ওষুধের অপব্যবহার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০২৩, ৪:৫৩:০০ অপরাহ্ন
অহংকার এমন এক আবরণ যা মানুষের সকল মহত্ব আবৃত করে ফেলে। -জাহাবি
জীবন রক্ষাকারি ওষুধের বাজার অস্থির। দাম বাড়ছে ওষুধের। আছে নিম্নমানের ওষুধ। আছে ওষুধে ভেজাল। আরও আছে ওষুধের অপব্যবহার। দেশে বিশ্বমানের অনেক ওষুধ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। ওষুধ উৎপাদন থেকে বিপণনের বিভিন্ন ধাপে নষ্ট হচ্ছে এর মান। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওষুধের যত্রতত্র বিক্রি।সবচেয়ে ভোগান্তির বিষয় হচ্ছে ওষুধের অপব্যবহার। এসব কারণে সব মিলিয়ে অনিরাপদ হচ্ছে রোগীর সামগ্রিক সুরক্ষাব্যবস্থা।
ওষুধের যুক্তিহীন ব্যবহার ও প্রয়োগ বর্তমান বিশ্বের এক অন্যতম সমস্যা। এটাই স্বাভাবিক যে, রোগির সমস্যা চিহ্নিত না হলে ওষুধের যুক্তিসংগত প্রয়োগ এবং এর প্রকৃত উন্নয়ন কোনোমতেই সম্ভব নয়। দেশের ক্লিনিক, হেলথ কমপ্লেক্স বা হাসপাতালগুলোতে ওষুধের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ হচ্ছে অহরহ। অনিয়ন্ত্রিত ওষুধের ক্রয়-বিক্রয়ও। দেখা যায়, ডিগ্রিধারি ফার্মাসিস্ট ছাড়াই অজ্ঞ-অশিক্ষিত লোকজন দ্বারা ড্রাগ স্টোর পরিচালিত হয় সাধারণত অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দোকানের মতো। অথচ দক্ষ ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধের দোকান পরিচালনাও অবৈধ। অনেক সময় চিকিৎসকেরাও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। সেই সঙ্গে আছে সঠিক রোগ নির্ণয়ে সমস্যা। চিকিৎসক ঠিকমতো রোগ নির্ণয় করে যুক্তিসংগতভাবে ওষুধ প্রদান না করলে রোগি ওষুধের অপব্যবহারের শিকার হবেই। অবশ্য এই সমস্যা শুধু আমাতের দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকরা তাদের প্রেসক্রিপশনে যেসব ওষুধ লিখে থাকেন, তার সবই যুক্তিসংগতভাবে লেখেন না। এর অন্যতম কারণ বহু চিকিৎসক পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাবে রোগিকে সঠিক ওষুধ প্রদানে সক্ষম হন না। এসব চিকিৎসক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের যুগোপযোগি করে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সর্বোপরি বহু চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক প্রভাবান্বিত ও প্রলুব্ধ হয়ে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও দামি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে বাধ্য হচ্ছেন।
ওষুধের অপব্যবহার রোধে দরকার সব মহলের সর্বাত্মক সচেতনতা। বাজারে চলছে ওষুধের জোয়ার। আমাদের চিকিৎসকরা প্রকৃত ওষুধ খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজার প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ভরে গেলে সব ওষুধের ওপর সম্যক ধারণা অর্জন কোন চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। ওষুধের ফলপ্রসূ ও যুক্তিসংগত প্রয়োগের জন্য কোম্পানি প্রদত্ত নামের পরিবর্তে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার জরুরি। তাছাড়া, একটি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাও থাকা প্রয়োজন। সুচিকিৎসার স্বার্থে চিকিৎসকদের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন বলে আমার মনে করি।