আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:০৫:০২ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালিত হচ্ছে আজ সারাদেশে। প্রকৃতির অপরূপ দান পাহাড় পর্বত সুরক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে দিবসটি পালিত হচ্ছে। নানা কারণে পরিবেশের ভারসাম্য ধ্বংস হচ্ছে সারা বিশ্বে। মানুষের অসচেতনতা, জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া বনজসম্পদ ধ্বংস করা, পাহাড়-পর্বত ধ্বংস করা, জলাভূমি-নদনদী ধ্বংস করার কারণেও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। এখানে অবাধে কাটা হচ্ছে টিলা-পাহাড়। এ ব্যাপারে প্রচলিত আইনেরও প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশে মোট ভূমির এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আট ভাগ পাহাড়ি অঞ্চল অবস্থিত। বাকি দশ ভাগ অবস্থিত দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। অর্থাৎ সিলেট অঞ্চলে বেশ কিছু পাহাড় টিলা রয়েছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলানিকেতন এই টিলা পাহাড় দেশি বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অথচ এই টিলা পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে। মানুষের আগ্রাসী থাবায় শত শত বছরের ঐতিহ্য আজ বিলীন হওয়ার পথে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঐতিহ্য বিনষ্ট হওয়া সভ্যতা ধ্বংসের নামান্তর। সিলেট অঞ্চলের ১১ ভাগ ভূমি পাহাড়ি এবং ১৭ দশমিক আট ভাগ উঁচু ভূমি রয়েছে। এই অঞ্চলের ৬৬ হাজার হেক্টর বনাঞ্চলের মধ্যে ২৩ ভাগই এই পাহাড় ও টিলার ওপর অবস্থিত। জানা গেছে, গত দুই দশকে সিলেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ টিলা-পাহাড় ধ্বংস হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। আর পাহাড়-টিলা কেটে তৈরি করা হচ্ছে আবাসন, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য স্থাপনা। সিলেট শহরের আশপাশ এলাকায় পাহাড়-টিলা কেটে গড়ে উঠছে আবাসিক প্রকল্প। পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে দুর্বৃত্তরা। রাতের অন্ধকারে তো অবশ্যই, দিনের বেলায়ও তারা পাহাড় কাটছে অবাধে। ট্রাক বোঝাই করে মাটি পাচার হচ্ছে বিভিন্নস্থানে। এই পাহাড় কাটার ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, ভূমি ধসের ঘটনাও ঘটছে। সবচেয়ে বড় কথা, পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ধংস হচ্ছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাছাড়া, পাহাড় পর্বত ধ্বংসের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে, পরিবেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাহাড়-টিলা কাটা আইনত নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। অথচ এই আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। বন্ধ করতে হবে পাহাড়, টিলা ও উঁচু ভূমি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া। এই সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ সবচেয়ে জরুরি। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাহাড় কাটার অনুমতি দিচ্ছে সরকার। এটা বন্ধ করতে হবে। পাহাড়-পর্বত মহান সৃষ্টিকর্তার তৈরি। মানুষের পক্ষে তা তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই যা তৈরি করা যায় না, তা ধ্বংস করার সাধ্যও কারও নেই। ভূমির ভারসাম্য রক্ষায় খুঁটি হিসেবে বিবেচিত পাহাড়-টিলা থাকুক অটুট, আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।