হবিগঞ্জে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ৩:৩৪:৪২ অপরাহ্ন

মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, হবিগঞ্জ থেকে :
প্রকৃতির রম্য নিকেতন বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ। প্রকৃতি হবিগঞ্জকে সাজিয়েছে অকৃপণভাবে। হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পাহাড়, হাওর, নদী, চা ও রাবার বাগান, বনজ সম্পদ, প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন, গ্যাসসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, খাসিয়া, টিপরা উপজাতি এবং মণিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাসে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ। পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই হবিগঞ্জকে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে ৩/৪ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত হবিগঞ্জ। বর্ষাকালে হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলে নৌকা বাইচ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ্য। উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচংঙ্গে রয়েছে সাগরদীঘি যা রাণী কমলাবতীর দীঘি হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে গ্রামরক্ষার জন্য প্রাচীনকালে খনন করা গড়ের খাল, রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, সুলতানী আমলে তৈরি বিবির মোকাম ও পুরানবাগ মসজিদ। বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গলে রয়েছে বিথঙ্গল আখড়া। প্রাচীনকালে এ আখড়ায় ১২০জন বৈষ্ণব বসবাস করতেন বলে কথিত আছে। বানিয়াচং গ্রামের উত্তরদিকে নদী ও হাওর বেষ্টিত স্থানে রয়েছে লক্ষ্মীবাউর জলাবন। নাগুরায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরাতন ধান গবেষণা কেন্দ্র। নবীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড। এ উপজেলারই দিনারপুর এলাকায় কুরুটিলাও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ২৪টি চা বাগান। চা বাগানগুলোর নৈসর্গিক দৃশ্য সহজেই দর্শণার্থীদেরকে বিমোহিত করে। শাহজীবাজার ও বাহুবলের রূপাই ছড়ায় রয়েছে ২টি বড় রাবার বাগান, শাহজীবাজার ও রশিদপুরে ২টিসহ জেলায় বড় গ্যাস ফিল্ড রয়েছে ৩টি। এছাড়াও শাহজীবাজার এলাকায় রয়েছে একটি সরকারী ও ২টি বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও একটি ফ্রুটস ভ্যালী। মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইলে রয়েছে শংকরপাশা শাহী মসজিদ। এছাড়াও মাছুলিয়ায় রয়েছে একটি প্রাচীন আখড়া। চুনারুঘাটের মুড়ারবন্দে রয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর অন্যতম সফরসঙ্গী তরফ অঞ্চল বিজয়ী হযরত নাসির উদ্দিন সিপাহ্ সালার, হযরত কুতুবুল আওলিয়াসহ অনেক ওলি-আউলিয়ার মাজার। মাজার এলাকায় শত শত জাম গাছ এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। জেলায় বনভূমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭শ’ ৭৬ একর। ফয়েজাবাদ, রঘুনন্দন, দিনারপুর, কালেঙ্গা পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর আনারস, লেবু, কাঁঠাল, পান-সুপারি উৎপাদিত হয়। আলীয়াছড়া, মুছাই ও বৈরাগী পুঞ্জিতে বাস করে খাসিয়া উপজাতির কয়েক’শ পরিবার। সাতছড়ি ও কালেঙ্গায় বাস করে টিপরা উপজাতির কিছু সংখ্যক পরিবার। চুনারুঘাটের বিভিন্ন গ্রামে বাস করে মণিপুরী সম্প্রদায়ের একটি বড় জনগোষ্ঠি। নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাসরত এ সকল জনগোষ্ঠির বৈচিত্রময় জীবন ধারা সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাতছড়ি পাহাড়ে ২৪৩ হেক্টর এলাকাব্যাপী জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান বৃক্ষ, উদ্ভিদ, ও জীবজন্তু। চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চলে ১৭৯৫ হেক্টর এলাকায় রয়েছে বন্যপ্রাণী ও জীবজন্তু সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত অভয়ারন্য। বাহুবল উপজেলার মধুপুর চা-বাগান এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন থাকা খাওয়া ও বিনোদনের সুযোগ সম্বলিত বিলাস বহুল দি প্যালেস রিসোর্ট এন্ড স্পা ইতি মধ্যেই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও প্রত্নতান্তিক নিদর্শনগুলোকে বিকশিত ও সংরক্ষণ করা গেলে অচিরেই হবিগঞ্জ দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।