৫শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২২, ৫:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন

মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, হবিগঞ্জ থেকে: হবিগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া, পলি জমে যাওয়া ও অপরিকল্পিতভাবে হাওর এলাকায় রাস্তাঘাট,বাঁধ নির্মিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামছে না বলে পাউবো মনে করছে। এদিকে, বন্যা কবলিত কোন কোন স্থান থেকে পানি নেমে যাওযায় ‘ক্ষত’স্থানগুলো ভেসে উঠছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গত তিন সপ্তাহ ধরে হবিগঞ্জের ভাটিঅঞ্চলসহ ৭ উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এখনও কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষি, প্রাণী সম্পদ, মৎস্য, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে। প্রতিদিনই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব হালনাগাদ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন,কালনী কুশিয়ারা নদীর ভাটিতে পলিমাটি জমা হওয়ায় ও হাওরাঞ্চলে বন্যার পানি হ্রাসের পরিমাণ কম হওয়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এছাড়া, অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চলতি মাসে নতুন করে বন্যার আশংকা করছেন তিনি।
পাউবো সূত্রে প্রকাশ, বন্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপালপুরে ২০ মিটার , বানিয়াচঙ্গের সুজাতপুর এলাকায় ৬০ মিটার খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙ্গেছে। অপরদিকে, আজমিরিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধের নিকলীরঢালা নামক স্থানে ২০ মিটার, বদলপুর বাজারের নিকটে ১০ মিটার দীর্ঘ এবং নবীগঞ্জের চরগাঁওয়ে বিবিয়ানা নদীর বাঁধের ৮০ মিটার অংশ ভেঙ্গে গেছে। এসব ভাঙ্গন মেরামতে প্রায় ২ কোটি টাকা লাগতে পারে।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, হবিগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ আজমিরিগঞ্জ নবীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭ কিলোমিটার রাস্তা , ৬৮ মিটার ব্রীজ ও কালভার্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির জানান, সড়ক মেরামতে ৮২ কোটি ৭৪ লাখ, ৫টি ব্রীজের জন্য ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক মোঃ আশেক পারভেজ জানান, বন্যায় ১৫ হাজার ৬শ’ ২৮ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ধান, ১হাজার ৭৪৩ হেক্টর শাকসবজি, ও ৪৫ হেক্টর অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮৮হাজার ৫৪ মেট্রিক টন ধান ও সবজি এবং ২২৫ মেট্রিক টন অন্যান্য ফসল বিনষ্ট হয়েছে। জেলায় ১লাখ ৩হাজার ১৩০জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলায় ১৭৮টি গবাদিপশুর খামারের ১ হাজার ৩শ’ ৮টি পশু, ৭৩টি খামারের ৫৪ হাজার ৪৬৭টি হাঁস মুরগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, বন্যায় ২ কোটি ৬৯ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় ৭ হাজার ৯০১টি পুকুর দীঘি ও খামার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৫হাজার ৮শ’৫৩ জন খামার মালিকের ১শ’ ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হয়। অপরদিকে, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল্লাহ জানান, জেলায় ৯৪টি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বন্যা কবলিত হয়। এর মধ্যে ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় ৫৪টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার ৩৩০টি পরিবারের ৮৩ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১৯ হাজার ৩৪৫ জন ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ২৭ হ্জাার ৫শ’ টাকা নগদ, ৮শ’ মেট্রিক টন চাল, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩০ হাজার ৪১৬ প্যাকেট গুঁড়ো দুধ বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৩০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।