের সম্পাদক সিলেটের ভাষা সংগ্রামী মহিলাদের অভিনন্দন জানিয়ে বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরীর নিকট প্রেরিত পত্রে লেখেন ‘আজ সত্যি আমরা অভূতপূর্ব আনন্দ ও অশেষ গৌরববোধ করছি। সিলেটের পুরুষরা যা পারেনি তা আপনারা করেছেন।’
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে বিরোধী দল দু’টি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে। প্রথম প্রস্তাবে বৎসরে অন্ততঃ একবার ঢাকায় গণপরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের দাবি এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবে উর্দু ও ইংরেজির সাথে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবটি পেশ করেন কুমিল্লার বাবু ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি নিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। গণপরিষদের পূর্ব বাংলার সব প্রভাবশালী মুসলিম লীগ দলীয় সদস্য এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন। তবে কংগ্রেস দলের সকল সদস্য এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে উক্ত প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বলেন ‘প্রথমে এ প্রস্তাবটির উদ্দেশ্য নির্দোষ বলিয়া আমি ভাবিয়াছিলাম। কিন্তু বর্তমানে মনে হয় পাকিস্তানের অধিবাসীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা এবং একটি সাধারণ ভাষা দ্বারা ঐক্যসূত্র স্থাপনের প্রচেষ্টা হইতে বিছিন্ন করাই এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য।’ পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধীতা করতে গিয়ে বলেন ‘পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীরই এই মনোভাব যে, একমাত্র উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে।’ গণপরিষদের সহ সভাপতি তমিজউদ্দিন খানও উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেবের সম্পাদনায় সিলেট থেকে প্রচারিত ‘নওবেলাল’ সাপ্তাহিকীতে গণপরিষদের ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব এবং এ প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত বিষয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। ঐ লেখায় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে পাকিস্তান সরকারের তুলনা করে বলা হয় ‘ইংরেজ আমলেও কারেন্সী নোটে বাংলা ভাষার স্থান ছিল। পাকিস্তান সরকার বাংলাকে তুলিয়া ফেলিয়াছে। পাকিস্তান সরকারের ডাক টিকেট, পোস্ট কার্ড ও মানিঅর্ডার ফর্মেও বাংলার স্থান নাই।’ প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সমালোচনা সম্পর্কে সম্পাদকীয়তে লেখা হয় ‘এই প্রস্তাব সম্পর্কে উজিরে আজম জনাব লিয়াকত আলী খান যে অসংলগ্ন কথার অবতারণা করিয়াছেন তাহাতে বাস্তবিকই মর্মাহত হতে হয়।’ খাজা নাজিমউদ্দিন ও তমিজউদ্দিন খানের বক্তব্য সমালোচনা করে ‘নওবেলাল’ পত্রিকায় বলা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনমতের উল্লেখ করিতে যাইয়া নাজিমউদ্দিন ও তমিজউদ্দিন খান যে সব অপ্রত্যাশিত মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন তার জন্য নিশ্চয়ই তাহাদিগকে একদিন পূর্ব পাকিস্তানবাসীর নিকট জবাবদিহি করিতে হইবে।’ এছাড়া গণপরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালি সদস্যদের উদ্দেশ্যে পত্রিকাটি লেখে ‘আপনারা মাতৃভাষার মূলে যাহারা কুঠারাঘাত করিতেছেন, তাহারা কি একবার ভাবিয়াও দেখেন নাই সে ভাষার ভিতর দিয়াই জাতির আশা-আকাক্সক্ষা, সুখ-দুঃখ, আদর্শ প্রভৃতি রূপ পাইয়া থাকে। সম্পাদকীয়ের সর্বশেষ পাকিস্তানের ঐক্য ও শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে বলা হয় ‘পাকিস্তানের ঐক্য, সংহতি ও সর্বোপরি শান্তি বজায় রাখিবার জন্য যদি তাহাদের মনে এতটুকু আগ্রহ থাকে তাহা হইলে অনতিবিলম্বে তাহাদের কর্মের সংশোধন করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও শিক্ষার মাধ্যমরূপে বাংলাকে গ্রহণ করিতে হইবে।’
১৯৪৮ সালের ৮ মার্চ সিলেট তমদ্দুন মজলিস ও সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে গোবিন্দ পার্কে (বর্তমান হাসান মার্কেট) এক জনসভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতে কয়েকজন লোক ‘উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হোক’ এই বলে চিৎকার করে উঠে এবং একজন সভাপতির চেয়ারে বসে পড়ে। অন্য একজন গুন্ডা প্রকৃতির লোক টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল বক্তৃতা করতে থাকে। সে সাথে তারা সভার সভাপতি মাহমুদ আলী, নওবেলাল পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সিলেট তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক দেওয়ান অহিদুর রেজা ও সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সামাদকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে এবং কয়েকজন ছাত্রকে বেদম প্রহার করে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া অহিদুর রেজা ও আবদুস সামাদ এক বিবৃতিতে বলেন ‘আমরা আজাদ পাকিস্তানে প্রত্যেকের মতামত প্রকাশের সুযোগ দান করিবার জন্য বহু যুগের দাসত্বের অবসান ঘটাইয়াছি। কিন্তু আজ আমরা সিলেটবাসী অরাজকতার দৌরাত্ম্য আর কত সহ্য করিব? আপনারা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে কোণঠাসা করিয়া অরাজকতাকে আর কত প্রশ্রয় দিবেন?’ গোবিন্দ পার্কের ঘটনার প্রতিবাদে সিলেট জেলা মুসলিম মহিলা লীগ ১০ মার্চ একটি সভা আহবান করে। তবে বিক্ষুব্ধ জনগণ দলে দলে যখন ঐ সভায় যোগদান করিতে যায় ঠিক তখনই সিলেট জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এক আদেশ জারি করে উর্দু-বাংলা প্রশ্নে দুই মাসের জন্য সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সিলেটের এই ঘটনাবলি নিয়ে সাপ্তাহিক ‘নওবেলাল’ পত্রিকায় ‘নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে লেখা হয়-‘যদি কোন রাষ্ট্রপতির কোন অবৈধ আচরণে বিরক্ত হইয়া সাধারণ সভায় বা প্রেসের মারফত তাহাদের মত ব্যক্ত করিতে চায় কোন স্বাধীন দেশেই তাহাদের মতামতকে গলা টিপিয়া মারিয়া ফেলা হয় না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমাদের সিলেটে কোন পদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে টু শব্দ করিলেই একদল উগ্রপন্থী সাম্প্রদায়িক মতাবলম্বী লোক মারমুখি হইয়া উঠে।’ ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষা বাংলা প্রসঙ্গে সিলেট জেলার আঠারো জন বিশিষ্ট নাগরিক এক দীর্ঘ বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতির এক জায়গায় বলা হয়-‘আমরা পূর্ব পাকিস্তানবাসী জনসাধারণকে বাংলার ন্যায্য মর্যাদা আদায় করিতে আহবান জানাইতেছি। মানিঅর্ডার ফর্ম ইত্যাদিতে বাংলার কোন স্থান না দিয়া কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার যে ভুল করিয়াছে তাহা অবিলম্বে সংশোধন করিতে হইবে। বাংলাকে উর্দু ও ইংরেজির সাথে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের বিতর্কের অন্যতম ভাষা রূপে গ্রহণ করিতে হইবে।’
১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্সে (বর্তমান সরওয়ারদী উদ্যান) সম্বর্ধনা সভায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন ‘একথা আপনাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া দরকার যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোন ভাষা নয়।’ এ বক্তব্য শুনার পর ময়দানের কোন কোন এলাকায় মৃদু না না ধ্বনি উত্থিত হয়। রাষ্ট্রভাষা বিষয়ে এ দৃঢ় বক্তব্যের পর ছাত্রদের মধ্যে জিন্নাহর জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন হয় এবং বাংলার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পায়। ২৪ মার্চ কার্জন হলে সমাবর্তন বক্তৃতায় জিন্নাহ আবারও বলেন ‘রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের যোগাযোগের ভাষা হিসেবে একটি ভাষা থাকবে এবং সে ভাষা হবে উর্দু।’ এ কথা বলার সাথে সাথে হলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘না না’ ধ্বনি উচ্চারিত হতে থাকে। যারা তখন ‘না, না’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), এ.কে.এম আহসানের নাম উল্লেখযোগ্য। এরপর থেকে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আপামর ছাত্র সমাজ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হয় এবং ভাষা আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন ‘কায়েদে আজম উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন এবং সেই অনুযায়ী উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর সারা পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী প্রচন্ড বিক্ষোভের সঞ্চার ঘটে। ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরীতে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্র ভাষা সমর্থক সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৪০ জন প্রতিনিধি নিয়ে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়। তারপর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে দেশব্যাপী আন্দোলন সংগ্রাম চলতে থাকে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট আহবান করা হয়। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোরেশী ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না এ প্রশ্নে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা হল ও ফজলুল হক হলের মধ্যবর্তী পুকুরপাড়ে বিভিন্ন ছাত্রাবাসের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ছাত্র পরদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সপক্ষে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সভার কাজ শুরু হওয়া মাত্র এ.আর.আক্তার মুকুল সভাপতি হিসেবে গাজীউল হকের নাম প্রস্তাব করেন এবং কমরুদ্দিন শহুদ সমর্থন করেন।
সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রশ্নে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য প্রদান করা হয়। তবে সভাপতি গাজিউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তখন সিলেটের আবদুস সামাদ প্রস্তাব করেন ‘সুশৃঙ্খলভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য ১০ জন করে এক এক ব্যাচে বের হওয়া দরকার, কারণ সকলে একসঙ্গে বের হতে চাইলে চারদিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’ প্রস্তাবটি গৃহীত হয় এবং হাবিবুর রহমান শেলীর (প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি) নেতৃত্বে প্রথম দল বের হয়ে আসে। দ্বিতীয় দলে আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ধ্বনি দিয়ে দশজন বেরিয়ে আসেন। এরপর ছাত্রীদের একটি দল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাইরে চলে আসেন। তারপর পর্যায়ক্রমে দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা রাষ্ট্রভাষার সপক্ষে ধ্বনি দিতে দিতে আমতলা ছেড়ে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েন। পুলিশ তখন এদেরকে গ্রেফতার করে গাড়ি ভর্তি করে থানায় পাঠিয়ে দেয়। সেদিন পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের বাজেট অধিবেশন ৩-৩০ মিনিটে এসেম্বলী ভবনে (বর্তমান জগন্নাথ হল অক্টোবর স্মৃতিভবন) শুরু হওয়ার কথা ছিল। ছাত্র-জনতা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ধ্বনি দিতে দিতে এসেম্বলী ভবন ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হতে থাকে। তবে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে মেডিক্যাল কলেজের সামনে থামিয়ে দেয়। তখন ছাত্র-জনতার মধ্যে প্রচন্ড উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ কাঁরুনে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে এবং ছাত্ররাও ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে চারজন নিহত হন এবং অসংখ্য ছাত্রজনতা আহত হয়। গুলিবর্ষনের কথা জানতে পেরে মুসলিম লীগ সংসদ সদস্য মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ অধিবেশন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে বলেন ‘যখন দেশের ছাত্ররা যারা আমাদের আশা ভরসার স্থল, তারা পুলিশের গুলিতে ভবলীলা সাঙ্গ করেছে সেই সময় আমরা এখানে বসে সভা করতে চাইনা।’ কংগ্রেস সংসদীয় দলের ডেপুটি লীডার ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ও অধিবেশন স্থগিতের আহবান জানান।
কংগ্রেস নেতা মনোরঞ্জন ধর হাসপাতালে নিহত ও আহতদের দেখে এসে মুখ্যমন্ত্রীকেও তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখে আসার দাবি জানান। মুখ্যমন্ত্রী এ পর্যায়ে বলেন ‘মনোরঞ্জন ধরের বক্তব্য শুনেছি এবং সেটা আমার কাছে অতিরঞ্জিত মনে হয়। তিনি আরও বলেন ‘জনগণের একটা অংশ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয় এবং সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে তবে আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই হবে।’ এ সময় কংগ্রেস দলনেতা সিলেটের বসন্ত কুমার দাশ শ্লেষের সঙ্গে বলে, ‘তখনকার পরিস্থিতি কয়েকজন পরিষদ সদস্য যেভাবে বর্ণনা করেছেন তারপরও যে শান্তভাবে নুরুল আমীন তাঁর বক্তব্য প্রদান করলেন সেটা খুবই আশ্চর্যজনক মনে হয়।’ বসন্ত কুমার দাশ আরও বলেন ‘মুখ্যমন্ত্রীর এ শান্তভাব তাঁর হৃদয়হীনতা থেকে আসছে না বলেই তিনি মনে করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবকিছু নিজের চক্ষে দেখে আসার জন্য তিনি অনুরোধ করেন এবং তিনি নিজেও তাঁর সাথে যেতে প্রস্তুত বলে জানান। ‘মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের বক্তব্যের পর আব্দুর রশীদ তর্কবাগিস খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং পরিষদগৃহ পরিত্যাগ করেন। শামসুদ্দিন আহমদ একটি বেসরকারি তদন্ত কমিশন গঠনের আহবান জানান এবং অধিবেশন মুলতবী করার দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীন অধিবেশন মুলতবী করার কোন নজির নেই বলে উত্থাপিত দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এ পর্যায়ে সকল বিরোধীদলীয় সদস্যরা বসন্ত কুমার দাশের নেতৃত্বে অধিবেশন কক্ষ পরিত্যাগ করেন।
কংগ্রেস সংসদীয় দলনেতা বসন্ত কুমার দাশ মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকারান্তরে হৃদয়হীন বলা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী নিহত ও আহত ছাত্রদের দেখতে মেডিক্যাল কলেজে যেতে চাননি, এমনকি অধিবেশন মুলতবী করতেও রাজি হননি। এতে নিঃসন্দেহে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের হৃদয়হীন আচরণই প্রকাশ পায়। অথচ এসেম্বলী ভবন থেকে মেডিক্যাল কলেজের দূরত্ব এক ফার্লং এর চেয়েও কম এবং অধিবেশন কক্ষ থেকেই গুলিবর্ষণের আওয়াজও সুস্পষ্টভাবে শোনা গিয়েছিলো। এদিকে সরকারের মুখপাত্র মর্নিং নিউজ ২২ ফেব্রুয়ারি এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা এবং ভাষা আন্দোলনকে ভারতের দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং হিন্দুদের দ্বারা সংগঠিত বলে একটি সাম্প্রদায়িক চরিত্র প্রদানের চেষ্টা করে। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাতে গিয়ে মর্নিং নিউজ অনেক হাস্যাস্পদ ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে।
১৮৭৪ সালে সিলেট জেলাকে আসামের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল। তারপর ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ করে পূর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে একটি রাজ্য গঠন করা হয়। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গরদ করে আবার সিলেট ও আসামকে নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠিত হয়। তারপর থেকে ১৯৪৭ সালের রেফারেন্ডাম পর্যন্ত সিলেট জেলা পূর্ববাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। দীর্ঘ দিন বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও সিলেটবাসীর অন্তরে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি যে দরদ তা কখনই ম্লান হয়নি। বরং আসামের সাথে সংযুক্ত থাকাকালীন সময়ে বাঙালি হিসেবে তাদের যে আলাদা একটি পরিচয় সেটা সিলেটবাসী সব সময় সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছে। তাই মুষ্টিমেয় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সিলেটের বৃহত্তর শিক্ষিত সমাজ ভাষা সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে গৌরবদীপ্ত ভূমিকা রেখেছে। সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘নওবেলাল’ সাপ্তাহিক পত্রিকাটি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার যে স্বপ্নবীজ বাঙালির মনে প্রোথিত হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে যার রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রের ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাকে আমরা কতটুকু মর্যাদার আসন দিয়েছি-এ প্রশ্নটি এখন খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। খুবই পরিতাপের বিষয় যে, আমরা অনেকেই বাংলা ভাষা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগি। এখনও মনে করি উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন বাংলায় সম্ভব নয়। তবে মনে রাখতে হবে, জ্ঞান বা বিজ্ঞানের নিজস্ব কোন ভাষা নেই। যে কোন মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের গভীর তত্ত্বগুলো তার মাতৃভাষায় আহরণ করতে পারে যদি সে ভাষার শব্দসম্ভার ও রচনাশৈলি সমৃদ্ধ হয়। আজ থেকে প্রায় ১০৮ বছর আগে এ ভাষায় সাহিত্য রচনা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নোবেল প্রাইজ’ পেয়েছিলেন। এ ভাষায় বিশ্বমানের অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সুতরাং এত সমৃদ্ধ একটি ভাষার মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষাপ্রদান সম্ভব নয় এটা ভাবা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ভাষা নিয়ে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা অনেক অভিভাবকই মনে করি, ছেলেমেয়েরা বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করলে ভাল ইংরেজি জানবে না। ফলে চাকরির বাজারে তারা পিছিয়ে পড়বে। অথচ আমাদের দেশে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাই বাধ্যতামূলকভাবে পড়ে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ ছেলেমেয়েই শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজি লিখতে পারেনা এবং বলতে পারেনা। এর আসল কারণ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এ ভাষা দু’টি পড়ানো হয়না এবং আমাদের পাঠ্যসূচীও যুগোপযোগী নয়। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ভাষা শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। সুতরাং নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের স্কুলগুলোতে কর্মরত ভাষা শিক্ষকদের দক্ষতার মান উন্নীত করা অপরিহার্য্য। রক্ত দিয়ে আমরা একটি দেশ পেয়েছি এবং রাষ্ট্রভাষা পেয়েছি। এত সমৃদ্ধ একটি ভাষা বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এর জন্য অবশ্যই আমাদের গর্ববোধ করা উচিত।

শেয়ার করুন

ইতিহাস- ঐতিহ্য এর আরও খবর
হারিয়ে যাচ্ছে সূর্য্যব্রত গান ও অনুষ্ঠান

হারিয়ে যাচ্ছে সূর্য্যব্রত গান ও অনুষ্ঠান

সিলেটের আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন

সিলেটের আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য

সর্বশেষ সংবাদ
উন্নয়নের নতুন মাইলফলক
উন্নয়নের নতুন মাইলফলক
সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সততা
সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সততা
গুজবকে না বলুন
গুজবকে না বলুন
<span style='color:#000;font-size:18px;'>যাহারা নিজে বিশ্বাস নষ্ট করে না তাহারাই অন্যকে বিশ্বাস করে। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর</span><br/> জাতীয় পাট দিবস
যাহারা নিজে বিশ্বাস নষ্ট করে না তাহারাই অন্যকে বিশ্বাস করে। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জাতীয় পাট দিবস
মাওলানা তুরুকখলীর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘পরশমণি’ প্রকাশিত
মাওলানা তুরুকখলীর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘পরশমণি’ প্রকাশিত
আমের মুকুল ঝরা ও তার প্রতিকার
আমের মুকুল ঝরা ও তার প্রতিকার
বঙ্গবন্ধু : এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের দৃষ্টিতে
বঙ্গবন্ধু : এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের দৃষ্টিতে
প্রথম দেখা দক্ষিণ বাংলা
প্রথম দেখা দক্ষিণ বাংলা
সিলেট বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের করোনা শনাক্ত
সিলেট বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের করোনা শনাক্ত
চব্বিশ বছর আগে ভরাট হওয়া ‘মহলদিঘী’ আজো জেগে আছে স্মৃতিতে
চব্বিশ বছর আগে ভরাট হওয়া ‘মহলদিঘী’ আজো জেগে আছে স্মৃতিতে
শায়েস্তাগঞ্জে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ পৌরবাসী
শায়েস্তাগঞ্জে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ পৌরবাসী
মাধবপুরে পিকআপ ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ১
মাধবপুরে পিকআপ ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ১
<span style='color:#000;font-size:18px;'>বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির মাহফিলের প্রথমদিন</span><br/> ইসলামী বিধানের আলোকে জীবন পরিচালনার মধ্যেই প্রকৃত কল্যাণ
বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির মাহফিলের প্রথমদিন
ইসলামী বিধানের আলোকে জীবন পরিচালনার মধ্যেই প্রকৃত কল্যাণ
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন’
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন’
<span style='color:#000;font-size:18px;'>শ্রুতির অষ্টাদশ পিঠা পার্বণ অনুষ্ঠিত</span><br/> করোনাকে জয় করে আবারো এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি
শ্রুতির অষ্টাদশ পিঠা পার্বণ অনুষ্ঠিত
করোনাকে জয় করে আবারো এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি : রাগীব আলী
সম্পাদক : আব্দুল হাই

কার্যালয় : মধুবন সুপার মার্কেট (৫ম তলা), বন্দরবাজার, সিলেট-৩১০০ ।
ফোন: পিএবিএক্স ৭১৪৬৩৪, ৭১৯৪৪৭, , ফ্যাক্স: ৭১৫৩০০
মোবাইল: ০১৭৯২ ২৫২২২৫ (বার্তা), ৭২২২২৭ (বিজ্ঞাপন), ০১৫৩৮ ৪১২১২১
ই-মেইল: sylheterdak@yahoo.com
বিজ্ঞাপন : sylheterdakadv@gmail.com

  • Contact Us
  • আমাদের পরিবার

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh

Go to top