কিংবদন্তী রাবেয়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৫৮:৪২ অপরাহ্ন
প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী
যুগে যুগে পৃথিবীতে অনেক মহৎপ্রাণ ও মহীয়সী মানুষের আগমন ঘটেছে। তারা আমরণ মানবকল্যাণে কাজ করে গেছেন। সমাজের জন্য, দেশের জন্য তারা প্রাণান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। মানবতার কল্যাণে এ সকল মহৎ মানুষের অবদান কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কারণ কাল থেকে কালান্তরে তারা তাদের মহান কর্মের মাধ্যমে মানবমনে স্থান করে নেন।
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ Ñএই মহান ব্রতকে পুঁজি করে তারা মানবতার জন্য অবদান রেখে গেছেন। তাদের এই অবদান দেশ ও জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে ধারণ করে ও স্মরণ করে। আমাদের সমাজে তেমনি একজন মহৎপ্রাণ মানুষ আছেন। তিনি হলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী, শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক, বিশিষ্ট চা-শিল্প উদ্যোক্তা, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দানবীর ড. রাগীব আলী। তাঁরই সহধর্মিণী ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। জীবদ্দশায় এই দম্পতি মানবতার কল্যাণে যে সকল অবদান রেখেছেন তার তুলনা বিরল। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর তারিখে মহান আল্লাহপাকের ডাকে সাড়া দিয়ে মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী পরপারে পাড়ি জমান। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী জীবদ্দশায় মানবকল্যাণমূলক অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এ সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি, প্রথম বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাগীবনগরে অবস্থিত রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ, লামাকাজিতে অবস্থিত রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ, হবিগঞ্জের পানিউমদায় অবস্থিত রাগীব-রাবেয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সকল প্রতিষ্ঠান মানবতার কল্যাণে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্মৃতি হয়ে বিরাজ করছেন মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী।
পৃথিবীতে মানুষ আসবে, মানুষ ফিরে যাবেÑএটাই বিধির বিধান। তবে এই আসা-যাওয়ার মাঝেও কিছু কিছু মানুষ পরকল্যাণে অনেক মহৎ কাজ করে যান। পরবর্তীতে তাঁর কর্মের মাধ্যমেই তিনি চিরকাল অমর হয়ে থাকেন। মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীও তাঁর মহৎ কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে চিরজাগরূক হয়ে আছেন। আমি মনে করি ‘রাগীব-রাবেয়া’ দম্পতির মহতী অবদানের ক্ষয় নেই। বিনাশ নেই। এই সকল প্রতিষ্ঠান যুগ থেকে যুগান্তরে মানবকল্যাণে সেবার দ্বার অবারিত রাখবে। মানুষই মানুষের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখবে। সেই সঙ্গে ‘রাগীব-রাবেয়া’ দম্পতির স্মৃতিও অম্লান হয়ে থাকবে অনন্তকাল।
মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন লিডিং ইউনিভার্সিটির কো-ফাউন্ডার। আমি লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য থাকাকালে প্রতিবছরই যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে তাঁর স্মরণসভা ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনে সদা তৎপর ছিলাম। এখনো প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর এলে নিতান্তই প্রাণের টানে আমি রাগীবনগর ছুটে আসি। মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। পরিশেষে, মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জন্য মহান আল্লাহপাকের দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর রেখে যাওয়া সকল ভালো কাজের উত্তম প্রতিদান দান করেন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। আমিন।
লেখক : প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাক্তন উপাচার্য, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট।