পরিবেশ দূষণ প্রসঙ্গ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৪২:২৫ অপরাহ্ন

রঞ্জিত কুমার দে
পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ যেমন একটু একটু করে তার পরিবেশ গড়ে তুলেছে, তেমনি সভ্যতার চরম লগ্নে এসে সেই মানুষই আবার তার পরিবেশকে নানা উপায়ে ধ্বংস করে চলেছে। মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ দূষণের জন্য একটি দুটি নয়, অগণিত কারণ রয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো জনসংখ্যা। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ। যে কারণে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ পড়ছে প্রচন্ডভাবে। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ নির্মম হাতে ধ্বংস করছে বনজ সম্পদ। এতে করে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ভিদ জগৎ অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণিজগৎ। এ দ্বিজগতের ক্ষতি সাধনের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এক সংকটজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। পরিবেশ দূষণের আরেকটি কারণ হলো শক্তি উৎপাদন। শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষক নানা রাসায়নিকদ্রব্য নির্গত হয়।
প্রকৃতির এক অফুরন্ত নিয়ামক হলো বায়ু। যে বায়ু আজ নানাভাবে দূষিত হয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জ্বালানি যেমন- তেল, কয়লা, গ্যাস পুড়ে প্রতিনিয়তই বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ছে। বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে অসময়ে বর্ষণ, কুয়াশা, ঝড় ও বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তেল, কয়লা পুড়ে যে গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে মানুষের মাথা ধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস, ফুসফুস ক্যানসার ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। বায়ুর মতো পানিও আজকাল নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য, তরল পেট্রোলিয়াম, বিষাক্ত হাইড্রো কার্বন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা শহরের ড্রেন ও নালা নর্দমা দিয়ে বয়ে আসা দূষিত পানি প্রতিনিয়ত নদ-নদীতে গিয়ে পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানিতে দ্রবীভূত হয়েও পানি দূষিত হচ্ছে। শহর, বন্দরে কলকারখানার বিকট আওয়াজ, মোটর যানের হর্ণ, বাজি, পটকার শব্দ, রেডিও, টেলিভিশনের শব্দ, মানুষের চেচামেচি, চিৎকার, উৎসব আনন্দের নামে উচ্চ ধ্বনিতে মাইক, রেকর্ড প্লেয়ার বাজানো সব মিলিয়ে যেন শব্দের এক মহাযজ্ঞ চলছে। এসব শব্দের ফলে মানুষের জীবনে নানারকম বিপর্যয় দেখা দেয়। শ্রবণশক্তির বিলোপ, মানসিক বিপর্যয়, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি ও স্নায়ুবিক অস্থিরতা প্রভৃতি অস্বাভাবিক শব্দেরই পরিণাম।
পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে বৃক্ষ নিধন নয়; বরং বৃক্ষরোপণ করে এ পৃথিবীকে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কয়লা, গ্যাস ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে। পুরনো মোটরযানগুলোকে বাতিল করতে হবে। পৃথিবীর বৃহৎ শক্তি সমূহের মধ্যে যে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি রয়েছে তা দূর করতে হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।