দেশ বাঁচাতে নৌকায় ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:১৫:৪৮ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রোষানল থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। কারণ, যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে বন্দরনগরীর ঐতিহাসিক পলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের কাছে এই জন্য যে এই দেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে, উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ, সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, আমরা যেন সেইভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি।’
চট্টগ্রাম মহানগর, আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ইউনিট আয়োজিত মহাসমাবেশে শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেগুলোকে তার সরকারের উপহার হিসেবে বর্ণনা করেন।
প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব উন্নয়ন প্রকল্প আমার কাছ থেকে পাওয়া উপহার।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র সরকার যারা বন্দরনগরীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে। কারণ, বিদেশ থেকে এতিমের জন্য যে টাকা এসেছে তা এতিমের হাতে না গিয়ে নিজেরা পকেটস্থ করেছে। জিয়া অরফানেজের টাকা চুরি করেছে বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। আর তার ছেলে যে মারা গেছে (আরাফাত রহমান কোকো) সিঙ্গাপুর থেকে তার পাচার করা কিছু টাকা সরকার ফেরত আনতে পেরেছে। অপর সন্তান তারেক রহমানকে ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সে এখন লন্ডনে বসে আছে। এই তারেকই ২০০৭ সালে সেই সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আর কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে বিদেশে পালিয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সে এখন লন্ডনে রাজার হালে থেকে দেশের অভ্যন্তরে তাঁর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যেকোন ধরনের খুন খারাপি, বোমাবাজি তথা নাশকতামূলক কাজ পরিচালনা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া যখন মারা যায় আমরা শুনেছিলাম পরিবারের জন্য তিনি কিছুই রেখে যাননি। একটা ভাঙা সুটকেস ছাড়া কিছু ছিল না। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই কীভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছিল। তারা কি জাদুর কাঠি পেয়েছিল?
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২২ নেতা-কর্মী হত্যা এবং প্রায় ৫শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া-রা পারে কেবল মানুষ হত্যা করতে। এর কারণ হিসেবে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর যারা এদেশে গণহত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ চালিয়েছিল তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই তারা এগুলো করছে।
অন্যদিকে অওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (বিএনপি) জানে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই, তারা নির্বাচন চায় না, তারা চায় সরকার উৎখাত করে এমন কেউ আসুক, যারা একেবারে নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। এটাই তারা আশা করে, তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না।
তিনি বলেন, ওরা ভোটে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেমন জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওদের ধারণা ওই ভাবেই তারা ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। বোধ হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। অথচ পরাজয় নিশ্চিত জেনে এই ১০ ডিসেম্বর থেকেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে, ইত্তেফাকের সাংবাদিক শহীদ সিরাজুদ্দিন হোসেনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এবং রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভাটি সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।