ইউএস-বাংলা সাহিত্য সম্মেলন ও কবি-লেখক সম্মাননা
সাহিত্য আবেগ, অনুভূতি ও মূল্যবোধকে জীবনের সঙ্গী করে নেয়ার প্রেরণা জোগায় — দানবীর ড. রাগীব আলী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৪১:৫৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সিলেট অঞ্চলে শিক্ষা বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টা, রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পদকের প্রবর্তক উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেছেন, সাহিত্য মুক্তির কথা, স্বাধীনতার কথা, মানুষের কথা বলে। সাহিত্য ব্যক্তিকে মার্জিত করে তোলে এবং আবেগ, অনুভূতি ও মূল্যবোধকে জীবনের সঙ্গী করে নেয়ার প্রেরণা জোগায়। সুন্দর মনের সুন্দর মানুষ ছাড়া সাহিত্যচর্চা কোনোদিনই সফল হতে পারে না। এর জন্য যুগে যুগে সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সাহিত্যচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
গতকাল সোমবার তিনি ইউএস-বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ও কবি, লেখক, গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
সিলেট নগরীর দরগাহ গেইটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি ও প্রথম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, মনকে সুন্দর ও সজীব করে তুলে সাহিত্য। কারণ সাহিত্য মানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, জীবনে জীবন যোগ করা। সাহিত্য সত্য, সুন্দর, আনন্দময় অনুভূতিতে পাঠক হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে। সাহিত্য পড়ে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিও পেতে পারে মহৎ জীবনের আভাস। পাষাণবৎ মানুষও নতুন করে খুঁজে পায় মনুষ্যত্ব। এরজন্য সাহিত্য পাঠের চেয়ে মহৎ আনন্দ আর নেই।
কবি ও সংগঠক শাহ্ মো. সফিনূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট কবি ও সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নিজামী। আলোচক ছিলেন- ভারত থেকে আগত কবি ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দিন এবং কবি ও সুরকার নজরুল ইসলাম বাঙালি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. মোঃ আবু তাহের।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। কবি ও সংগঠক শাহ্ মো. সফিনূরের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় পর্বে আলোচক ছিলেন- কবি ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কালাম আজাদ এবং কবি ও গবেষক প্রাকৃতজ শামিম রুমি টিটন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন-আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর সম্পাদক আব্দুল হাই, দৈনিক সিলেটের ডাক এর নির্বাহী সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট গবেষক আবদুল হামিদ মানিকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কবি-সাহিত্যিকরা। সঞ্চালনা করেন শোয়াইব আহমেদ, জাহানারা রেখা, মোশাররফ হোসেন মুছা, লুৎফুর রহমান তারেক। অনুষ্ঠানে স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং ইউএস-বাংলা আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ও লেখক, গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে ভারত ও বাংলাদেশের লেখক, কবি ও গুণীজনদের তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে আমরা লাভ করি জগৎ ও জীবনের উপলব্ধি। সেই সঙ্গে আমরা উপলব্ধি করি নিজেকে। আমাদের অন্তরের ‘আমি’ কে তা জানার প্রশ্ন আসে মন থেকে। সাহিত্যপাঠের মতো নির্মল ও পবিত্র আনন্দ আর নেই। একনিষ্ঠ পাঠকের পক্ষেই কেবল এ আনন্দ লাভ করা সম্ভব। এর জন্য কবি-সাহিত্যিকদের যথাযথ সম্মান জানাতে হবে।
সিলেটের বিশিষ্ট গবেষক আবদুল হামিদ মানিক বলেন, সিলেট অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক দানবীর ড. রাগীব আলী। যিনি রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পদক প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনন্য অবদান রাখছেন। তাঁর প্রবর্তিত সাহিত্য পদক এ পর্যন্ত ৪৩ জন কবি-সাহিত্যিক পেয়েছেন। যারা পরবর্তীতে বাংলা একাডেমিসহ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আবদুল হামিদ মানিক ইউএস-বাংলার সাহিত্য সম্মেলনকে সিলেটে সাহিত্যিকদের এক অপূর্ব মিলনমেলা বলে মন্তব্য করেন।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, যে সাহিত্য মানুষের চরিত্রের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব রাখতে পারে না, সেটা সাহিত্য নয়, সাহিত্য হচ্ছে সেটি যেটি মানুষের জীবন সংগ্রামে গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, যে সাহিত্য জীবনের জন্য, আমাদের সেই সাহিত্যচর্চা করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে কলম চালাতে হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে শাহ্ মো. সফিনূর বলেন, প্রবাসে থাকলেও আমার সাহিত্য-সাধনা অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে সাহিত্য সম্মেলন করে ভালোই লেগেছে। তিনি দেশ-বিদেশের আগত কবিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।