মহীয়সীর মহানুভবতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন
ফজলে এলাহী মামুন
মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ এপ্রিল সিলেট শহরের ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম আম্বরখানার রায়হোসেন মহল্লার পাক্কাবাড়ি নামে পরিচিত ‘মাহফিজ হাউজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল ইরফান আলী চৌধুরী এবং মাতা নাঈমা বানু চৌধুরী। দুই ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন পঞ্চম। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে অধ্যয়নকালে সিলেটের বিখ্যাত সমাজসেবক ও দানবীর ড. রাগীব আলী মহোদয়ের সঙ্গে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
পরবর্তীতে এই দম্পতি ‘রাগীব-রাবেয়া’ নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন, লিডিং ইউনিভার্সিটি, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ, রাগীব-রাবেয়া বাংলাদেশ স্পোর্টস একাডেমি, শাহজালাল রাগীব-রাবেয়া প্রতিবন্ধী ইনস্টিটিউটসহ অনেক স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে। যার সুফল আজ দেশের আপামর জনসাধারণ ভোগ করছে।
পবিত্র কোরানের সুরা আল ইমরানের ১৮৫নং আয়াতে বলা আছেÑ“কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মাওত।” এখানে ‘নাফসিন’ শব্দের অর্থ হলো, প্রাণ, রক্ত, ব্যক্তিত্ব, মানুষ, মন। আর মাওত শব্দের অর্থ হলোÑমৃত্যু, মরা, শ্বাসরোধ ও ধ্বংস। এখন প্রশ্ন হলো, কোরানের ওই আয়াতে আল্লাহ নফ্স শব্দটি দ্বারা আল্লাহপাক কোন অর্থকে বোঝাতে চেয়েছেন? এখন যদি বলি মন বা মনের অভ্যন্তরে মানুষের সু-প্রবৃত্তিগুলোকে জাগ্রত করে, কু-প্রবৃত্তিগুলোকে ধ্বংস বা তাদের মৃত্যু ঘটিয়ে মানুষ কলুষমুক্ত হয়ে পবিত্র হয়ে উঠবে। তাহলে ভাবনাটা অবান্তর বলে মনে হয় না। কারণ সুরা রোমের ১১নং আয়াতে আল্লাহ বলছেনÑ“আল্লাহই প্রথমবার জন্মদান করেছেন, পরে দ্বিতীয়বারও তিনি জন্মদান করাবেন, অতঃপর তাঁর নিকট ফিরে যেতে হবে।”
সু-প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে কু-প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করে কলুষমুক্ত হয়ে পবিত্র হওয়া। অর্থাৎ পবিত্র হলেই সে আল্লাহর নিকটস্থ হতে পারবে। আল্লাহপাক মানুষকে অতি উত্তম আকৃতিতে তৈরি করেছেন। মানুষকে দিয়েছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের মর্যাদা। আর আল্লাহপাকের ঘোষণামতো মানবের প্রকৃত মুক্তির জন্য মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ অনিবার্য। মৃত্যুর মাধ্যমে মানবজীবন পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই মৃত্যুকে নেতিবাচক দিক থেকে না-দেখে ইতিবাচক হিসেবেই ভাবা উচিত।
লিডিং ইউনিভার্সিটির মাননীয় কো-ফাউন্ডার মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর তারিখে মহান স্রষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার কাছে ফিরে গেছেন। ফিরে যাওয়াই জগতের নিয়ম। যে-যায় সে কখনো আর ফিরে আসে না। তবে পৃথিবীতে থেকে যায় তার যাপিত জীবনের সকল কর্ম। সেই কর্ম যদি হয় মহৎ ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিত, তাহলে তা সাদ্কায়ে জারিয়া হিসেবে পরিগণিত হয়।
মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রেখে যাওয়া প্রায় সকল কর্মই মহৎ এবং মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। দুনিয়ার জীবনে তাঁর প্রতিটাক্ষণ তিনি মানবকল্যাণে ব্যয় করে গেছেন। কোনোদিনই কোনো ব্যক্তি তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছে এমন নজির নেই। মহান আল্লাহপাকের কাছে আমরা তাঁর সৎকর্মের উত্তম প্রতিদান প্রার্থনা করি। আল্লাহপাক তাঁকে বেহেশ্ত নসিব করুন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিস বিভাগ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট।