দারিদ্র্য নিরসন দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১:৪৭:২০ অপরাহ্ন
মানুষ পরাজয়ের জন্য সৃষ্টি হয়নি। তাকে হয়তো ধ্বংস করা যায়, কিন্তু হারানো যায় না। -আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
দারিদ্র্য নিরসনে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। সরকারি-বেসরকারি এইসব উদ্যোগের সফলতা আসছে বলেই দাবি করছে সরকারসহ বুদ্ধিজীবী মহল। এই অবস্থায় আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এখানে দিবসটি পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশের আশি ভাগ মানুষের বসবাস দারিদ্র্যের মধ্যে। অবশ্য শুধু যে আমরাই দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত এমন নয়, সারা বিশ্বেই চলছে দারিদ্র্য নিয়ে তোলপাড়। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দিন দিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। আর করোনা মহামারিসহ বৈশ্বিক মন্দার কারণে সেই পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়েছে। এখন বিশ্বের অনেক দেশে প্রধান সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য।
দেশে দারিদ্র্যের হার নিয়ে সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, কভিড-১৯–এর আগে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিলো ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। যার মধ্যে অতিদারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমায় ছিলেন। ২০১৯ সালে অতি গরিব বা হতদরিদ্র ব্যক্তির সংখ্যা ছিলো ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি। কিন্তু করোনার পরে এই হার বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জনই গরিব বলে জরিপে উঠে এসেছে! করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় দারিদ্র্যের হার ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে, আর চরম দারিদ্র্যের হার বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। আসল কথা হলো, দারিদ্র্য বিমোচনে সময়োপযোগি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অতীতেও নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে যেটা হচ্ছে তা শুধু লোক দেখানো আর লুটপাটের। এ খাতে বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে বরাবরই একটি মহল। সত্যি বলতে কি, আমাদের জনগোষ্ঠির অর্ধেকই বেকার। হাতে গোনা কিছু লোক আছে স্বাচ্ছন্দ্যে। এর বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব। সেই সঙ্গে আছে অশিক্ষা, পুষ্টিহীনতা, চিকিৎসাহীনতা, খাদ্যের অভাব, বাসস্থানের অভাব ইত্যাদি। তার পাশাপাশি রয়েছে বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গনসহ ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। রয়েছে জনশক্তি রপ্তানিতে ভাটা। এসব কারণে দারিদ্র্য বিমোচনে যতোই উদ্যোগ নেয়া হোক না কেন, তার সবই হচ্ছে বাধাগ্রস্ত।এই অবস্থা থেকে যে হুট করে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেটা আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রতি সর্বোচ্চ মনযোগি হওয়া এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে।বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সীমিত আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় দ্রুত বাড়ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এদেশে। অপরদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা। কমছে কৃষিজমি। বাড়ছে খাদ্য চাহিদা।
দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জোর দিতে হবে দেশে সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের আয় উপার্জন ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতির ওপর। পাশাপাশি প্রয়োজন দেশে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।সাম্প্রতিককালে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে গ্রামিণ হতদরিদ্র্যের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মযজ্ঞ নিরবচ্ছিন্ন হোক, বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।