ইঁদুর নিধন অভিযান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ৫:৪৩:০৬ অপরাহ্ন
নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হলে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হবে। -ফ্রান্সিস টম্পসন
সোনালি ধানের ঢেউ খেলানো মাঠের অপরূপ শোভা নিয়ে আসছে অগ্রহায়ণ। উৎসব হবে নবান্নের। উৎসব হবে পিঠা পুলির। এখন চলছে তার প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ইঁদুর নিধন। ফসল ধংসকারি ইঁদুর নিধন অভিযান চলছে এখন। অভিযানে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ কামনা করেছে সরকার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর ইঁদুর প্রায় দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে।
দেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান, গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। তিন মাসের জন্য ধান গুদামে রাখা হলে পাঁচ খেকে ১০ ভাগ ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতি হতে পারে। ঘরের ধান যেমন নষ্ট করে, তেমনি মাঠের ধানও নষ্ট করে ইঁদুর। ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারি স্তন্যপায়ি প্রাণি। এরা যে কোন খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে। যে কোন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া-ইঁদুরের মলমূত্র, লোম খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ও ক্রিমিরোগসহ ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়। প্লেগ নামক মারাত্মক রোগের বাহক হচ্ছে ইঁদুর। এরা বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্রও কেটে নষ্ট করে। বড় সড়ক, বাঁধ, রেললাইনে গর্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে বন্যার পানি ঢুকে এ সব অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পর্যন্ত দেশে ১৮ প্রজাতির ইঁদুর শনাক্ত করা হয়েছে। ইঁদুর ফসলে তিন মওসুমেই আক্রমণ করে। আমন মওসুমে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সহজলভ্য হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ইঁদুরের প্রজনন খুব বেশি হয়। প্রতি ধান মওসুমে একটি স্ত্রী ইঁদুর প্রায় ২৪টি বাচ্চা দিতে পারে। তাই ইঁদুরের প্রজনন শুরুর পূর্বেই ইঁদুর নিধন করা দরকার। আমন মওসুমই ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময়। সত্যি বলতে কি, ইঁদুর দ্বারা ফসলের যে ক্ষতি হয় তা কমানো গেলে একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে আয়ও বাড়বে।
ইঁদুর আমাদের সম্পদ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি করছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় করা কঠিন। কাজেই ইঁদুর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষেতখামার, বসতবাড়িসহ সর্বত্র ইঁদুরমুক্ত করার লক্ষে ইঁদুর নিধনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ইঁদুর প্রতিরোধ কখনও এককভাবে সম্ভব নয়। সকলের সমন্বয়ে সমন্বিতভাবে দমন ব্যবস্থা করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবি সংস্থাসহ সর্বস্তরের জনগণকে ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করা, ইঁদুর দমনের জৈবিক ব্যবস্থাপনাসহ লাগসই প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো; ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিল্পকারখানা ও হাঁস মুরগির খামার ইঁদুরমুক্ত রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।