স্বপ্নের সিঁড়ি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৫:০১:০৬ অপরাহ্ন

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
রৌদ্রজ্জ্বোল সকাল। চারদিকে রোদের আলো। ঘুম ভাঙ্গে মিতার। বিছানা ছেড়ে ওঠে। বাথরুমে ঢুকে। হাত মুখ ধুয়ে আসে। দরজা খুলে পা বাড়ায়। বাগানে ঢুকে। মিষ্টি বাতাস গায়ে পরশ দিয়ে যায়। হরেক ফুলে বাগান সেজেছে। ফুল তুলে আনন্দে। বিড় বিড় করে গান করে। রবীন্দ্র সংগীত। খোঁপায় ফুল গুঁজে। হাতে ফুল নিয়ে ঘরে ফিরে। মালা গাঁথে। টেবিলে রাখা রাঙা পুতুলের গলায় পরিয়ে দেয়।
আয়নার পাশে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখে ভালো করে। বেশ ভালো লাগছে। উৎফুল্ল মনে মায়ের রুমে যায়। মা চেয়ারে বসে আছেন। সামনে টেলিভিশনে খবর দেখছেন। মায়ের পাশে বসে।
মা কাছে টেনে নেন। আদর করে বলেন বাহিরে যাবে না মা। করোনায় অবস্থা ভালো নয়। ঘরে থাকবে সব সময়। মার দিকে তাকিয়ে বলে, মা এ কি হলো। কত আনন্দ ভরা দিনগুলো নেই এখন।
আজ ক’দিন ধরে ইশকুল নেই। ইশকুল ছুটি। বই নিয়ে পড়তে বসলে মন এলোমেলো হয়ে যায়। ছবি আঁকতে গেলে আঁকা হয় না। গান ও নাচ করতে সে পছন্দ করে, এখন মন চায় না। ইশকুলে নাচ-গান- আবৃত্তিতে বেশ কয়বার পুরস্কার পেয়েছে। সব যেনো এখন ওলট পালট। ফোন বেজে ওঠে। দৌড়ে ফোন ধরে। মেজো মামা ফোন দিয়েছেন। মাকে ডেকে ফোন তুলে দেয়। মিতা রুমে আসে। একা একা। আর কতদিন থাকতে হবে। ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে যায়।
মনে পড়ে পাড়ার সাথীদের কথা। লকডাউনে সবাই ঘরে।
মিতা রাতে খেতে বসে। খেতে রুচি নেই। মা মজা করে আলু ভাজি আর ডাল রান্না করেছেন, অল্প খেয়ে ওঠে যায়। রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসে না। বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা বিদেশে আছেন একা আমেরিকায়। থাকেন নিউইয়র্কে। নিউইয়র্কের অবস্থা খুব খারাপ।
করোনা ভাইরাসে ভয়াবহ দিন যাপন সেখানে। দেয়ালে টাঙানো পারিবারিক ছবির দিকে চোখ পড়ে। বাবা মায়ের সাথে মিতা। এইতো কিছুদিন আগে বাবা দেশে এসেছিলেন। এক বাক্স ভর্তি করে নিয়ে আসেন। পুতুল, গাড়ি থেকে শুরু করে রকমারি জিনিষ। আনেন বিভিন্ন স্বাদের চকলেট। এগুলো পেয়ে সে কি আনন্দিত হয়েছিল। সে কথাগুলো ভাবতে গিয়ে মন ভেঙ্গে কান্না আসে। বাবা যেনো ভালো থাকে সে চায়।
পাশের টেবিলে রাখা বইগুলো থেকে গল্পের বই হাতে নেয়। পড়তে লাগে গল্প। গল্পে ফুটে ওঠেছে জীবনের চিত্র। দিন মজুর সোনা গাজীর দিনকাল। সে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়। স্বপ্ন দেখে বাবা এসেছেন। হাসি খুশি মুখ। জড়িয়ে ধরেছেন। কত আদর করছেন। হাতে তুলে দেন এক প্যাকেট চকলেট। ছবি তুলেন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় এক সময়। স্বপ্ন যেনো স্বপ্ন না হয়ে সত্যি হয়। সে মনে প্রাণে কামনা করে।
কাগজ কলম নিয়ে সে আঁকাআঁকি করে। ছবি আঁকে। বাবা মায়ের সাথে তার। ছবি এঁকে। ছবির ক্যাপশন দেয় “স্বপ্ন”। ছবিটা টাঙিয়ে রাখে পড়ার টেবিলের পাশে। দেয়ালে ছবিটা ঝলমল করে। চেয়ে সে ছড়া আবৃত্তি করে একমনে। পাশের রুম থেকে মা ডাকেন। নাস্তা করতে যায় রান্নাঘরে। মজা করে খিচুড়ি করেছেন মা। সাথে ঘি ও ডিম। খায় মিতা বেশ মজা করে। খেয়ে মায়ের রুমে ঢুকে। করোনার খবর বাজছে টিভিতে।
সে বসে শুনে। দেশ বিদেশের করোনার হালচাল। দেখে ভয় বেড়ে যায়। সে রুমে চলে আসে। মন খারাপ হয়ে যায়। আলো রাঙানো সুদিন কবে আসবে জীবনে। আবার বই নিয়ে ছুটবে ইশকুলে। আবার বাবা আসবেন প্রিয় স্বদেশে। আলো ঝলমল হয়ে ওঠবে ঘর। স্বপ্নের সিঁড়িতে ওঠে রঙিন দিনের জীবন খোঁজে মিতা।