বিশ্ব মানবাধিকার দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:০৯:৪৭ অপরাহ্ন
মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা আজকাল বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ঘটে চলেছে। দেশে দেশে যুগে যুগে ঘটছে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা। সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত, তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে পদে পদে। সচেতন জনগোষ্ঠীরও অনেক সময় মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। এই অবস্থা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেমন, তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এই প্রেক্ষাপটে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে দিবসটি পালিত হচ্ছে সারা দেশে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের সকল দেশেই পালিত হচ্ছে দিবসটি।
আজ সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নেবে মানুষ। বিশ্বের সকল শ্রেণির মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। মানবাধিকার মানে মানবের (মানুষের) অধিকার। প্রতিটি মানুষেরই কিছু জন্মগত অধিকার থাকে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসহ আরও অনেক কিছু রয়েছে যেগুলোতে আছে প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। আর এগুলোই হচ্ছে মানবাধিকার। প্রকৃতিগতভাবেই এগুলোতে রয়েছে তাদের অধিকার। কিন্তু এই মানবাধিকার বরাবরই লংঘিত হচ্ছে। কোনো কোনো সময় মানবাধিকার লংঘন পৌঁছে গেছে চরম পর্যায়ে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এতে সন্নিবেশ করা হয় মৌলিক মানবাধিকারগুলো। আর এটাই হচ্ছে সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ। সেই সনদে মানবজাতিকে একটি পরিবার হিসেবে অভিহিত করা হয়। এতে সকল মানুষের প্রাপ্য মর্যাদা ও সমঅধিকারের স্বীকৃতিকে বিশ্বের স্বাধীনতা, ন্যায় বিচার ও শান্তির ভিত্তি বলে উল্লেখ করা হয়। এটা স্বীকৃত বিষয় যে, মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে মানবাধিকারগুলো আইনের শাসন দ্বারা সংরক্ষিত হওয়া উচিত। উল্লিখিত জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে জাতিসমূহের মধ্যে পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নসহ নারী-পুরুষের সম অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। জাতি, গোত্র, ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক মতবাদ নির্বিশেষে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করারও তাগিদ রয়েছে এই সনদে। সত্যি বলতে কি, সকল মৌলিক অধিকার মানবাধিকারভুক্ত হলেও একটি দেশের জন্য সকল মানবাধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে অধিষ্ঠিত হয় না। অবশ্য জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এই প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের এক বা একাধিক অধিকার সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য আইনী অধিকারের মর্যাদা পায়।
বাংলাদেশে নানাভাবে নানা ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। বিনা বিচারে সাজা ভোগ করছে অসংখ্য মানুষ। নিরপরাধ মানুষেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারি সংস্থার লোকদের হাতে নিরীহ মানুষেরা যেমন নির্যাতিত হচ্ছে নিপীড়িত হচ্ছে, তেমনি সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ কিংবা রাজনৈতিক ‘দুর্বৃত্তদের’ হাতেও নিরীহ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে; প্রাণ হারাচ্ছে। এর কোনো বিচারও তারা পাচ্ছে না। আশ্রয়হীন অসংখ্য মানুষ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষাসহ জীবন ধারণের অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত । অথচ এগুলো হচ্ছে মানবাধিকারের প্রধান অনুসঙ্গ। আজকের এই বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের অধিকার বঞ্চিতদের মানবাধিকার নিশ্চিত হোক; পাশাপাশি নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে সচেতন হোক সবাই।