মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩:৩৩:১২ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার :
ভাই হারানোর ব্যথা আর মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার গৌরব আর অহংকার মাখা সেই মহান ২১ ফেব্রুয়ারী আজ রোববার। ১৯৫২ সালের এই দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে এসেছিল বাংলা মায়ের বিক্ষুব্ধ সন্তানেরা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে মুখর ছাত্রদের রুখে দিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেক শহীদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা। সেই থেকে ২১ ফেব্রুয়ারী অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস। আজ ভোরবেলা থেকে সর্বত্র বেজে ওঠবে সেই কালজয়ী সুরÑ ‘আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো/একুশে ফেব্রুয়ারী/আমি কি ভুলিতে পরি…।’ বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র প্রেরণার উৎস ও অবিস্মরণীয় এই দিনটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে আজ। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল ও চিরভাস্বর ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন এদেশের সূর্য সন্তানরা। তাঁদের রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিস্বত্ত্বা বিকাশের সংগ্রাম সেদিন সূচনা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারী তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। আজ সিলেটের মানুষ প্রভাত ফেরির মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির এটি। একুশের চেতনা আমাদের আত্ম মর্যাদাশীল করেছে। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ শাশ^ত এ স্লোগান তাই আজো স্বমহিমায় ভাস্বর। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। বায়ান্নর ২১ শে ফেব্রুয়ারী বসন্তের বাতাস ও পলাশ রঙে রাঙানো প্রভাতের সূর্য অমিত সম্ভাবনার যে স্বপ্ন, যে প্রত্যয় জাতির হৃদয়ে বপন করেছিল, সেই তেজোদীপ্ত বিদ্রোহের সুর আজো প্রতিটি ক্রান্তিকালে ধ্বনিত হয় বাঙালির হৃদয়ে। আজ বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে, খালি পায়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই শামিল হতে শুরু করেছেন শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। করোনা ভাইরাসের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূণ্যভূমি সিলেটসহ সারাদেশের স্কুল-কলেজ, জেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। এদিকে,দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হচ্ছে শোকের কালো পতাকা। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বিশ্বের সকল জাতিস্বত্ত্বার ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের এই দিনটিকে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য উচ্চতার। দিবসটি উপলক্ষে সিলেটে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, পতাকা উত্তোলন, প্রভাতফেরী, শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-প্রভাতফেরী ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ।
জেলা আওয়ামী লীগ: একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ওইদিন সকাল ৮টায় ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে প্রভাত ফেরী শুরু। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ।
এতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কামনা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোঃ লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান।
মহানগর আওয়ামী লীগ: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সম্মুখস্থ কামরান চত্বর থেকে প্রভাতফেরি শুরু হয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। ওইদিন বাদ জোহর হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদের নিচতলায় সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাতসহ দেশ ও জাতির সম্মৃদ্ধি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য বিষয়ক প্রত্যেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওয়ার্ডে বসবাসকারী মহানগর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন এসব কর্মসূচিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কামনা করেছেন।
কেমুসাসের কর্মসূচি: মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রোববার সকাল নয়টায় সংসদ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও সাহিত্য সংসদের পতাকা উত্তোলন এবং সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া, সন্ধ্যে সাতটায় কেমুসাসের সাহিত্য আসর কক্ষে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও একুশকে নিবেদিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন কেমুসাসের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খাঁন। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সাহিত্য সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং ভাষা আন্দোলনের নেত্রী জোবেদা রহিম চৌধুরীর পরিবারের সদস্য সোহানি জাহান চৌধুরী।
কেমুসাসের পৃষ্ঠপোষক, জীবন সদস্য, সাধারণ সদস্য ও সকল সাহিত্য মোদীদের সকল কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য সাহিত্য সংসদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।